ম্যাকিন্সের চোখে বাংলাদেশের ক্রিকেট

Author Topic: ম্যাকিন্সের চোখে বাংলাদেশের ক্রিকেট  (Read 732 times)

Offline maruppharm

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1227
  • Test
    • View Profile
ভালো একটা চাকরি। গুলশানে ফ্ল্যাট। বারিধারার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে স্ত্রীর শিক্ষকতা। ভেবেছিলেন, স্ত্রী-দুই সন্তানসহ অন্তত বছর চারেকের জন্য ঢাকাই হবে ঠিকানা। কিন্তু সব ‘এলোমেলো’ করে দিল ব্রিসবেন থেকে আসা বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারের চাকরির প্রস্তাবটা। বিসিবি একাডেমির কোচ হিসেবে দুই বছরের চুক্তি শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই তাই বাংলাদেশ ছাড়ছেন রিচার্ড ম্যাকিন্স। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট ধরবেন ২৮ এপ্রিল।
আগে আগে চলে যাচ্ছেন বলে খুব যে হতাশা আছে, তা নয়। ব্রিসবেনে তাঁর বাড়ি, পরিবার-পরিজনও। সেখান থেকে আসা চাকরির প্রস্তাবটা ম্যাকিন্স লুফেই নিয়েছেন বলতে পারেন। তবে দেশে ফিরে গেলেও বাংলাদেশ কখনো না কখনো তাঁকে স্মৃতিকাতর করবেই। দুই দফায় চার বছরের মতো থেকেছেন। এ দেশের ক্রিকেটকে কাছ থেকে দেখেছেন। চাইলে ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যেমন দেখেছি’জাতীয় একটা বই-ই লিখে ফেলতে পারেন! কাল দুপুরে গুলশানে তাঁর ফ্ল্যাটে রিচার্ড ম্যাকিন্সের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে কাল্পনিক সেই বইয়ের সম্ভাব্য কয়েকটা অধ্যায় সাজিয়েও ফেলা যায়—
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ক্রিকেট: ২০০৩ থেকে ২০০৫ যেমন দেখেছেন, সেটার সঙ্গে গত দুই বছরের অভিজ্ঞতার তুলনা করতেই পারেন। দ্বিতীয়টি এগিয়ে থাকলেও ফিরছেন একটা হতাশা নিয়েই, ‘প্রথমবার এসে আমি যে রকম ভূমিকা রাখতে পেরেছিলাম, এবার সম্ভবত সেটা পারিনি।’ না পারার কারণগুলোর বেশির ভাগই অক্রিকেটীয়। হরতাল, প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ক্লাবগুলোর টালবাহানা। এসব দেখে বুঝে গেছেন বাংলাদেশের বাস্তবতাও, ‘একটা দেশ হিসেবে ২০১৩ সালটা বাংলাদেশের জন্য খুব কঠিন ছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল এ সময়।’
তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ম্যাকিন্স খুবই আশাবাদী। যদিও সেই আশার স্বরলিপিতে উপসংহার হতে পারে এই কথাটি, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভালো দিন আসে ঠিকই। কিন্তু একটা ভালো দিন আর একটা খারাপ দিনের মধ্যে পার্থক্যটা এখনো অনেক বেশি।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটার: সবাইকে নিয়ে বললেন না। তবে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম নাম দুটি বললেন বেশ বড় গলায়। আগেরবার এঁরা ছিলেন ম্যাকিন্সের ছাত্র। এবার এসে দেখলেন তাঁদের হাতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের পতাকা। বাকিদের চেয়ে দুজনকে আলাদাও করতে পারেন সহজেই, ‘প্রতিভাবান ক্রিকেটার বাংলাদেশে অনেক আছে। কিন্তু সাকিব-মুশফিক নিজেদের আলাদা করতে পেরেছে মূলত তাদের মানসিকতা দিয়ে।’
কী সেই মানসিকতা? সাকিব-মুশফিক হারতে পছন্দ করেন না। খেলাটির প্রতি তাঁদের মতো নিবেদনও আর কারও নেই, ‘সেরা খেলোয়াড় হয় তারাই, খেলাটার প্রতি যারা নিবেদিত। নিজেকে আরও ভালো করার চেষ্টা এবং আগ্রহ যাদের প্রতিনিয়ত থাকে। মুশফিক আর সাকিব সে কারণেই সবচেয়ে ধারাবাহিক।’ ভালো দল হয়ে উঠতে হলে বাংলাদেশের এ রকম অন্তত পাঁচ-সাতজন ক্রিকেটারের প্রয়োজন দেখেন ম্যাকিন্স।
ভবিষ্যতের তারকা: ম্যাকিন্সের আতশি কাঁচের তলায় ভবিষ্যতের সাকিব-মুশফিকও কম নেই। পেসার তাসকিন আহমেদের নামই আগে বললেন। সঙ্গে জুড়ে দিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বা টেস্ট ক্রিকেটের জন্য পুরোপুরি তৈরি হতে ওর আরও দু-তিন বছর লাগবে।’ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মেহেদী হাসানের মধ্যে অমিত সম্ভাবনা দেখেন, ‘খুবই ভালো অফ স্পিনার এবং খুবই ভালো অধিনায়ক। আশা করছি তিন-চার বছরের মধ্যে সে-ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ নিতে পারবে।’
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওপেনার সাদমান ইসলামকে মনে করেন লম্বা রেসের ঘোড়া, ‘টেস্ট ওপেনার হিসেবে ভবিষ্যতে তামিমের সঙ্গী হওয়ার যোগ্যতা আছে ওর।’ আর বললেন তরুণ ফাস্ট বোলার আলী আহমেদের কথা, ‘এই ছেলেটা এখনো কোথাও খেলেনি। তবে তাসকিনের সঙ্গে সে-ও ১২ মাস ধরে অনুশীলন করছে। ৬ ফুটের ওপরে লম্বা। বলে ভালো পেস আছে। বাউন্স আছে, সুইং করাতে পারে।’
বিসিবি ও এশিয়ান সংস্কৃতি: ম্যাকিন্স দেখেছেন, এ দেশে ক্রিকেটের বড় আসর বসা মানেই অন্য সব স্থবির হয়ে পড়া, ‘বড় কোনো ইভেন্টের সময় সবাই সেটি নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাকি সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়, সিদ্ধান্তও আটকে থাকে। কাজ করাটা কঠিন হয়ে পড়ে তখন।’
এই সমস্যা থেকে মুক্তির সহজ উপায়ও বাতলে দিয়েছেন ম্যাকিন্স। যদিও সেটা অজানা কোনো মহৌষধ নয়, ‘ম্যানেজারদের হাতে আরও বেশি কর্তৃত্ব দেওয়া উচিত। সব সময় বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায় না থেকে তারাই পারে বিভিন্ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে। বোর্ডে অনেক লোক, আর এমনও না যে বোর্ড সভাটা প্রায়ই হয়।’ ম্যাকিন্সের অভিজ্ঞতা, বোর্ড সভায় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে আসল বিষয়টাই চাপা পড়ে যায়। তখন আবার পরের বোর্ড সভার জন্য অপেক্ষা। বাংলাদেশে দুই দফা থেকে তিনি অবশ্য বুঝে গেছেন, ‘এশিয়ান সংস্কৃতিটাই হয়তো এ রকম। এখানে সবকিছু তাড়াতাড়ি হবে না, এটাই স্বাভাবিক।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট একাডেমি: একাডেমির দায়িত্ব নিয়ে এলেও এ দেশের একাডেমির কার্যক্রম সম্পর্কেই সবচেয়ে কম ধারণা নিয়ে ফিরছেন ম্যাকিন্স! কীভাবে? তাঁর মুখ থেকেই শুনুন, ‘...কারণ, আমি তো একাডেমির কোনো কার্যক্রমই এখানে চালাইনি।’ হ্যাঁ, একাডেমির কোচ হয়ে এলেও ২০১২ সালের আগস্ট থেকে চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ম্যাকিন্সকে দিয়ে একাডেমির কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করাতে ব্যর্থ হয়েছে বিসিবি। কিছুদিন কাজ করেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে। কিছুদিন কোচিং স্টাফদের নিয়ে। তৃপ্ত নন কোনোটাতেই। আর সেটার কারণ, ‘সমস্যা হলো, বিসিবির এখনো একটা স্পষ্ট ক্রিকেট ক্যালেন্ডার নেই। পরিকল্পনা করা তাই একটু কঠিন।’
একাডেমির কার্যক্রম না চালালেও ম্যাকিন্স জানেন, বাংলাদেশে একাডেমি মানে মূলত ২৩-২৪ জনের একটা দলকে সারা বছর প্র্যাকটিস করানো। ‘একাডেমির জন্য নির্দিষ্ট কোনো কাঠামো কোথাও নেই। প্রতিটা দেশ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী একাডেমির কাঠামো তৈরি করে’ বললেও বাংলাদেশের মতো নির্দিষ্ট দল নিয়ে কাজ করার ঘোর বিরোধী ম্যাকিন্স। এটাকে সময়ের অপচয় মনে হয় তাঁর কাছে।
ম্যাকিন্স মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য একাডেমির আদর্শ কাঠামো হলো, যেখানে খেলোয়াড়েরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী তিন বা ছয় মাসের জন্য কাজ করতে আসবে। এটা জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য যেমন হতে পারে পুনর্বাসনের জায়গা, তেমনি তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য হতে পারে উঠে আসার সিঁড়ি।
.......................
বাংলাদেশের ক্রিকেটের আরও অনেক কিছুই নিশ্চয়ই ধরা পড়েছে রিচার্ড ম্যাকিন্সের চোখে। সবই কি আর লিখতে বলবেন! সুযোগ পেলে যে এ দেশে আবারও আসতে আগ্রহী এই অস্ট্রেলিয়ান।
Md Al Faruk
Assistant Professor, Pharmacy