রান্নাঘরের উপাদানেই দারুণ ৭টি শীতকালীন চিকিৎসা
বড় থেকে শুরু করে ছোটখাটো সব ধরনের অসুখেই আমরা ওষুধ খেয়ে থাকি। সুদূর অতীতে যখন এখনকার মতো ওষুধপত্র ছিল না, তখন মানুষের সকল সমস্যার সমাধান করতো তখন প্রকৃতি। প্রাকৃতিক উপাদানই ছিল তখনকার মানুষের একমাত্র ভরসা।
সুপ্রাচীনকাল থেকেই মানবজাতি সব সময় প্রকৃতির শরণাপন্ন হয়েছে। খাদ্য, বাসস্থানের সংস্থান যেমন প্রকৃতি থেকে এসেছে তেমনি রোগ সারানোর উপকরণও তারা প্রকৃতি থেকেই সংগ্রহ করেছে। প্রাচীন ভারতে ভেষজ চিকিত্সার বিশেষ বিদ্যাও প্রচলিত ছিল, আর তা হলো আয়ুর্বেদশাস্ত্র। প্রাকৃতিক উপাদানে প্রায় সকল ধরনের রোগের চিকিত্সার উপায় বাতলানো ছিল সেখানে। এখনো ভেষজ চিকিত্সার অন্যতম মাধ্যম হলো প্রাকৃতিক উপাদান। এসব উপাদানে থাকে কৃত্রিম ওষুধের মতো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
রসুন :
রসুন রান্নায় ব্যবহৃত অন্যমত মসলাগুলোর মধ্যে একটি। রসুনের রয়েছে অনেক গুণাগুণ। কিছু সমস্যা দূরীকরণে রসুনের আছে অতুলনীয় ভূমিকা।
১)রসুনের রয়েছে অসাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। প্রতিদিন এক কোয়া কাঁচা রসুন খান। এতে রোগবালাই আপনার কাছ থেকে থাকবে দূরে। বিশেষ করে পেটের সমস্যা, হৃদরোগ, মাইগ্রেন ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূরে রাখতে কাঁচা রসুন সহায়তা করে।
২)ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূর করতেও রসুন খুবই উপকারী। ঠান্ডার কারণে বুকে কফ জমে গেলে বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে এ সময় খুব ভালো কাজ দেবে রসুন। একটা আস্ত রসুন থেঁতো করেন নিন। তারপর একটি স্টিলের পাত্রে দুই টেবিল চামচ সরিষার তেল ও রসুন গরম করুন। তেল ফুটে উঠলে নামিয়ে ফেলুন। এই তেল কুসুম কুসুম গরম অবস্থায় গলা, বুকে ও পিঠে মালিশ করুন। দ্রুত উপকার পাবেন।
সরিষার তেল :
বাঙালির ঘরে ঘরে সরিষার তেল একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। বিশেষ করে সরিষার তেল ছাড়া ভর্তা অকল্পনীয়। সরিষার তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় আচার তৈরিতে। এছাড়া রান্নার কাজেও ব্যবহার হয় সরিষার তেল। সরিষার তেলেরও রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। যেমন -
৩)সর্দি লাগলে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং অস্বস্তি হতে থাকে ভীষণ রকমের। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে আঙুলের ডগায় একটুখানি সরিষার তেল লাগিয়ে নিয়ে নাকের ছিদ্রে ঘষতে থাকুন এবং ঘন ঘন শ্বাস টানুন। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস অবিলম্বে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
৪)প্রতিদিন এক চা চামচ খাঁটি সরিষার তেল খাবার অভ্যাস করুন। এতে সকল ঠান্ডাজনিত সমস্যা থাকবে দূরে। সরিষার তেলে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া সরিষার তেল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমে যায়। জ্বর হলে বা খুব বেশি ঠান্ডা লেগে গেলে খাবারে অরুচি আসে। সরিষার তেল মুখের রুচি ফিরিয়ে আনে এবং ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
৫)সারা বছর খুশকির সমস্যা থাকুক আর না থাকুক, কিন্তু শীতকালে অনেকেরই খুশকির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। সরিষার তেল দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সপ্তাহে ২ বার চুলের গোড়ায় সরিষার তেল লাগান। এতে খুশকি ও মাথার চুলকানি তো দূর হবেই, চুল পড়াও কমে যাবে।
আদা :
আদা হলো এমন একটি মসলা যা খাবারের স্বাদ ও গুণাগুণ বৃদ্ধি করে বহুগুণ। এছাড়া ঘরোয়া চিকিত্সার কাজেও আদা অতুলনীয়। যেমন -
৬)জ্বর, ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথায় দূর করতে আদা উপকারী ভূমিকা রাখে। কারণ আদায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শীতকালে ঠান্ডার সময় তাই আদা চা খেতে পারেন নিয়মিত। সর্দি কিংবা খুসখুসে কাশিতে আক্রান্ত হলে আদার রস ও মধু একত্রে মিশিয়ে হালকা গরম করে দিনে তিনবার খান। অবশ্যই উপকার পাবেন।
৭)ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট, মাইগ্রেনের মতো সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয়। তাই রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন একটুখানি কাঁচা আদা। এতে উপকার পাবেন এবং এসব সমস্যা প্রতিরোধে আদা সাহায্য করবে।