ইতালির প্রাণভোমরা
আন্দ্রে পিরলো। ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী এই মিডফিল্ডারের ক্লাব ক্যারিয়ারও আলোয় ভরা। এসি মিলানের হয়ে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও দুটি সিরি ‘আ’ জেতা পিরলো গত তিন মৌসুমে জুভেন্টাসের সাফল্য-সারথি। তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে ব্রাজিলে যাওয়া ৩৫ বছর বয়সী ‘মিডফিল্ড জেনারেল’ ইংল্যান্ডে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে কথা বলেছেন বিবিসি রেডিও-৫-এর সঙ্গে। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে দেওয়া হলো
আন্দ্রে পিরলোlইংল্যান্ডের মতো দলের সঙ্গে খেলা কতটা কঠিন বলে আপনি মনে করেন?
আন্দ্রেয়া পিরলো: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলাটা সব সময়ই কঠিন। তবে বিশ্বকাপ হোক আর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, এই ম্যাচটায় আপনাকে চোখ রাখতে হবে। গ্রুপ পর্বে এটাই প্রথম ম্যাচ, তাই এটা কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ।
l২০১২ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে ইতালি। এবার কি অন্য রকম কিছু আশা করছেন?
পিরলো: গত দুই বছরে অনেক নতুন নতুন খেলোয়াড় এসেছে। আমরা ইংল্যান্ডের কাছ থেকে অন্য রকম কিছুই আশা করছি। এটা খুব কঠিন ও ভারসাম্যপূর্ণ একটি গ্রুপ। এখান থেকে পরের রাউন্ডে যেতে হলে অন্যদের চেয়ে ভালো করতেই হবে।
lপ্রতিপক্ষ হিসেবে স্টিভেন জেরার্ড সম্পর্কে কী ভাবেন?
পিরলো: সে গ্রেট খেলোয়াড়। অনেক বছর ধরেই সে শীর্ষ পর্যায়ে খেলছে। ইংল্যান্ড দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আমি নিশ্চিত, দারুণ একটা বিশ্বকাপই কাটাবে সে।
lইংলিশ ফুটবলে আন্দ্রেয়া পিরলোর মতো খেলোয়াড় তৈরি হয় না কেন? আপনি কী ভাবেন?
পিরলো: আমি জানি না কেন এমনটা ঘটে না। ইংল্যান্ডের খেলার ধরনটা ভিন্ন, অন্যদিকে আমার মতো ভূমিকা পালন করা খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি আবার একটু অন্য রকম। তবে ইংল্যান্ডেরও তো বড় বড় খেলোয়াড় আছে। তাই আমার মনে হয় না ‘পিরলো’ ধরনের খেলোয়াড়ের অভাব তাদের জন্য খুব বড় কোনো সমস্যা।
ইতালি সম্পর্কে বলুন। কারা আমাদের (ইংল্যান্ডের) জন্য হুমকি হতে যাচ্ছে, কারা চমক দেখাবে?
পিরলো: আশা করছি কেউ একজন আবির্ভূত হবেই। যখন কেউ ভূরিভূরি গোল করে ইতালিকে জেতাবে, সে যেই হোক সেটা কোনো ব্যাপার নয়৷
lওই লোকটা কি মারিও বালোতেল্লি হতে পারে?
পিরলো: সে ভালো ছেলে। তাকে শুধু মাঠে নিজের মূল্যটা বোঝাতে হবে। নিজের আসল খেলাটা দেখানোর জন্য বিশ্বকাপটা তার জন্য বড় সুযোগও।
lএবার পেনাল্টি নিয়ে কথা বলি। ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রথম পেনাল্টিটা আপনিই নিয়েছিলেন। যখন ফ্যাবিয়ান বার্থেজের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন, কী ভাবছিলেন?
পিরলো: কীভাবে পেনাল্টি মারব, ভাবছিলাম সেটাই। নিশ্চিত হতে চাইছিলাম যাতে (বলটা) ভেতরে ঢোকে। গোল করার পর মুক্তি পাওয়ার মতো অনুভূতি হলো। যেন একটা ভার নেমে গেল। বিশ্বকাপ ফাইনালে পেনাল্টি নেওয়া বেশ দায়িত্বপূর্ণ এক কাজ।
lএকবার বলেছিলেন, আপনার স্নায়ু কোনো ব্যাপার নয়। এটা কি আপনার জন্য খুব স্বাভাবিক?
পিরলো: হ্যাঁ। ভাগ্যক্রমে নিজেকে সবকিছু থেকে বিযুক্ত করতে ও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারি।
l২০০৬ ও ২০১৪ সালের আন্দ্রেয়া পিরলোর মানসিকতার পার্থক্য কোথায়?
পিরলো: আমার মানসিকতা ঠিক আগের মতোই আছে—জয়ী হতে সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া। কিছু বছর হয়তো গেছে কিন্তু ভালো করার ক্ষুধাটা আগের মতোই আছে।
lআপনার আত্মজীবনী ‘আই থিঙ্ক দেয়ারফোর আই প্লে’-তে ১৯৯০ বিশ্বকাপের কথা লিখেছেন। ওই বিশ্বকাপের কী মনে আছে আপনার?
পিরলো: মনে আছে বাড়িতে বসে বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে খেলা দেখতাম। ইতালির খেলা দেখার সময় খুব নার্ভাস থাকতাম।
lবিশ্বকাপে খেলার অনুভূতিটা কেমন?
পিরলো: আমি মনে করি, বিশ্বকাপে খেলাটা একজন ফুটবলারের সর্বোচ্চ অর্জন। ছেলেবেলায় যখন কেউ ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তখন থেকেই সবচেয়ে সুন্দর যে জিনিসটা হওয়া সম্ভব বলে সে মনে করে সেটা হলো বিশ্বকাপে খেলা।
আমি খুব ভাগ্যবান, আমি পেরেছি। আশা করছি, এবারও অভিজ্ঞতাটার স্বাদ পাব।