দুটি সেলাই মেশিন নিয়ে বছর পাঁচেক আগে মুন্সীপাড়ায় নিজের ঘরেই ঝুট কাপড় থেকে পোশাক তৈরি শুরু করেছিলেন গোলাম রাব্বানী। ওই দুটি মেশিনই তাঁর ভাগ্য খুলে দেয়। এখন তাঁর মেশিন আছে ২৫টি। মাসে আয় ৩৫ হাজার টাকা।
ঝুট কাপড় থেকে পোশাক তৈরি করে এভাবে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের এমন আরও ৫০০ পরিবার। তবে ভাগ্য ফেরানো এসব কারখানার মালিকেরা বছর খানেক ধরেই আছেন পুঁজির সংকটে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা এসএমই ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে ঋণ পান এই উদ্যোক্তারা। দেওয়া হয় এনসিসি ব্যাংকের মাধ্যমে। কিন্তু ফাউন্ডেশন নতুন করে অর্থ ছাড় না করায় বছর খানেক ধরে ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছিলেন না তাঁরা।
তবে পুঁজির সংকটে থাকা সৈয়দপুরের উদ্যোক্তাদের জন্য সুখবর মিলেছে। কারণ ঢাকার এসএমই ফাউন্ডেশনে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই উদ্যোক্তাদের জন্য আড়াই কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। এখন এনসিসি ব্যাংক এই টাকা নিয়ে গেলে চলতি জুন মাস থেকেই উদ্যোক্তারা ঋণ পাবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা নুরুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগেরবার ৩৫ জন উদ্যোক্তা ঋণের সুবিধা পেয়েছিলেন। এবার ১০০-এর মতো উদ্যোক্তা ঋণ পাবেন।
আটকে ছিল ঋণ: সৈয়দপুরের পোশাক কারখানাগুলোকে অর্থায়নে প্রথম এগিয়ে আসে এসএমই ফাউন্ডেশন। এনসিসি ব্যাংকের মাধ্যমে দুই দফায় উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয় সংস্থাটি।
প্রথম দফায় ২০১১-১২ অর্থবছরে এক কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা এই ঋণ পেয়েছেন ৯ শতাংশ সুদে।
এনসিসি ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখা এবং উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চের মধ্যে এনসিসি ব্যাংক এসএমই ফাউন্ডেশনের ছাড় করা সব ঋণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ এবং তা আদায় করে ফেলে। সে মাসেই এসএমই ফাউন্ডেশনকেও ঋণের টাকা পরিশোধ করে দেয় এনসিসি ব্যাংক।
এরপরই সৈয়দপুরের উদ্যোক্তারা এনসিসি ব্যাংকের কাছে নতুন করে ঋণ দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। তখন এনসিসি ব্যাংক এসএমই ফাউন্ডেশনের কাছে তিন কোটি টাকা ঋণ ছাড় করার জন্য আবেদন জানায়। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে এত দিন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এনসিসি ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ব্যাংকের চুক্তি নবায়নের একটি বিষয় রয়েছে। চুক্তিটি সম্পন্ন হলে সৈয়দপুরের গার্মেন্টস খাতে আরও বেশি পরিমাণে ঋণ দেওয়া যাবে। তিনি জানান, এখানকার উদ্যোক্তাদের লেনদেন ভালো। ৩৫ জন উদ্যোক্তা এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন এবং তা শতভাগ আদায় হয়েছে।
কেন এই ঋণ আটকে ছিল জানার চেষ্টা করা হলে গতকাল এসএমই ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বড় অঙ্কের ঋণ ছাড় করতে হলে পর্ষদ সভার অনুমোদন লাগে। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। সে কারণে এই ঋণের টাকা অনুমোদনও করা যায়নি, ছাড়ও হয়নি।
পোশাক প্রস্তুতে ভাটা: সৈয়দপুরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে এসব পোশাক কারখানা। তৈরি হয় ট্রাউজার, শর্টস, জ্যাকেট, টি-শার্ট, জিন্সের প্যান্টসহ নানা ধরনের পোশাক। স্থানীয় বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি এসব পোশাক রপ্তানি হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে।
সৈয়দপুরের উদ্যোক্তারা গরমের সময় শীতের পোশাক তৈরি করেন। আর শীতের পোশাক গরমকালে। যেন মৌসুিম পোশাক স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানিও করা যায়। তবে এবার শীতের পোশাক প্রস্তুত করতে হিমশিম খেয়েছেন তাঁরা। কারণ তাঁদের হাতে কাঁচামাল (ঝুট কাপড়) কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না।
বাবুপাড়ার এসআর গার্মেন্টেসের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান বলেন, ‘সময়মতো ঋণের টাকা পরিশোধ করেও আমরা নতুন ঋণ পাচ্ছি না। অর্থের অভাবে শীতের জ্যাকেট তৈরি করতে পারছি না। তাই বাজারও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।’
উদ্যোক্তাদের সংগঠন রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক গ্রুপ, সৈয়দপুরের তথ্য অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে সৈয়দপুর থেকে পাঁচ কোটি টাকার পোশাক ভারত, নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি করেছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, শীত মৌসুমে জ্যাকেটের চাহিদা বেড়ে যায়। রপ্তানি আদেশও ভালো আসে৷ এর ওপর ভিত্তি করেই এখানকার কারখানাগুলো ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু কারখানাগুলোতে ব্যস্ততা আগের চেয়ে অনেক কম।
http://www.prothom-alo.com/economy/article/232921/%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B0_%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A7%87_%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE_%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%96%E0%A6%AC%E0%A6%B0_%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87