ফিটনেস নিয়ে কাজ-কারবার শেষ। কাল থেকে শুরু হলো ক্রিকেটারদের স্কিল ট্রেনিং। মিরপুরের ইনডোরে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে কেউ করলেন বোলিং অনুশীলন, কেউ বা ব্যাটিং। অনেকে আবার সময় কাটালেন জিমনেসিয়ামেও।
স্কিল ট্রেনিংটা দলীয়ভাবে যেমন হয়, তেমনি ব্যক্তিগতভাবেও ক্রিকেটাররা নিজেদের কিছু সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। ভারত সিরিজের অনুশীলনেও সেটাই হবে। কোচের বেঁধে দেওয়া সূচি ধরে যেমন ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন হবে, তেমনি চলবে কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের কাজও।
এনামুল হকের (বিজয়) কথাই ধরুন। নিজের ব্যাটিংটাকে মোটামুটি সমস্যামুক্তই মনে হয় তাঁর কাছে। তার পরও অনুশীলনে বাড়তি কিছু করার তাগিদ ভেতরে, ‘চেষ্টা করব শটগুলোকে আরও নিখঁুত করতে। ধরুন আমি ড্রাইভ খেলছি। হয়তো ভালোই খেলছি, কিন্তু সেটাকে আরও ভালো কীভাবে খেলা যায়। এ রকম প্রতিটি শট নিয়েই কাজ করার ইচ্ছা আছে।’
এর বাইরে নতুন বলের সুইংয়ের বিপক্ষে ব্যাটিংটাও আরেকটু ঝালাই করা দরকার বলে মনে করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘ভারতের বিপক্ষে নতুন বলের সুইং সমস্যা করতে পারে। এটা কীভাবে সামলাতে হবে, তা নিয়েও কিছু করব।’
নতুন বলের মুখোমুখি হতে হবে ওপেনার তামিম ইকবালকেও। এই বাঁহাতিও তাই নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছেন। সেসব প্রকাশ না করেই বললেন, ‘কী নিয়ে কাজ করছি সেটা বিস্তারিত বলব না। তবে অনেকগুলো বিষয়ই আছে। দলের সঙ্গে কাজ করার বাইরে একা একাও কাজ করেছি। বেশ কয়েকটা জায়গায় উন্নতির সুযোগ আছে।’
ভারতীয় বোলারদের সামলাতে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা কি আছে?
তামিম: সবই আছে, সবই করছি। ওদের বোলিং নিয়েও ভেবেছি। কাকে-কীভাবে খেলতে হবে তার একটা ছক তো থাকেই। তার পরও আমার নিজস্ব কিছু চিন্তাভাবনা আছে। সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।
আবদুর রাজ্জাকের কর্মতালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছে বলটাকে কীভাবে আরও বেশি স্পিন করানো যায়, সেই গবেষণা। ‘আমি মূলত স্পিন নিয়ে কাজ করছি। আরও বেশি কীভাবে স্পিন করানো যায় সেই চেষ্টা করছি’—কাল অনুশীলন শেষে বলছিলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার।
তবে এমন নয় যে, বলটাকে আরও বেশি ঘুরিয়ে সাম্প্রতিক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে চাইছেন রাজ্জাক। রাজ্জাকের দৃষ্টিতে তাঁর বোলিং ঠিকই আছে, ‘আমার তো মনে হয় আমার সবই ঠিক আছে। সব সময় এই বলই করে আসছি। কখনো সফল হয়েছি, কখনো হইনি। আর ব্যর্থ হলে তো কথা উঠবেই।’
অল্প সময় থাকলেও সোহাগ গাজীর চিন্তা-চেতনায় গভীর প্রভাব ফেলে গেছেন পাকিস্তানের স্পিন বিশেষজ্ঞ কোচ সাকলায়েন মুশতাক। নতুন কিছু করতে গেলে আগে তাঁর দিয়ে যাওয়া সূত্রগুলোই কাজে লাগাতে চেষ্টা করেন অফ স্পিনার সোহাগ। কাল যেমন বলছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সাকলায়েন ভাই আমাকে কিছু বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। ওই জিনিসগুলো নিয়ে কাজ করব।’
—তা বোলিংয়ে কী ধরনের বৈচিত্র্য আনতে চান?
সোহাগ: আমি চেষ্টা করছি বল ফেলার জায়গাটা একটু বদলাতে। সঙ্গে আরও কিছু বৈচিত্র্য আনা। বলে টার্ন কম ছিল, সেটা নিয়েও কাজ করছি।
আধুনিক ডিজিটাল সময়ে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা যায় না কিছুই। শুরুটা চমক-জাগানিয়া হওয়ার পরও সোহাগ গাজীর পারফরম্যান্স ক্রমেই অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ার সেটাকেও একটা কারণ মনে করা হয়। তাঁর বোলিংটা হয়তো পড়ে ফেলেছে প্রতিপক্ষরা। সোহাগ নিজেও বলছিলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অন্যান্য দল হয়তো আমার বোলিংটা বুঝে ফেলেছে। তারা হয়তো জেনে গেছে আমার ভালো দিকগুলো কী কী। সে জন্যই বোলিংয়ে নতুন নতুন জিনিস আনতে হবে।’
এ ছাড়া উপায়ও নেই। পেছনে ফেলে আসা খারাপ সময়টা অতিক্রমের জন্য যে ছাড়িয়ে যেতে হবে নিজেদেরই!