মুষ্টিযুদ্ধ কেউ দেখুক আর না দেখুক, পছন্দ করুক আর না করুক, মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে চেনে না এমন কেউ নেই। তিন তিনবার তিনি জিতে নিয়েছেন 'ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ' ট্রফি। জীবনে হেরেছেন মাত্র পাঁচবার। '৯৮ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ছিল তার সর্বশেষ পরাজয়। কারণ এরপর আর খেলেননি এই জীবন্ত কিংবদন্তি। মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করার পরই আলী হয়ে ওঠেন এমন এক তারকা যার সবকিছুই হয়ে যায় সংবাদের শিরোনাম।
আলী হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পরিচিত আমেরিকান। আর এ কারণেই তিনি লাভ করেছেন 'সিঙ্রিট অব আমেরিকা' খেতাব। বিশ্ববিখ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধার পূর্বনাম ছিল ক্যাসিয়াস মাসরাউলাস কে্ল। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে নাম পরির্বতন করে হন মোহাম্মদ আলী। ১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এই অনন্য প্রতিভাধর মুষ্টিযোদ্ধা আরো বিখ্যাত ছিলেন তার নিজস্ব স্টাইলের জন্য। অন্য মুষ্টিযোদ্ধারা মুখে আঘাত এড়াতে হাত দুটি সারাক্ষণ মুখের কাছে রাখেন। তিনি তা করতেন না। আলীর খেলোয়াড়ি জীবন ছিল বেশ ঘটনাবহুল।
নীতিগতভাবে ঘোর যুদ্ধবিরোধী হওয়ার কারণে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদানে অস্বীকৃতি জানান। ১৯৬৬ সালে আলী তার পূর্বপুরুষের উপাধি ত্যাগ করেন। কারণ ওই উপাধি তার পূর্বপুরুষের দাসত্ব বহন করে। উপাধি র্বজনের কারণে আলীকে আমেরিকায় কোনো খেলাতে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। পরর্বতীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তিনি ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন। প্রায় তিন বছর পর ফিরে এলেও তাকে মেনে নিতে হয় পরাজয়ের স্বাদ। বিপরীতে ছিলেন আরেক বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা ফ্রেজিয়ার। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গাডরাউনে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচটি শতাব্দীর সেরা ম্যাচের মর্যাদা পায়।
১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণের পর আলী জটিল পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন। র্বতমানে তিনি মিশিগানের একটি ছোট্ট খামারে বসবাস করছেন। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তিনি বছরের ২০০ দিনেরও বেশি ভ্রমণে থাকেন। শান্তিপ্রিয় এই মুষ্টিযোদ্ধার নামে একটি গোলাপের প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে, নাম 'রোজা আলী'।
আবদুল্লাহ আরিফ, ১১ ডিসেম্বর, ২০০৬। Source:
http://www.samakal.net/print_edition/archive/details.php?news=9&view=archiev&y=2006&m=12&d=11&action=main&menu_type=&option=single&news_id=43749&pub_no=420&type=