পাকিস্তানের মেয়ে মালালা ইউসুফজাইকে এখন বিশ্বের তাবৎ মানুষ চেনে। শিক্ষার আলোকবর্তিকা হাতে তালেবানদের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে।
কিন্তু কেবল মালালাই কি একা এমন বন্ধুর পথে বন্ধুহীন পথ চলছে? আরও আছে অনেকেই। ওরা একেকজন বিশ্বের একেক প্রান্তে এমনি সংগ্রাম করে যাচ্ছে। লড়াই করে যাচ্ছে মানুষের জন্য, মানবতার জন্য।
এমনি তিন জন-- ঝান হাইতে, রাশিয়া খেপরা এবং কেলভিন ডো। ঝান হাইতের সংগ্রাম চলছে চীনে। রাশিয়া খেপরার লড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আর কেলভিন ডোর কাজ-কারবার তার দেশ সিয়েরা লিওনে।
ঝান হাইতে
চীনের প্রায় সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই উঠে এসেছেন সমাজের উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে; কেউ ব্যক্তিজীবনে ছিলেন উকিল, কেউ শিল্পী অথবা এমনি কিছু। ঝান হাইতে অবশ্য এমন কিছুই ছিল না; তার বাবা-মা নিতান্তই শ্রমিক শ্রেণির মানুষ।
ঝান প্রাইমারি পড়াশোনা শেষ করে সাংহাইয়ের ছোট্ট একটি গ্রামের স্কুলে। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে শহরে আসতে চাইলেই বাঁধে গোল। তখন চীনের শহরতলিতে অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে মানা হচ্ছিল আবাসিক নিবন্ধন আইন, যে আইন প্রয়োগ করে চীনের শাসকেরা আটকে রাখছিল চীনের গ্রামগুলোর শত-শত শ্রমিককে। তুমি যেখানে তোমার আবাস, মানে বাসার নিবন্ধন করিয়েছ, তোমাকে সেখানেই থাকতে হবে। মানুষ একরকম নিরুপায় হয়েই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল এই আইন।
কিন্তু ঝান মানেনি। সে সব ভয়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। চীনের এক নম্বর আলোচ্য বিষয় হিসেবে নিয়ে এসেছে বিষয়টি। এই একরত্তি মেয়ের সাহসিকতার সামনে চীনা সরকার পর্যন্ত টলে গেছে!
তারপর? শহরে এসে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় ঝান। সফলতার সঙ্গে পাসও করে সে।
রাশিয়া খেপরা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি শহর-- শিকাগো। যেখানে ২০১২ সালে গোলাগুলিতে মারা যায় পাঁচশ’ মানুষ। সেখানকার বাসিন্দা রাশিয়া খেপরা। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এর আগেও মৃত্যু দেখেছে সে। ক্রমবর্ধমান হারে প্রতিবছরই শিকাগোর মৃত্যুর হার বাড়ছিল। হয়তো এভাবেই অন্যের মৃতদেহ দেখতে দেখতে নিজেও একদিন লাশে পরিণত হত খেপরা।
কিন্তু ওর টনক নড়ে ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনায়। ২০১২ সালে মারা পড়া ওই পাঁচশ’ জনের মধ্যে তার সেই বন্ধুও ছিল। বন্ধুর মৃত্যুতে প্রথমে ভীষণ মুষড়ে পড়ে ও। পরে সেই শোককেই শক্তিতে রূপান্তরিত করে খেপরা।
নেমে পড়ে কাজে। শুরু করে ক্যাম্পেইন-- ‘অরেঞ্জ ট্রি’। সচেতনতার বাণী পৌঁছে দিতে শুরু করে শিকাগোর সকলের কাছে।
ইতিমধ্যেই ওর লক্ষ্যের অনেকটাই পূরণ হয়েছে। কমে এসেছে শিকাগোতে মৃত্যুর হারও।
কেলভিন ডো
ছোটবেলা থেকেই কেবল মায়ের কাছে কাছে থাকত ছেলেটি। নাম কেলভিন ডো। আর ভালোবাসত নষ্ট যন্ত্রপাতি ঘাটতে, সেগুলো সারিয়ে তুলতে। প্রায়ই ডাস্টবিনের কাছে পাওয়া যেত সিয়েরা লিওনের এই ছোট্ট ছেলেটাকে। বসে বসে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ভেঙে-যাওয়া টুকরো বাছত।
এমনি করে যন্ত্রের নানা রহস্য নিজে থেকেই শিখতে থাকল ছেলেটি। আর একদিন এই একরত্তি ছেলেটিই একা একা বানিয়ে ফেলল এক রকমের সাশ্রয়ী ব্যাটারি। তখন তার বয়স মোটে ১৩ বছর!
শুধু ওই সাশ্রয়ী ব্যাটারি বানিয়েই বসে থাকল না ডো। প্রচণ্ড লোডশেডিংয়ের দেশে বসে নিজে নিজেই পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ দিয়ে বানিয়ে ফেলল আস্ত একটা জেনারেটর। তারপর সেই জেনারেটরের সাহায্যে বানাল আস্ত একটা রেডিও স্টেশন! সেখানে কাজ করে তারই বন্ধুরা।
এখন অবশ্য কেলভিন ডো আর সিয়েরা লিওনে থাকে না। কারণ ও এখন বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট আব টেকনোলজির (এমআইটি) সবচাইতে কমবয়সী প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে কাজ করছে।