যখন আপনি প্রথম ইতালির ভেনিসের poveglia দ্বীপের নাম শুনবেন তখন আপনার খুব অস্বাভাবিক কিছুই মনে হবে না। মনে হবে এটা আর ১০ টা সাধারণ দ্বীপের মতোই। শুধু তাই নয়, এটার কোন ছবি দেখানো হলে যে কারো মনে হবে এটা বেড়াতে যাবার জন্য বেশ সুন্দর একটি জায়গা। কিন্তু ঘটনা ভিন্ন! দ্বীপটি ইতালির ভেনিস ও লিডো শহরের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। এখন পর্যন্ত এই দ্বীপের আদি মালিক কে সেটা জানা যায় নি ও কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। শুধুমাত্র আঙ্গুর উৎপাদনের সময়েই এই দ্বীপে মানুষজনকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। বেশ কিছুদিন আগে ইতালীয় সরকার দ্বীপটি কিনে নিলেও পরে একজন ব্যক্তির কাছে ১৯৬০ সালে বিক্রি করে দেয়। অতি সম্প্রতি একটি ধন্যাঢ্য পরিবার দ্বীপটি কিনে নেয় ও চেষ্টা করে সেটাকে অবকাশকেন্দ্ররূপে গড়ে তোলার। কিন্তু একদিনের মাথায় সে পরিবার দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে আসে। জনশ্রুতি আছে যে, দ্বীপটি যিনি কিনেছিলেন তার মেয়েকে কেউ একজন অদৃশ্য থেকে অনেক জোরে চড় মারে। ফলে তার গালে ১৪ টি ক্ষত হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, জেলেরাও এ দ্বীপটি এড়িয়ে চলে কারণ প্রায়ই তাদের জালে মানুষের লাশ আটকা পড়তো।
ফিরে যাওয়া যাক ইতিহাসের পাতায়। এই দ্বীপের কথার উল্লেখ আছে ৪২১ সালের নথিপত্রে। নবম শতকে এটা খুব ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ ছিল। রোমান যুগে এই দ্বীপটি ব্যবহার করা হত প্লেগে আক্রান্ত রোগীদের রাখতে ও তাদের পুড়িয়ে মেরে ফেলতে। প্লেগ সেসময় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তো আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে। এজন্য অন্য জনসাধারণ থেকে প্লেগ রোগীদের পৃথক করে নিয়ে আসা হত দ্বীপে। বেশ কিছুদিন পর ব্ল্যাক ডেথ নামে প্লেগ রোগ যখন বিশ্বব্যপাঈ ছড়িয়ে পড়লো এই দ্বীপটিকে আবার একই কাজে ব্যবহার করা শুরু হলো। প্লেগে মারা যাওয়া মৃতদের তো এখানে এনে পুড়ানো হতোই, একই সাথে কারো দেহে প্লেগের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলে তাদেরকেও এই দ্বীপে এনে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জীবিত-মৃত মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে এ দ্বীপে পুড়িয়ে মারা হয়। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে পোড়ানোর কারণে এখনো দ্বীপের মাটিতে আঠালো ছাই সব খানে ছড়িয়ে আছে।
১৯২২ সালে এই দ্বীপে মানসিক রোগীদের একটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়। সেখানকার রোগীরা প্রায়ই মৃতদের দেখতে পেত বলে দাবি করতো। সেটা হয়তো তাদের মানসিক সমস্যা। তবে এখানে একজন কুখ্যাত চিকিৎসকের কথা জানা যায় যিনি মানসিক রোগীদের উপর ভয়াবহ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন। তার সঙ্গী ছিল হাতুড়ি, ড্রিল মেশিন ইত্যাদি! উদ্ভট বিষয় হচ্ছে, সেই চিকিৎসক নিজেও পরে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যান। যাই হোক, এখন পর্যন্ত দ্বীপটি নিয়ে মানুষের মনে ভীতি রয়েই গিয়েছে। অনেকের কাছেই এটা অশুভ শক্তির প্রতীক।