মহাকাশ বিজ্ঞানীদের টেলিস্কোপে সম্প্রতি এমন একটি মহাজাগতিক বিস্ফোরণের চিত্র ধরা পড়েছে, যাকে বলা হচ্ছে এ যাবৎকালের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম আলোকের বিচ্ছূরণ।
সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে , মহাকাশে স্থাপন করা নাসার 'সুইফট এন্ড ফার্মি' নামের এক টেলিস্কোপে এ বছরের প্রথম দিকে এই বিস্ফোরণ ধরা পড়ে।
এতে প্রায় নি:শেষ হয়ে যাওয়া একটি তারা পুরোপুরি নিভে গেছে, এবং তার ফলে তৈরি হয়েছে একটি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণবিবর – আর সেই সময় মহাকাশ জুড়ে বিচ্ছুরিত হয়েছে গামা রশ্মির চোখ-ধাঁধানো আলোকচ্ছটা।
ঠিক কতটা উজ্জ্বল ছিল এই বিস্ফোরণ? যুক্তরাজ্যের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রফেসর পল ও’ব্রায়েন – যিনি এই সুইফট টিমেরও সদস্য - বলছেন, "এই বিস্ফোরণটা কতটা শক্তিশালী ছিল – একটা সংখ্যা দিয়ে তার হিসেব দেয়াটা সত্যি খুব কঠিন। পৃথিবীতে এনার্জির ইউনিটকে আমরা বলি 'জুল'। সেই হিসেবে ধরুন ১০ এর পেছনে ৪৭টা শূন্য বসালে সংখ্যাটা যা হয় – তত জুল ছিল এর শক্তি। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, ১০ লাখ গ্যালাক্সির সবগুলো তারা মিলে যে শক্তি – এই একটি বিস্ফোরণের শক্তিই ছিল তার প্রায় সমান।'
আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগবে, মহাবিশ্বের কোথায়, কত দূরে ঘটেছে এই বিস্ফোরণ?
অনেকেই জানেন মহাজাগতিক দূরত্বে হিসেব করা হয় আলোকবর্ষের হিসেবে। আলোর গতিতে অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে চললে এক বছরে আপনি যতদূর যাবেন – তাকে বলে এক আলোকবর্ষ বা লাইট ইয়ার। আর এই যে বিস্ফোরণটির কথা বলছি – তা ঘটেছে পৃথিবী থেকে ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে – অর্থাৎ ওই বিস্ফোরণের আলেঅ পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৪০০ কোটি বছর !
অধ্যাপক পল ও’ব্রায়েন আরো বলছেন, এরকম শক্তিশালী বস্তু আরো আছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। কিন্তু সাধারণত পৃথিবী থেকে আরো বহু বহু দূরে। আর এই ঘটনাটি ঘটেছে অপেক্ষাকৃত কাছে। সে কারণেই পৃথিবী থেকে আমরা ওই বিস্ফোরণের আলো অন্য কোনকিছুর চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে দেখতে পেয়েছি। ফলে এটিই মানুষের দেখা উজ্জ্বলতম বস্তু।
যাহোক, ঘটনাটি পৃথিবী থেকে অনেক দূরে ঘটার ফলে এ থেকে বিচ্ছুরিত শক্তিও মহাকাশে নিরাপদে শোষিত হয়ে গেছে। এরকম কিছু যদি পৃথিবীর আরো কাছঅকাছি ঘটতো, তাহলে পৃথিবীর প্রাণীজগতের জন্য তার ফল হতো - এক কথায় ভয়াবহ ।