ভরণ-পোষণ না দেয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের একটি আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বাবা। মঙ্গলবার দুপুরে বিচারিক হাকিম আদালতে ইয়াসিন রানার (৩০) বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তার বাবা লিয়াকত আলী (৬০)।
তাদের বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলার সুহিলপুর গ্রামে। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারি আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। মামলার এহাজারে বলা হয়, ছেলে ইয়াসিন রানা দীর্ঘদিন দুবাইয়ে চাকরি করলেও গত তিন বছর ধরে বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ না দিয়ে তার উপার্জিত সব অর্থ শ্বশুরবাড়িতে পাঠাচ্ছেন। অন্য আসামিরা হলেন রানার স্ত্রী রাশিদা আক্তার রিতা (২৮), শ্বশুর শেখ মো. বাদল ওরফে বাবুল (৫০), শাশুড়ি লুৎফা বেগম (৪৫) ও শ্যালক মো. সোহেল (৩০)।
সন্তান পিতা-মাতার ভরণ পোষণ না দিলে ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে পিতামাতার ভরণ-পোষণ বিল সংসদে পাস হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর,২০১৩। ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিল-২০১৩’ এ পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান তার পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ না করলে তা হবে জামিন অযোগ্য অপরাধ, তবে আপোসযোগ্য। ভরণ-পোষণ ও এর খরচ না পেলে বাবা-মা আদালতের আশ্রয়ও নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সন্তান সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা বা অর্থ দণ্ডসহ অনাদায়ে অনুর্দ্ধ ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিলে আরও বলা হয়, কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ প্রদান না করতে প্ররোচনা দিলে উক্ত স্ত্রী বা স্বামীও কিংবা অন্য সহায়তাকারী উপরিউক্ত অপরাধে অভিযুক্ত হবেন। বিলের বিধান অনুযায়ী সন্তানের আয়ের যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ পিতামাতাকে দিতে হবে। বিলে বলা হয়েছে, ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধনিবাস, বা অন্য কোথাও বা আলাদা ভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবেন না। প্রত্যেক সন্তান তার পিতামাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। তারা পৃথকভাবে বসবাস করলে সন্তানদের নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে হবে। শুধু পিতা বা মাতার ভরণ-পোষণই নয়, পিতা বা মাতার মৃত্যুর পরও যদি দাদা-দাদী বা নানা-নানী বেঁচে থাকেন তবে তাদেরও ভরণ-পোষণ দেওয়া নাতী-নাতনীর আইনি দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিলে। বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে অসহায় অবস্থা থেকে বাঁচাতে মূলত আইনটি তৈরি করা হয়েছে। আর্থিকভাবে সক্ষম কিন্তু বাবা-মাকে ভরণ-পোষণ দিতে অনাগ্রহী সন্তানদের জন্য এ আইন অসহায় পিতামাতার রক্ষা কবচ। খসড়া আইনে বলা আছে, প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে। কোনো পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে সেক্ষেত্রে সন্তানরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বাবা-মার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। খসড়া আইনে অপরাধের আমল-যোগ্যতা, বিচার ও জামিন-সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়, ‘এ ধরনের অপরাধ প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য হবে। তবে কোনো আদালত এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ছাড়া আমলে নেবে না। অভিযোগকারী পিতা বা মাতাকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোনো আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেবে না।
Source: BDnews24