রক্ষণ সামলানো এবং আক্রমণে শাণ দেওয়া দুটোতেই সমান পারদর্শী দানি আলভেজ। ব্রাজিল ডিফেন্ডার তাই বিশ্বকাপেও স্কলারির দলের বড় আস্থা। দেশের মাটির বিশ্বকাপ ঘিরে তাঁর প্রত্যাশা আর লক্ষ্যের কথা জানালেন ফোরফোরটু সাময়িকীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারেদানি আলভেজ
কনফেডারেশনস কাপ জয় কতটা আত্মবিশ্বাসী করেছে ব্রাজিলকে?
দানি আলভেজ: আমার মনে হয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেয়ে বেশি যেটা করেছে সেটা হচ্ছে সেলেসাওদের ওপরে ব্রাজিলিয়ানদের আস্থা বাড়ানো। আমাদের সামর্থ্য নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ ছিল, কনফেডারেশনস কাপ সেটা দূর করেছে। সমর্থকদের মনে সন্দেহ রেখে বিশ্বকাপে খেলতে নামাটা ঠিক হতো না। সেদিন থেকে এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি।
ফাইনালে বিশ্বসেরা দল স্পেনকে হারানোর অনুভূতি নিশ্চয়ই দারুণ ছিল...?
আলভেজ: অবশ্যই। সমর্থক এমনকি অনেক বোদ্ধাও মনে করেছিলেন স্পেনের মতো একটা দলের বিপক্ষে আমাদের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা দেখিয়েছি যে আমরা ব্রাজিলিয়ান। আমরা সমর্থকদের মন বদলে দিতে পারি। এটা এখন অন্য অনেক কিছুতেও প্রভাব ফেলবে।
তো সেই ফাইনাল নিয়ে কি পরে আপনার বার্সেলোনা-সতীর্থদের সঙ্গে কোনো রসিকতা হয়েছে?
আলভেজ: আরে না...৷ আমরা পরস্পরকে সম্মান করি। কনফেডারেশনস কাপ নিয়ে আমাদের মধ্যে খুব কমই কথা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে ক্লাব সতীর্থদের মুখোমুখি হওয়াটা দারুণ মজার ব্যাপার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ম্যাচের পর হয়তো আমরা এটা নিয়ে কিছু রসিকতা করি। এর বেশি কিছু নয়।
আপনার দুই সাবেক ও বর্তমান ক্লাব সতীর্থ স্যামুয়েল ইতো আর আলেক্স সংয়ের বিপক্ষে খেলতে হবে বিশ্বকাপে। ক্যামেরুনের বিপক্ষে ওই ম্যাচটা নিয়ে কি ওদের সঙ্গে কথা হয়েছে?
আলভেজ: অবশ্যই। ড্রয়ের পর আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি। দেশের সম্মানের জন্য লড়ব আমরা। তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে ক্লাব সতীর্থকে পাওয়াটা দারুণ ব্যাপার।
বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিলের চেয়ে ভালো স্বাগতিক আর কোনো দেশ কি হতে পারে?
আলভেজ: না। আমরা ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ উপহার দেব। ব্রাজিলিয়ানরা ফুটবল নিয়েই বেঁচে আছে, ওরা ফুটবল ভালোবাসে। আমরা এমন এক বিশ্বকাপ উপহার দেব যেটা পৃথিবীর কেউ কোনো দিন দেখেনি।
১৯৫০ বিশ্বকাপ আর মারাকানা ট্র্যাজেডি সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?
আলভেজ: আমি আমার দাদা-দাদির কাছে ওই ম্যাচের কথা শুনেছি। কিছু শুনেছি ওই ম্যাচে ব্রাজিলের গোলরক্ষক বারবোসার কাছেও। ব্রাজিলিয়ানরা সেই হারের জন্য বারবোসাকে শূলে চড়িয়েছে যেন সব দায় তারই ছিল। কিন্তু পেপ গার্দিওলার কাছে আমি শিখেছি, হার-জিত যাই হোক কখনোই তার দায় কিংবা কৃতিত্ব একজনের নয়।
গ্রুপ পেরোলেই আপনাদের স্পেন কিংবা হল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে...৷
আলভেজ: চিলি আর অস্ট্রেলিয়াকেও তো পেতে পারি (হাসি)! এটা বিশ্বকাপ এবং এখানে যেকোনো কিছুই হতে পারে। আপনি অনুমান করতে পারেন কিন্তু তার মানে এই না যে সেটাই হবে। তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে তো সেরা কোনো দলকে হারিয়েই জিততে হবে।
ধরুন, সেমিফাইনালে কিংবা ফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা...৷
আলভেজ: এর আগেই তো অনেক কিছু হতে পারে। আমি সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি যখন যারা সামনে আসবে তাদের নিয়ে ভাবতে চাই। আর এই বিশ্বকাপটা দারুণ প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে কারণ আগের সব বিশ্বকাপজয়ীই আছে এবার।
আপনি বিশ্বকাপ ছাড়া প্রায় সব শিরোপাই জিতেছেন ক্যারিয়ারে। বিশ্বকাপের মূল্য কতটুকু?
আলভেজ: বিশ্বকাপই হবে আমার মুকুটের তাজ। এটা ছাড়া আমার মুকুট সম্পূর্ণ হবে না। সব সময়ই আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপ জেতা। এটা জেতা ছাড়া ফুটবল ছাড়ার কথা ভাবতেই পারি না।
আপনাদের ওপর নিশ্চয়ই প্রত্যাশার বাড়তি চাপ?
আলভেজ: না, এটা ঠিক চাপ নয়। বরং আমার তো মনে হয় অন্য দলগুলোর ওপরেই চাপ থাকবে, কারণ ওরা আমাদের দেশে খেলতে আসছে, আমাদের দর্শকদের সামনে। আমরা প্রত্যাশা করছি সমর্থকেরা নেচে-গেয়ে আমাদের সমর্থন দেবে। এটা যদি হয় তাহলে তো আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
কোচ হিসেবে বিগ ফিলকে (স্কলারি) পেয়ে কি লাভ হয়েছে?
আলভেজ: তিনি দলের মানসিকতাটাই বদলে দিয়েছেন। দলের প্রতি ভালোবাসাটা এখন সবার অন্য রকম। স্কলারি শুধু দু-একজনকে নিয়ে ভাবেন না, পুরো দল নিয়ে ভাবেন। সবাই তাঁর পরিকল্পনার অংশ। আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। এটাই আমাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তি।
আপনার প্রথম বিশ্বকাপ স্মৃতি কী?
আলভেজ: ১৯৯৪ সালে যখন আমাদের দলটা শিরোপা জিতল, সেটা। আমার বয়স তখন ১১ এবং সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে দারুণ স্মৃতিগুলোর একটি। বিশ্বকাপ জেতার পর একজন ব্রাজিলিয়ানের অনুভূতি কেমন হতে পারে আমি সেবার তা টের পেয়েছিলাম।
আপনার ছেলেবেলার নায়ক কে ছিলেন?
আলভেজ: কাফু। সব সময়ই কাফু। তিনি যেভাবে শিরোপা জিতেছেন, একজন আক্রমণাত্মক রাইটব্যাক হিসেবে যেভাবে খেলেছেন সেটা আমার জন্য একটা বড় অনুপ্রেরণা।
কাফু, রবার্তো কার্লোস, মার্সেলো, ফিলিপে লুইজ—ব্রাজিলেই কীভাবে এত চমৎকার সব ফুলব্যাক তৈরি হয়?
আলভেজ: আমি আসলে ঠিক জানি না এটা। আমার মনে হয় বিশ্বের অন্য সব ফুলব্যাকের চেয়ে ব্রাজিলিয়ানদের খেলার ধরন একটু আলাদা। আমরা ফুটবলটাকে অন্য চোখে দেখি। আমাদের কাছে, সেই বড় ডিফেন্ডার যে ভালো আক্রমণ করতে পারে। শুধু হেড করে কিংবা রক্ষণ সামলে আমরা সন্তুষ্ট থাকি না। এটাই আমাদের খেলার ধরন। ব্রাজিলিয়ান ধরন।