এনসেফালাইটিস লিথারজিকা হচ্ছে এনফেফালাইটিস রোগের একটি রহস্যময় ধরণ। ১৯১৭ সালে স্নায়ুবিজ্ঞানী কনস্টানটাইন ফন ইকনোমো প্রথম এই রোগের কথা বর্ণনা করেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রোগী বাক ও চলনশক্তি হারিয়ে জীবন্ত মূর্তিতে পরিণত হয়। ১৯১৫ থেকে ১৯২৬ সালের মাঝে এনসেফালাইটিস লিথারজিকা মহামারী আকারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মহামারী আকারে আর এর আবির্ভাব না ঘটলেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই শোনা গিয়েছে।
এ রোগের লক্ষণগুলোর মাঝে আছে জ্বর, গলা ও মাথা ব্যথা, জড়তা, একটি জিনিসকে দুটি করে দেখা, যে কোন ক্ষেত্রে দৈহিক ও মানসিকভাবে দেরিতে সাড়া দেয়া, ঘুমের সময় উল্টো হয়ে যাওয়া অর্থাৎ রাতে জেগে থাকা ও দিনে ঘুমানো। রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগী কোমাতে চলে যেতে পারে। এছাড়া রোগীর চোখের সঞ্চালন হয়ে যেতে পারে অস্বাভাবিক ধরণের, পারকিনসন’স ডিজিজ হতে পারে, শরীরের উপরের অংশ দুর্বলতা, মাংস পেশীতে ব্যথা, কাঁপুনি, ঘাড় নাড়াতে অক্ষমতা ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয়।
ভয়াবহ এই রোগের কারণ কি সেটি নিয়ে এখনো কোন উপযুক্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। ২০০৪ সালের এক গবেষণাতে দেখা যায়, যেসব রোগী এনসেফালাইটিস লিথারজিকাতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের গ্রুপ-এ Streptococcus ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ফ্যারিঞ্জাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গবেষকদের ধারণা, এনসেফালাইটিস লিথারজিকা, Sydenham's chorea ও PANDAS (pediatric autoimmune neuropsychiatric disorders associated with streptococcal infections)- এ চারটি রোগই মানুষের দেহে Streptococcus ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের পরই সৃষ্টি হয়। এনসেফালাইটিস লিথারজিকার কারণ হিসেবে কেউ কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জাকেও দায়ী করেছেন।
যেহেতু রোগের কারণ এখনো রহস্যঘেরা, তাই এর প্রতিষেধকও এখন পর্যন্ত নেই। রোগের প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগীর দেহ স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় রোগীদের স্টেরয়েড প্রয়োগ করা হলে কিছুটা ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ রোগীই জীবন্ত মূর্তিতে পরিণত হয়, নড়া-চড়া কিংবা কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে রোগীর মস্তিষ্ক তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। ১৯৬০ সালের দিকে Levodopa (L-DOPA) নামে একটি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তবে রোগীদের কাউকেই বাঁচানো যায় নি।
পিটার কামিংস এর উপন্যাস The Neuropathology of Zombies তে এই রোগটিরই একটি পরিবর্তিত রূপকে জম্বিদের উত্থানের কারণ হিসেবে দেখানো হয়। জম্বি হলো জাদু বা কোন গুপ্তবিদ্যা প্রয়োগ করে মৃতদেরকে জীবন্ত মানুষের মত চলাচলে সক্ষম করে তোলে। যাই হোক, এখনো এনসেফালাইটিস লিথারজিকা রোগের মূল কারণ অমীমাংসিত।