সবুজ জমিনের ওপর ভরাট লাল বৃত্ত_ এই হলো আমাদের জাতীয় পতাকা। শুধু কী এটুকুই? না, আমাদের জাতীয় পতাকার আকারে, রঙে রয়েছে ভিন্ন এক তাৎপর্য। এই পতাকা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতার জন্য আমাদের সদুীর্ঘ সংগ্রামের কথা, শহীদের আত্নহুতির কথা, দেশমাতার জন্য জীবনবাজি ধরার কথা।
পতাকার জয়যাত্রা শুরু হয় একাত্তরের মার্চে। স্বাধীন দেশের দাবিতে দেশজুড়ে তখন চলছে তীব্র আন্দোলন। আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হলে চাই একটি পতাকা। আমাদের জাতির পতাকা। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত হল ছাত্র-জনতার এক বিশাল সমাবেশ।
নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে
বক্তব্য রাখেন তাৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ, আসম আবদুর রব, আবদুল কদু্দুস মাখন, সাজাহান সিরাজ প্রমুখ। লাখো ছাত্র-জনতার এই বিশাল সমাবেশ যখন চলছিল, তখন নিউমার্কেটের দিক থেকে আসে একটি জঙ্গি মিছিল। মিছিলে একজনের হাতে ছিল একটি পতাকা। সবুজের প্রেক্ষাপটে লাল বৃত্ত আর বৃত্তের মধ্যে আমাদের দেশের মানচিত্র। পতাকাটি একজন অবাঙালি দর্জিকে দিয়ে তৈরি করা হয়। পতাকার কাপড় কেনা হয় নিউমার্কেটের 'অ্যাপোলো' নামে একটি দোকান থেকে এবং পাক-ফ্যাশন্স নামের একটি দোকানে তা সেলাই হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জনসমদু্রে একের পর এক পোড়ানো হচ্ছেল পাকিস্তানের পতাকা। এমন সময় বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকাটি দেখে জনসমদু্র থেকে দাবি উঠল একটাই_ ওটাই বাংলাদেশের পতাকা, ওটাকে উড়িয়ে দাও! সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী মিছিলকারীদের হাত থেকে পতাকাটি নিয়ে সেটা উড়িয়ে দিলেন। জনতা প্রচ- হর্ষধ্বনি দিয়ে তাদের সমর্থন ও শ্রদ্ধা জানায়। পরদিন ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি আ স ম আবদুর রব বটতলা প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ওইদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে জাতীয় সংগীতও বাজানো হল। ২৩ মার্চ বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমান তার বাসভবনে মানচিত্র খচিত ওই পতাকাটি উত্তোলন করেন। ওই পতাকাটির নকশাকার ছিলেন শিব নারায়ণ দাস। আর পতাকার চূড়ান্ত নকশাটি করেন পটুয়া কামরুল হাসান ।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
অনুলিখন :আবদুল্লাহ আরিফ। উৎসঃ
http://www.samakal.net/print_edition/archive/details.php?news=9&view=archiev&y=2006&m=12&d=16&action=main&menu_type=&option=single&news_id=44209&pub_no=425&type=