ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম বলটি মাঠে গড়াতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি৷ আর তাই ব্যস্ততার শেষ নেই পিনহেরিওসের বেকারি মালিক রোনাল্ড ফেরারির৷ ছোট্ট দোকানটির রুটি ঠাসা কাউন্টারের সামনে ঝুলছে জাতীয় পতাকা৷ কেকগুলো সবুজ-হলুদ রঙে সাজানো হয়েছে৷ প্রতিদিন সকালে বুড়োরা এসে ভিড় জমান৷ কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে তাঁরা খবরের কাগজ পড়েন৷ অবশ্য দৃশ্যপট বদলে যায় সন্ধ্যায়৷ বিয়ারের গ্লাস হাতে তরুণদের ভিড়ে গমগম করে দোকান ও আশপাশের এলাকা৷
ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর সাও পাওলোর এক ছোট্ট এলাকা পিনহেরিওসের এই চিত্র এখন প্রায় ব্রাজিলের সর্বত্র৷ বিশেষত শহরগুলোয়৷ রোনাল্ড বেশ আশাবাদী যে আগামী এক মাস বেশ ভালো ব্যবসা হবে৷
অন্যদিকে রাস্তায় পপকর্নবিক্রেতা মার্সেলোর ভাষ্য, ‘যারা খেলা দেখার জন্য আসছে, তাদের পকেট থেকে কিছু ডলার তো রাস্তায় পড়বে! ওতেই চলবে আমার৷’ নিজের দেশের দল নিয়ে যেমন উচ্ছ্বাসে ভাসছেন, তেমনি দুপয়সা বেশি কামানোর সুযোগ পেয়ে বেশ উদ্বেলিত তিনি৷
বিশ্বকাপ ঘিরে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায় বেশ চাঙা একটা মৌসুম যাবে বলে ব্রাজিলজুড়ে কম-বেশি সবাই মনে করছে৷ আর এমন সময়ই খবর এল েয চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) ব্রাজিলের অর্থনৈতিক প্রবৃিদ্ধর হার হয়েছে মাত্র দশমিক ২০ শতাংশ৷
এই অবস্থায় বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য মাসব্যাপী বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বুঝি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল৷ স্বাগতিক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের প্রত্যাশা, ফুটবলের এই মহা আসরই অর্থনীিতকে দারুণভাবে চাঙা করবে৷
প্রত্যাশার পারদ চড়বেই বা না কেন? গত বছর কনফেডারেশন কাপের আসর বসেছিল দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশে৷ সে উপলক্ষে পর্যটকেরা ৫৩০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিলেন৷ আর বছরজুড়ে মোট ৫৭ লাখ পর্যটক ঘুরে গেছেন আমাজান জঙ্গলের দেশে৷ এই বছর ৬০ লাখ পর্যটকের পদচারণ হবে বলে মনে করছে দেশটির পর্যটন বোর্ড৷ এঁদের বেশির ভাগই বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর ঘিরে৷
বিলাসবহুল শপিং মল থেকে রাস্তার ধারের ছোট দোকান—সর্বত্র ছেয়ে গেছে বিশ্বকাপের নানা স্মারকে৷ চাবির রিং, পতাকা, টুপি, টি-শার্ট, বিকিনি, বল, ঢোল, ভুভুজেলা, মগ, টাই, রুমাল কী নেই সেখানে৷ বলা হচ্ছে, অন্য কোনো বিশ্বকাপের আসরে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়নি৷ আর এই অর্থ ব্যয় যেমন উত্তেজনা তৈরি করেছে, তেমনি সৃষ্টি করেছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ৷
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই দেশটির প্রধান শহরগুলোয় কয়েক দফা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ও ভাঙচুর হয়েছে৷ অনেক ব্রাজিলবাসীই মনে করেন যে ফিফা তাঁদের দেশ থেকে প্রচুর অর্থ নিয়ে যাচ্ছে৷ অথচ তাঁদের গণপরিবহনসহ অনেক নাগরিক সুবিধা সেভাবে বাড়ছে না৷
ব্রাজিলজুড়ে যে ৬৪টি ম্যাচ খেলা হবে, তার জন্য ফিফা ৩৩ লাখ টিকিট বিক্রি করেছে৷ চূড়ান্ত ম্যাচের টিকিটের দাম সর্বোচ্চ ৯৯০ ডলার (প্রায় ৭৭ হাজার ২২০ টাকা)৷ ফলে সব মিলিয়ে ফিফার কোষাগারে ৪০০ কোটি ডলার জমা পড়তে যাচ্ছে৷ ফিফার মহাসচিব জেরমো ভালসেক ইতিমধ্যেই একে বিরাট আর্থিক সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন৷
ব্রাজিল সরকার ১২টি স্টেডিয়ামসহ রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর নির্মাণ ও সংস্কারকাজে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে৷ বিশ্বকাপ ঘিরে দেশটিতে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে বলেও আশাবাদী ব্রাজিল৷ দেশটির পর্যটন বোর্ড তো মনে করে, বিনিয়োগের এক হাজার ১০০ কোিট ডলার উঠে আসতে পারে শুধু পর্যটন খাত থেকেই, যা কি না ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ পর্যটন থেকে আয়ের ২০ গুণ৷
আর টুর্নামেন্ট ঘিরে জুয়া খেলার জন্য ব্রাজিলবাসী নাকি অন্তত ৩২ কোটি ডলার ব্যয় করবে এক মাসেই৷ এটি বাংলাদেশের তিন দিনের পণ্য আমদানি ব্যয়ের সমান৷
সূত্র: ইকোনমিক টাইমস৷