ফেসবুকে মার্কিন গোয়েন্দাদের নজরদারি নিয়ে হতাশ জাকারবার্গ। এই হতাশার কথা জানাতে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে টেলিফোন করেন। গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে দেওয়া তাঁর পোস্টে এ কথা লিখেছেন জাকারবার্গ।
সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের এক খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দাগিরি নিয়ে নিজের হতাশা প্রকাশ করতে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে টেলিফোন করেছিলেন ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
|ফেসবুকে এক ব্লগ পোস্টে জাকারবার্গ লিখেছেন, ‘আমি হতাশ ও বিভ্রান্ত।’
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাগিরি সম্পর্কে জাকারবার্গ লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে ইন্টারনেটে চ্যাম্পিয়ন হতে হবে, হুমকি নয়।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) বিরুদ্ধে গোপনে ইন্টারনেটে ম্যালওয়্যার ছড়ানো ও চরবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। ফেসবুক সার্ভারের ছদ্মবেশে সাধারণ ব্যবহারকারীদের পিসিতে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ ঘটানোর এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে এনএসএ।
তবে বিবিসি এক খবরে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মী স্নোডেন ফেসবুকের ছদ্মবেশে গোয়েন্দাগিরির বিষয়টি ফাঁস করেছেন। গোয়েন্দারা ‘টারবাইন’ নামে একটি গোপন কর্মসূচির আওতায় ওই ম্যালওয়্যার সংক্রমণের ঘটনা ঘটায় এনএসএ। এ তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর জাকারবার্গ ওবামাকে ফোন করেন। অবশ্য এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে গোয়েন্দাগিরিতে ফেসবুক ব্যবহার করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন মার্ক জাকারবার্গ।
গতকাল লেখা ব্লগে জাকারবার্গ লেখেন, ‘বিশ্ব যখন অধিক জটিল হচ্ছে এবং বিভিন্ন দেশের সরকারকে টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে, তখন ইন্টারনেটে বিশ্বাস রাখার গুরুত্ব আরও বেশি বেড়ে গেছে।’
জাকারবার্গ লিখেছেন, ‘ইন্টারনেট আমাদের সবার সম্মিলিত স্থান। আমরা এখানে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। এটা আমাদের সুযোগ বাড়ায়। শেখার সক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়। আমাদের শক্তিশালী করে তোলে এবং একত্র করে নিরাপদ রাখে।’
ইন্টারনেটকে আরও শক্তিশালী করতে এটি নিরাপদ করে তুলতে হবে বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও জাকারবার্গ ও ওবামার কথোপকথনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গোয়েন্দাদের ইন্টারনেটে গোপন নজরদারি ঠেকাতে গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, টুইটার, এওএল, লিংকডইন ও ইয়াহু মিলে ‘রিফর্ম গভর্নমেন্ট সার্ভিলেন্স’ নামে একটি জোট গঠন করেছে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে বারাক ওবামা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। মার্কিন প্রশাসনকে গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টি স্বচ্ছ ও পুনর্গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
এর আগে বারাক ওবামাকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিল বিশ্বের আটটি প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান। গোপনে নজরদারির বিষয়টি পুনর্গঠন করার জন্য লেখা এই খোলা চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ও প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। ওবামাকে লেখা সেই খোলা চিঠিতে ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়।
মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্মী অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন মার্কিন গোয়েন্দাদের গোপন নজরদারির তথ্য ফাঁস করার পর বিষয়টি সবার নজরে আসে। স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বৃহত্ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভার কেবল হ্যাকড থেকে শুরু করে ফোন রেকর্ড, নেটওয়ার্ক হ্যাকিংসহ নানা পদ্ধতিতে গোপন নজরদারি করে মার্কিন গোয়েন্দারা।