চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে জীবণবৃত্তান্ত বা সিভি অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। সিভি শুধু যে আপনার তথ্য উপস্থাপন করে, তা কিন্তু নয়। সিভি আপনাকেই উপস্থাপন করে। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার সিভি দেখেই আপনাকে চিনে নিতে চাইবে অনেকাংশে। অনেক সময় অসম্পূর্ণ, অথবা অপ্রাসঙ্গিক কথা থাকার কারণে চাকরিপ্রার্থীকে ডাকাই হয় না। কাজেই আপনার সিভি-টি হতে হবে এমন, যেন তা আপনারই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠে। ১০টি কাজ আপনার সিভি-কে যেমন করে তুলবে ব্যতিক্রমী, ঠিক তেমনি আপনাকে সহজ করে দেবে কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি ছিনিয়ে নিতে।
১. বাস্তবতাকে ধারণের চেষ্টা করুন:অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক কথা অথবা ব্যক্তিত্বের সাথে মেলে না এমন তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে। এমন ক্ষেত্রে দৃষ্টি তো আকর্ষিত হবে কিন্তু একবার ভাবুন তো, যখন কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারবে, আপনি মূলত সিভি-তে যা বলেছেন তা আপনি নন, তাহলে কী পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে? কাজেই সিভি-টি রাখুন একদম আপনার মতো। সিভি-কে আপনার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই উপস্থাপনের চেষ্টা করুন।
২. কাটছাঁট করুন:সময় বাঁচাতে গিয়ে অনেক সময় অন্যের সিভি-তেই নিজের তথ্যগুলো প্রতিস্থাপণ করে আমরা বসিয়ে দেই। এতে করে দেখা যায়, প্রায় সর্বত্র একই রকম সিভি-ই উপস্থাপিত হয়। কমে যায় এর গ্রহণযোগ্যতা। কাজেই নিজের সিভিটি নিজের মতো করেই সাজান। ব্যতিক্রম থাকার চেষ্টা করুন।
৩. সিভিতে ব্যক্তিগত তথ্য যোগ করুন:আপনার কাজের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন যেমন জরুরি, ঠিক একইভাবে জরুরি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য উপস্থাপন। এতে কর্তৃপক্ষ আপনার সম্পর্কে ধারণা পাবেন, সৃষ্টি হবে অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গী।
৪. কোনো শূন্যস্থান রাখবেন না:অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা তথ্যের অভাবে সিভি-তে কর্মজীবনের অনেক অংশই বাদ দিয়ে যাই। এঘটনা নতুনদের ক্ষেত্রেই বেশি ঘটে। কারণ তাদের কাজের অভিজ্ঞতা থাকে না। কিন্তু তাতে কী? ছাত্রজীবনে যে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ অথবা আপনার পঠিত বিষয়ের বাইরে কোনো কোর্স করে থাকলে সেটা উল্লেখ করুন।
৫. সিভি-কে রাখুন চলমান:যখন চাকরি প্রাপ্তির প্রয়োজনীয়তা থাকে না, তখন আমাদের সিভি-টিও পড়ে থাকে অবহেলায়। আবার যখন আবেদনের দরকার হয়, দ্রুত সেটাকে আপডেট করি। এতে সময় বাঁচে ঠিকই, কিন্তু অনেক সময় অনেক কিছু বাদও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে মনের ভুলে। আর কে বরতে পারে, যে প্রসঙ্গটি বাদ পড়ে গেল, সেটাই হতে পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরি ক্ষেত্রে অনেক বড় একটা বিষয়! সিভি-কে অবহেলায় ফেলে না রেখে সবসময়ই তাকে আপডেট রাখুন।
৬. ভুল সংশোধন:অনেক সময়ই সিভিতে মনের ভুলে রয়ে যায় অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ভুল, যা আপনার চোখে পড়ছে না ঠিকই কিন্তু চাকরিদাতা কর্তৃপক্ষের চোখে ঠিকই পড়ে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা এমনই ভয়ঙ্কর, ছোট্ট একটা ভুলের কারণে হয়তো আপনাকে ডাকাই হবে না ইন্টারভিউয়ের জন্য। ব্যাপারটা আপনার চোখে হয়তো অশোভন বা অন্যায় কন্তিু, একবার ভাবুন তো কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে? তাদের একটা যুক্তিই যথেষ্ট- যে নিজের সিভি-তে এমন ভুল করে রাখতে পারে, সে নিজ কাজে যে ভুল করবে না, তার কী নিশ্চয়তা? কাজেই পারলে নিয়মিত নিজ সিভি-টি পর্যবেক্ষণ করুন, ভুলগুলো সংশোধনের চেষ্টা করুন।
৭. সত্য বলুন:অনেকেই সিভিতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন। হয়তো এটা একটি প্রচলিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে। এই যেমন- আপনি নেতৃত্ব দিতে পারেন না বা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কিন্তু সিভি-তে ঠিক এর উল্টো লিখে রেখেছেন। ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে পর্যবেক্ষণের সময় কর্তৃপক্ষ যখন এই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন, তখন আপনি কী আর আশা করতে পারেন, কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি আপনার? কাজেই নিজে যা, সেটাই উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। অপরদিকে বিভিন্ন যোগ্যতার ক্ষেত্রে এবং রেফারেন্সে অনেকে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে থাকতে পারেন। এই কাজটা যে কতবড় ক্ষতিকর, তা ক্ষতিগ্রস্তরাই ভালো বলতে পারবেন। অতএব, সত্যের ওপর থাকুন, ছিনিয়ে নিন কাঙ্ক্ষিত চাকরি।
৮. হিসাবে সূক্ষ্মতা:গণিতে অনেকের মাথাই কাজ করে না। কাজ করতে হবে এমন কোনো কথাও নেই। তবে কিছু ব্যাপারে আপনাকে তো একটু সূক্ষ্ম হিসাব করতেই হবে। এই যেমন, সিভিতে আপনার বয়সের হিসাব, কাজের অভিজ্ঞতার হিসাবসহ বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব। এগুলো অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে।
৯. সিভিকে করে তুলুন আকর্ষণীয়:আমরা এখন এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে প্রথম দর্শণ ব্যাপারটা আসলেই বড় একটা ব্যাপার। প্রথম দর্শণে আপনার সিভি-টি ভালো লাগার মতো করে আকর্ষণীয় করে তুলুন। বাক্যগুলো ছোট ছোট করে লিখুন এবং পয়েন্ট করে করে তথ্য উপস্থাপন করুন। এতে আপনার সিভিটি হবে একদম ঝরঝরে। চাইলে লেখাগুলো এবং বিভাগগুলোর মাঝে বড়ধরণের জায়গা ফাঁকা পড়ে গেলে সেখানে গ্রাফিক ডিজাইন করে ভরে দিতে পারেন। এতে আপনার সিভিটি হয়ে উঠবে ব্যতিক্রম এবং আকর্ষণীয়।
১০. কিছু বন্ধুসুলভ কি-ওয়ার্ড দিন:এই ব্যাপারটা ইন্টারনেটে সিভি আপলোড করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এমন কিছু কি-ওয়ার্ড দিন, যা কুব সহজেই মানুষের মাথায় আসে এবং সার্চ ইঞ্জিনে আপনার সিভি-টি চলে আসে। জব টাইটেলেও সহজ কিছু শব্দ নির্বাচন করুন, যা সার্চ ইঞ্জিনকে বাধ্য করবে আপনার সিভি-টি ইন্টারনেটে সামনে টেনে নিয়ে আসতে।