টাইফয়েড মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। স্যালমোনেলা জীবাণুর মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে থাকে। সারাবিশ্বে বছরে টাইফয়েডে প্রায় ৩ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ মারা যায়। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। পরিতাপের বিষয় শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রতি ১,০০০ শিশুর মধ্যে বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০ জন শিশু যা কিনা অন্যান্য বয়সীদের তুলনায় ৯ গুণ বেশি। ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি এবং এর ৮৫% শিশুই আক্রান্ত হয় ২-৪ বছরের মাঝে।
প্রাথমিক লক্ষণঃ
১. ১০৩-১০৪ ফারেনহাইট (৩৯.৪ অথবা ৪০ সে.) জ্বর
২. মাথা ব্যথা
৩. দুর্বল এবং অবসাদবোধ করা
৪. গলা ব্যথা
৫. পেট ব্যথা
৬. ডায়রিয়া অথব কোষ্ঠকাঠিন্য
৭. চামড়ায় লালচে দানা বা র্যাশ
এছাড়া ক্রমে অন্যান্য যে লক্ষণ গুলো সাধারণত দেখা দেয় সেগুলো হলো:
৮. তীব্র জ্বর
৯. মারাত্মক ডায়রিয়া (হলুদ ও পাতলা ডালের মত) অথবা তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য
১০. শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া
১১. পেট ফোলা/ফাঁপা
১২. রোগের মারাত্মক অবস্থায় রুগী বিকারগ্রস্থ হয় ও প্রলাপ (Delirious) বকে
চিকিৎসালয়ঃ
১. উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র
২. উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
৩. জেলা সদর হাসপাতাল
৪. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
৫. বেসরকারী হাসপাতাল
৬. এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র
পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ
টাইফয়েড নির্ণয়ের পরীক্ষাগুলো অনেক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ এবং সব জায়গায় সহজলভ্যও নয়।
১. রোগের ইতিহাস জানা
২. রক্ত পরীক্ষা
৩. প্রস্রাব-পায়খানা ও অস্থিমজ্জা (Bone Marrow) পরীক্ষা
চিকিৎসাঃ
সময়মত টাইফয়েড ধরা না পড়লে এবং চিকিত্ৎসা শুরু না হলে রোগীর নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। অবহেলা করলে এই রোগে শরীরের কোন একটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্থায়ীভাবে অকার্যকরও হয়ে যেতে পারে। এমনকি পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ ও ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে টাইফয়েড চিকিৎসায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ ওষুধই টাইফয়েডে ভালো কাজ করে না। ন্যালিডিক্সিক এসিড, ক্লোরামফেনিকল, সিপ্রোফ্লক্সাসিনসহ বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে টাইফয়েড ওষুধপ্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ফলে টাইফয়েডের চিকিত্সা ব্যয় প্রায় ১০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। আগে টাইফয়েড চিকিত্সায় ব্যয় হতো ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর এখন খরচ হচ্ছে প্রায় ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।
১. এ্যান্টিবায়োটিক সেবন
২. পানিশূন্যতা দেখা দিলে শিরার মাধ্যমে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে
৩. উচ্চ ক্যালোরি সম্পন্ন সুষম খাবার গ্রহণ
পথ্যঃ
১. পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে
২. স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খেতে হবে
প্রতিরোধঃ
১. ভালোভাবে হাত ধোয়া
২. নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান
৩. স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার
৪. খাবার তৈরি এবং খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং পায়খানা ব্যবহারের পর সাবান/ছাই দিয়ে হাত ধোয়া
৫. কাঁচা বা অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
৬. খাবার গরম করে খাওয়া
৭. ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা
৮. টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যের জন্য খাবার তৈরি থেকে বিরত থাকা
৯. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদি আলাদা করে রাখা
সূত্রঃ:দেহ:: জীবনের ঠিকানা।