প্রিয়জনকে ফুল দিতে আমরা সবাই পছন্দ করি, সেই ফুল পেতেও পছন্দ করি। বাড়ির বাগানে, টবে অথবা ফুলদানীতে একগুচ্ছ ফুল রাখলে আমাদের মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ভাবুন তো, সেই ফুল যদি হয় তিন ফুট ব্যাসের বিশাল আকৃতির? প্রেমিকের হাতে ২৪ পাউন্ড ওজনের এই বিশাল ফুল দেখলে প্রেমিকা ভয়ে দৌড়ে পালাবে যে!
শুধু তাই নয়, এই ফুলের রয়েছে বিকট গন্ধ যার ভয়ে কোনও মানুষই ত্রিসীমানায় ঘেঁষবে না, ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখা তো দূরের কথা। কি এই ফুল? এর নাম হলো র্যাফ্লেসিয়া আর্নল্ডি (Rafflesia Arnoldii)। পৃথিবীর সবচাইতে বড় এবং দুর্গন্ধযুক্ত ফুল!
র্যাফ্লেসিয়া আর্নল্ডির আরেক নাম হলো কর্পস ফ্লাওয়ার। এই ফুল থেকে মৃতদেহ-পচা গন্ধ আসে বলে এই নাম। এই ফুলের রয়েছে পাঁচটি পাপড়ি, যাতে লালের ওপর সাদা ফুট ফুট দাগ। ফোটা ফুল সাত দিন পর্যন্ত গাছে থাকে। এই পুরো সময়টা সে পচা গন্ধ ছড়িয়ে যায়। এই গন্ধ ছড়ানোর পেছনে কিন্তু অনেক ভালো একটি যুক্তি আছে। কি সেই যুক্তি? আচ্ছা অন্যান্য ফুল থেকে যে সুন্দর সুবাস আসে তার পেছনের যুক্তিটা কি, সেটা কখনও ভেবে দেখেছেন?
আমাদের পরিচিত গোলাপ, বেলি, বকুল, গন্ধরাজ ইত্যাদি ফুল থেকে যে মিষ্টি একটি সুবাস আসে তাতে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় ফুলের মধু খেতে আসে। আর এদের শরীরে পরাগরেণু লেগে যায়। বিভিন্ন ফুলে যখন এসব পোকামাকড় যাওয়া আসা করে তখন পরাগায়ন হয়। র্যাফ্লেসিয়ার পচা দুর্গন্ধের পেছনেও কারণ কিন্তু এটাই, পরাগায়ন। মাংস-পচা গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ক্যারিয়ন ফ্লাই নামের এক ধরণের পোকা আসে। পচা মাংস খাওয়ার লোভে এই ফুলের কাছে জড়ো হয় এসব পোকা এবং র্যাফ্লেসিয়া পরাগায়ন করে দেয়। প্রথমে পুরুষ ফুলের কাছ থেকে পরাগ নিয়ে এসে পরবর্তীতে নারী ফুলের কাছে এই পরাগ সরবরাহ করে এই পোকাগুলো।
প্রায় ত্রিশ ধরণের র্যাফ্লেসিয়া আছে যার মধ্যে একটি হলো “স্টিঙ্কি” র্যাফ্লেসিয়া আর্নল্ডি। এসব র্যাফ্লেসিয়া আসলে এক ধরণের পরগাছা। শুধুমাত্র রেইনফরেস্টে জন্মায় এমন এক উদ্ভিদ টেট্রা স্টিগমা ভাইনের ওপর এদের জীবন নির্ভর করে।
র্যাফ্লেসিয়া এই উদ্ভিদের থেকে পানি এবং পুষ্টি উপাদান শোষণ করে খায়। র্যাফ্লেসিয়া নিজস্ব কোনও পাতা নেই, শেকড় নেই আর নেই কোনও ক্লোরোফিল। এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না এবং মাটি থেকে পুষ্টিও শোষণ করতে পারে না। তাই অন্যের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকাই এদের একমাত্র উপায়।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রেইনফরেস্টে দেখা যায় এই ফুল। যেমন জাভা, বোর্নিও, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু এসব এলেয়াকায় বেড়াতে আসা পর্যটকেরা অনেক সময়েই এসব ফুল ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকেন। শুধু তাই নয়, ফুলটি নিয়ে প্রচলিত আছে নানান ভৌতিক উপকথা। ফলে অনেকেই নষ্ট করে দেন এদের। বেশ দুর্লভ এই ফুল এ কারণে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে।(priyo.com)