সারাদেশে একটি জনপ্রিয় বাহন রিকশা। কিন্তু সেটা আবার ডিজিটালাইজড! শুনতে খটকা লাগলেও এমনই একটি রিকশা তৈরি করছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ বিভাগ।
ইতিমধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মোটর সংযুক্ত হয়ে আধুনিক রূপ নিয়েছে চিরপরিচিত রিকশা। বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় এবং শ্রম।
আধুনিক হলেও মোটেই পরিবেশ বান্ধব নয় মোটর চালিত রিকশাগুলো (অটোরিকশা)। কেননা ব্যাটারি চালিত হওয়ায় বিপুল পরিমাণ রিকশা চার্জ করতে চাপ পড়ছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার ওপর। বেড়ে যাচ্ছে লোডশেডিং। এদিকে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো সীমিত আকারে এটি চলাচলের অনুমোদনও দিয়েছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় তৈরি রিকশাকে আরও একটু এগিয়ে নিতে চিন্তা করেছে ইউআইইউ’র একদল গবেষক।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং গবেষক প্রকৌশলী মাহমুদ ইব্রাহিমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মূলত ডিজিটালাইজড এবং প্রযুক্তি নির্ভরতাই বদলে দিতে পারে আগামী বাংলাদেশ। সে বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা চেষ্টা করছি প্রান্তিক এবং সাধারণ মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে সহায়ক হয় এমন কিছু তৈরি করতে।
তিনি বলেন, জনপ্রিয় এই বাহনে মোটর যুক্ত হওয়ায় একদিকে রিকশা চালক, ব্যবসায়ী উপকৃত হয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষও উপকৃত হয়েছেন সমানভাবে। কিন্তু আধুনিক এই প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় আমরা চিন্তা করলাম রিকশাকে কিভাবে পরিবেশবান্ধব এবং ডিজিটালাইজড করা যায়।
প্রকৌশলী মাহমুদ জানান, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোলার পাওয়ারের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশে সূর্যের আলো পাওয়া খুবই সহজ। কেন আমরা তা কাজে লাগাতে পারি না? মোটরচালিত এই রিকশার চার্জ যদি সূর্যের আলো থেকে পাই, তাহলেই এটি পরিবেশবান্ধব হয়ে যাবে। এ ভাবনা থেকেই আমাদের এ প্রকল্প শুরু হয়।
তিনি বলেন, এই রিকশাকে ডিজিটালাইজড বলার কারণ, রিকশাটিতে সোলার প্যানেল এবং ব্যাটারিকে সংযুক্ত করেছে একটি মাইক্রো কন্ট্রোলার। যা ব্যাটারি কী পরিমাণ চার্জ হবে এবং কখন হবে তা নিয়ন্ত্রণ করবে। আবাসিক ব্যবহারের জন্য সোলার প্যানেল ২৩ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দক্ষিণমুখী রাখা হয়। রিকশায় সোজা করে রাখায় ২০০ ওয়াটের সোলার প্যানেলটি যাত্রী এবং চালকের মাথায় ছাদ হিসেবেও কাজ করবে। ৪৮ ভোল্টের চারটি ব্যাটারি একবার পুরোপুরি চার্জ করলে টানা ছয় ঘণ্টা চলতে সক্ষম।
ডিজিটালাইজড এই রিকশা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাজধানীর ধানমণ্ডিতে প্রায় এক মাস পরীক্ষামূলক গবেষণা শেষে দেখা গেছে সোলার প্যানেল ব্যবহার করায় সাধারণ ব্যাটারিচালিত রিকশার চেয়ে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা বেশি চলে। সোলারের পাশাপাশি সরাসরি বিদ্যুৎ থেকে চার্জ দেওয়া যাবে ব্যাটারিতে।
চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সাধারণ ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো রাতে চার্জ দিয়ে সকালে বের হলে দুপুর নাগাদ ফিরে যেতে হয়। পিক আওয়ারে চার্জ দেওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের ওপরও চাপ পড়ে। অন্যদিকে চালক রিকশা চালানোর ফাঁকে ফাঁকে ছয় ঘণ্টা সূর্যের আলোতে থাকলেই ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হয়ে যাবে।
প্রায়ই দেখা যায় মোটর চালিত রিকশা দুর্ঘটনা কবলিত হয়। সে বিষয়টি বিবেচনা করে এই রিকশার পেছনের চাকায় হাইড্রোলিক ব্রেক রাখার চিন্তা করা হয়েছে। কেননা ব্রাসলেস ডিসি মোটরের গতির সাপেক্ষে রিকশার সাধারণ ব্রেক অক্ষম।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি খুবই সাশ্রয়ী। রিকশাটির বিক্রয় মূল্য দাঁড়াবে ৫৫ হাজার টাকা। যেখানে সাধারণ মোটরচালিত রিকশার দামই প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন এনজিও বাজারজাত করলে এর দাম আরও কমে আসবে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কেনা হলেও চালক অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা বেশি কাজের সুবিধা পাচ্ছেন যার মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
রিকশাটি প্রদর্শিত হচ্ছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৪’ মেলায়।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করেন।
সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত এ মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত।
‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে এ মেলার আয়োজন করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।
মেলায় সহযোগিতা করছে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। - See more at:
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/296565.html#sthash.idiigR6W.dpuf