জাপান ও আমাদের সৈকত ব্যবস্থাপনা

Author Topic: জাপান ও আমাদের সৈকত ব্যবস্থাপনা  (Read 1516 times)

Offline maruppharm

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1227
  • Test
    • View Profile
রবীন্দ্রনাথ সমুদ্রের তরঙ্গরাশিকে সংখ্যা ও সংজ্ঞাহীন অজানা ক্রন্দন ভেবে তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। অতলস্পর্শী সমুদ্রের গাঢ় নীল তরঙ্গের চঞ্চলতা, দুঃখগাথা, রহস্যঘেরা সঞ্চয় নিয়ে তিনিও বিস্মিত ও অভিভূত হয়েছিলেন। প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ষুরধার ফেনিল জলরাশি কল্পনায় ছড়িয়ে দেয় এমনই সব অদ্ভুত অনুভূতি। চারদিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে ঘেরা জাপান একটি দ্বীপরাষ্ট্র। প্রায় সব শহরের কোল ঘেঁষে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়ঘেরা সমুদ্রসৈকত।
তবে জাপানের কোনো সৈকতই আমাদের কক্সবাজারের মতো দীর্ঘ নয়। আবার অধিকাংশ সৈকতই অত্যন্ত খাড়া প্রকৃতির, পাথরময় ও গভীর খাদযুক্ত। তাই সর্বসাধারণের বিনোদনের জন্য সৈকতের সংখ্যা নিতান্তই কম। যে কয়টি সৈকত নিরাপদ এবং ব্যবহারের উপযুক্ত, তার ব্যবস্থাপনা মুগ্ধ করে।
জাপানে এ সময়ের আবহাওয়া অত্যন্ত অনুকূল এবং স্বাস্থ্য উপযোগী। তাই সরকার-নির্ধারিত সোনালি সপ্তাহের চার দিন জাতীয় ছুটিতে সবাই পর্যটনে বেরিয়ে পড়ে। জাপানিরা বিদেশে কোথাও যাওয়ার চেয়ে নিজ দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটেই আনন্দ উপভোগে সময় কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বেশি। তাই এ সময়ে বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতে জনসমাগম প্রচুর হয়ে থাকে।
প্রতিটি সৈকতে আছে অসংখ্য নিরাপদ সতর্কবাণী-সংবলিত বিলবোর্ড। কোনো কোনো স্থানে রয়েছে সার্বক্ষণিক আধুনিক সামুদ্রিক সরঞ্জাম-সংবলিত নিরাপত্তাকর্মী। সমুদ্রে ভ্রমণের জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের স্পিডবোট ও ছোট জাহাজ। সৈকতের নিকটস্থ খাবারের হোটেলগুলোতে রয়েছে স্বল্পমূল্যে সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন পদের আকর্ষণীয় খাবার। আমাদের দেশের ফ্যান্টাসি কিংডম কিংবা নন্দন পার্কের মতো বিভিন্ন ধরনের মিহো শহরে সহপাঠীদের সঙ্গে লেখকবিনোদনধর্মী রাইডের ব্যবস্থা আছে আবালবৃদ্ধবনিতাদের জন্য।
সিজুওকা শহরের মিহো সৈকতের লাগোয়া মেরিন জাদুঘর। অসংখ্য মনোমুগ্ধকর সামুদ্রিক শৈবাল, প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, প্রাণীজ বৈচিত্র্যে ভরপুর। সৈকতের পাশ দিয়ে রয়েছে দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের রাস্তা ও সাইকেল লেন। তীর ঘেঁষে পাহাড়ের কোলে রয়েছে স্ট্রবেরির অসংখ্য বাগান এবং তৎসংলগ্ন স্ট্রবেরির দোকানঘর। সদ্যতোলা বাগানের সতেজ স্ট্রবেরি কিনে নিয়ে সাগরসৈকতে বসে তা খেতে খেতে প্রকৃতিকে উপভোগ করার মাধ্যমে নির্মল প্রশান্তি এনে দেয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বিশাল সাগরসৈকতের কোথাও কোনো অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক, আবর্জনা, খাবারের উচ্ছিষ্ট কিছুই নেই। একেবারেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিরাপত্তা সংকেতযুক্ত একেকটি সমুদ্রসৈকত।
২০১০ সালের সুনামির পর ঢেউয়ের তীব্রতা কমানোর জন্য তীর ঘেঁষে বড় বড় কৃত্রিম পাথর ফেলে একধরনের দেয়ালের সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে সাগরসৈকতের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কিছুটা ব্যত্যয় লক্ষ করা যায়।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরাই বোধহয় একমাত্র জাতি, যারা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে পারি না। জাপানিরা তাদের ছোট ছোট সমুদ্রসৈকতগুলোকে দারুণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। অপর দিকে পাহাড় ও বনের সমাহারে ঘেরা সুদীর্ঘ সমতল বালুকাময় আমাদের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। কিন্তু যথাযোগ্য ব্যবস্থাপনা না করার ফলে দিনকে দিন তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। যত্রতত্র ছাউনি তুলে দোকান দেওয়া হয়েছে। খাবারের উচ্ছিষ্ট সর্বত্র। নেই কোনো নিরাপত্তার চিহ্ন অথবা পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী।
সেন্ট মার্টিন সৈকতে কিছুদিন আগে চারজন ছাত্রের নির্মম সলিলসমাধি ঘটেছে। এই অনিরাপত্তা ও অব্যবস্থাপনাই আমাদের পর্যটনশিল্পের অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা বা সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকতে কয়েকটি বড় সাইনবোর্ড অথবা প্ল্যাকার্ড বা নিদেনপক্ষে একটি লাল কাপড় কি আমরা ঝুলিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি না? কর্তৃপক্ষের কাছে সবিনয় অনুরোধ, কক্সবাজারকেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশে সৈকতের সুষ্ঠু বিনোদনের ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার দিকে নজর দিন।
মো. আবদুল মুহিত
জাপান
Md Al Faruk
Assistant Professor, Pharmacy

Offline habib.cse

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 117
  • Test
    • View Profile
thanks for sharing