দুই হাতেই ‘ভিক্টরি’ চিহ্ন দেখাচ্ছেন সার্জিও আগুয়েরো৷ মুখে হাসি৷ মুখে স্মিত হাসি নিয়ে ঠিক পেছনেই লিওনেল মেসি৷ ডি মারিয়া-মাচেরানো-রোমেরো-জাবালেতা—সবাই হাসিখুশি৷ ব্রাজিলের বিমানে চেপে দলের সবার একটি ‘সেলফি’ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন স্ট্রাইকার এজেকিয়েল লাভেজ্জি৷ ক্যাপশন, ‘একসঙ্গে, একই স্বপ্ন নিয়ে!’ ফেরার সময়ও িক এই হাসি অটুট থাকবে মেসিদের?
ছবিতে হাসিমুখে থাকা মেসি জানেন, ফেরার পথেও সতীর্থদের এই হাসি ধরে রাখা নির্ভর করছে তাঁর ওপর৷ জাদুকরি ওই পা জোড়ায় চোখ গোটা আর্জেন্টিনার, বিশ্বময় আর্জেন্টিনার ভক্ত-সমর্থকের৷ মেসিদের বিমান যখন বুয়েনস এইরেস থেকে বেলো হরিজন্তের আকাশে, জানালা দিয়ে মেঘমালার দিকে তাকিয়ে মেসি হয়তো আরেকবার অনুভব করবেন, তাঁর কাছে প্রত্যাশাটাও ওই আকাশসমান!
সাম্প্রতিক অতীতের প্রতিটি বিশ্বকাপের মতো এবারও শীর্ষ ফেবারিটদের তালিকায় আর্জেন্টিনা৷ ২৮ বছরের শিরোপা-খরা ঘোচানোর স্বপ্নসারথি মেসিই৷ বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, প্রত্যাশার চাপটা ততই তীব্রভাবে অনুভব করছেন মেসিরা৷ চাপকে উপভোগ করার কারণ নেই৷ মেসিরা তা করছেনও না৷ বেলো হরিজন্তেতে আর্জেন্টিনার বেস ক্যাম্পের দুয়ারে আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশনের এক অতি উৎসাহী কর্মকর্তা একটি ব্যানার লাগিয়েছিলেন, ‘স্বাগত ভবিষ্যৎ চ্যাম্পিয়নরা৷’ মেসিসহ কয়েকজন ফুটবলার এতে বিরক্তি প্রকাশ করায় তৎক্ষণাৎ খুলে নেওয়া হয় সেই ব্যানার৷ স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচের পর আর্জেন্টিনার এক টিভি রিপোর্টার মেসিকে িজজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন লেখা ব্যানার নিয়ে ব্রাজিলে যেতে পারি?’ মেসির উত্তর ছিল, ‘আপনার যা খুশি নিয়ে যান, আমরা সবকিছু সহজভাবে নিচ্ছি৷’
‘সহজভাবে নিচ্ছি’ মানে চাপটাকে গায়ে লাগাতে চান না, মাথায় আর বুকে চেপে বসতে দিতে চান না৷ তবে চাইলেই তো আর হয় না৷ বিশ্বকাপ তো চাপেরই মঞ্চ৷ আর একজন মেসির কাছে বিশ্বকাপ মানে তো বিশ্বচাপ! চাপটা আরও বাড়বে জেনেই হয়তো মেসি আগেভাগে জানিয়ে রাখলেন, ‘লোকে রোমাঞ্চিত হবেই৷ আমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখাটাও দারুণ৷ তবে বিশ্বকাপ অভিযানকে দেখছি একেকটি পদক্ষেপ হিসেবে৷ একটি ধাপ এগিয়ে পরের ধাপ নিয়ে ভাবব৷ কারণ আমরা জানি, বিশ্বকাপ কতটা কঠিন, হতে পারে যেকোনো কিছুই৷’
একজনের কিন্তু ধারণা, এই কণ্টকাকীর্ণ পথে ঠিকই ফুল ফোটাতে পারবেন মেসি৷ সেই তিনি আবার যে-সে নন, আর্জেন্টিনার জার্সিতে সবচেয়ে বেশিবার মাঠে নামা ফুটবলার! সাবেক আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার হাভিয়ের জানেত্তি এখনই ট্রফি হাতে দেখতে পাচ্ছেন মেসিকে, ‘ক্লাবের পারফরম্যান্স দেশের জার্সিতে অনুবাদ করতে হিমশিম খেতে হয় অনেক ফুটবলারকেই৷ তবে এবার ইঙ্গিতটা স্পষ্ট যে ব্রাজিলে মেসির সেরাটা দেখা যাবে৷ বাছাইপর্বে ওর পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ৷ নেতৃত্ব ওর ভেতর থেকে বাড়তি কিছু বের করে এনেছে৷ দলকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করছে, নেতৃত্ব দিচ্ছে সামনে থেকে৷ আমি দেখতে পাচ্ছি, বিশ্বকাপটা ওর দুর্দান্ত কাটবে৷ ওর জন্য মঞ্চ প্রস্তুত৷ আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, এবার সময় আমাদের, ট্রফি হাতে দেখতে পাব মেসিকে!’ ওয়েবসাইট৷
ফেবারিটদের মধ্যে এবার অপেক্ষাকৃত সহজ গ্রুপ পেয়েছে আর্জেন্টিনা৷ বসনিয়া, নাইজেরিয়া, ইরানকে উড়িয়ে দিয়েই গ্রুপপর্ব উতরানোর কথা আলেসান্দ্রো সাবেলার দলের৷ তবে সাবেলা ভালোভাবেই জানেন, বিশ্বকাপের মতো আসরে পতনের কারণ হতে পারে আত্মতুষ্টি৷ স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর এ জন্যই বলেছিলেন, ‘আমি ভবিষ্যদ্বক্তা হতে চাই না৷ হ্যঁা, খুব কঠিন গ্রুপে হয়তো আমরা পড়িনি৷ কিন্তু শারীরিকভাবে শক্তিশালী কয়েকটি দলের বিপক্ষে খেলতে হবে আমাদের৷ আগে আমরা গ্রুপপর্ব উতরাতে চেষ্টা করব৷ বাকিটা ভাবা যাবে এরপর৷’
যাবতীয় অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখেই বলা যায়, সাবেলার এই কথা স্রেফ বিনয়৷ আর্জেন্টিনা কোচ বরং এখনই ভাবতে পারেন, দ্বিতীয় রাউন্ডের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ফ্রান্স নাকি সুইজারল্যান্ড?