এমন অনেক বিখ্যাত লেখক আছেন, সাহিত্যের বাইরে যারা ফুটবল অন্তঃপ্রাণ হিসেবেও পরিচিত। এর মধ্যে আলবেয়ার কামু, যিনি কী-না ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবলার এবং পরবর্তী সময়ে সাহিত্যে অবদানের জন্য পান নোবেল পুরস্কার। এমনই ৯ বিখ্যাত লেখকের ফুটবলপ্রীতির গল্প থাকছে এ আয়োজনে—

অ্যালবেয়ার কামু (১৯১৩-১৯৬০) : অ্যালবেয়ার কামু ফরাসি ভাষার জগৎখ্যাত লেখক এবং দার্শনিক। তিনিই একমাত্র ফুটবলার যিনি ১৯৫৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। কৈশোরে কামু রেসিং অ্যালজেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে গোলরক্ষক হিসেবে উত্তর আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন কাপে খেলেছিলেন। ফুটবলকে নিয়ে তার একটি জনপ্রিয় উক্তি— ‘আমি ফুটবলের কাছে ঋণী, কারণ নৈতিকতা ও বাধ্যবাধকতা বলতে আমি যা শিখেছি তা ফুটবলের কাছ থেকেই পাওয়া।’ সে সময় কামুর এই উক্তিটি বিভিন্ন টি-শার্ট ও ফুটবল পোস্টারে লেখা থাকতো।

জ্যঁ পল সার্ত্রে (১৯০৫-১৯৮০) : অস্তিত্ববাদী এই ফরাসি দার্শনিক ও লেখক ছিলেন ফুটবলের একজন অনুগত সতীর্থ। তার রচিত ‘ক্রিটিক অব ডায়ালেক্টিক্যাল রিজন’ বইটিতে তিনি হ্যারি রেডনাপের কথার মন্তব্য বলেছিলেন— ‘ফুটবলের মাঠে বিপরীত পক্ষের উপস্থিতিতে সবকিছুই জটিল হয়ে যায়।’

স্যার আর্থার কোনান ডয়েল (১৮৫৯-১৯৩০): আর্থার কোনান বিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনী ‘শার্লক হোমস’ এর লেখক। তিনিও ছিলেন একজন দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড়। সাউথসিতে থাকাকালীন তিনি সিউডোনিম এসি স্মিথের তত্ত্বাবধানে পোর্টসমাউথ অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল ক্লাবের গোলরক্ষক হিসেবে খেলতেন। এমনকি কোনান একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারও ছিলেন। তিনি মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে প্রথম শ্রেণীর দশটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলেন। ১৮৯৬ সালে ক্লাবটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। উল্লেখ্য, বর্তমান পোর্টসমাউথ অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে পূর্বের ক্লাবটির কোনো সম্পর্ক নেই।

অ্যান্থনি বার্জেস (১৯১৭-১৯৯৩) : অ্যানথনি বার্জেস ‘ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ বইয়ের লেখক। তিনিও ছিলেন ফুটবলের একজন ভক্ত। ফুটবলকে উদ্দেশ্য করে তিনি একটি উক্তি করেন— ‘সপ্তাহের পাঁচদিন কাজের জন্য, সপ্তম দিন প্রার্থনা করার জন্য, আর ষষ্ঠদিন শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য।’ ফুটবলপ্রেমীর এই লেখকের রয়েছে ফুটবল খেলা নিয়ে নানা ধরনের রচনা।

নিক হর্নবি: ছবিতে নিককে হাইবুরির সাবেক স্ট্রাইকার অ্যালেন স্মিথের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। নিক হর্নবি একজন ফুটবলপ্রেমী আর এই প্রেমের বশেই ফুটবল নিয়ে তিনি লিখেন ‘ফিভার পিচ’ বইটি। পরবর্তীতে এই বইয়ের কাহিনী নিয়ে একটি সফল চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।

রডি ডাওয়েল: আইরিশ লেখক রডি ডাওয়েলের বিখ্যাত বই ‘দি কমিটমেন্ট’। ১৯৬৭ সালে লীগ কাপ ফাইনালে চেলসি যখন টমি ডোচার্টির তত্ত্বাবধানে ছিল তখন থেকেই তিনি চেলসি’র সাপোর্টার। রডি ডাওয়েল তার বন্ধুকে বলেছিলেন ‘আমি ফাইনাল খেলাটি আমার বাবার সঙ্গে দেখছিলাম, আমার বয়স তখন আট অথবা নয়। সেদিন চেলসির খেলা আমার মন কেড়ে নিলো, আর তখন থেকে আমি চেলসিকে সাপোর্ট করা শুরু করলাম।’

জর্জ অরওয়েল (১৯০৩-১৯৫০) : বিখ্যাত ‘১৯৮৪’ এবং ‘অ্যানিম্যাল ফার্ম-এর লেখক, প্রাবন্ধিক জর্জ অরওয়েল ফুলবলকে বর্ণনা করেছেন ‘বিউটিফুল গেম’ হিসেবে। ‘দ্য স্পোর্টিং স্পিরিট’-এ তিনি জাতীয়তাবোধ এবং ফুটবলকে এক করে দেখান। তিনি লিখেন— ‘তুমি যদি তোমার অসুস্থ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিরাট তহবিল জোগাড় করতে চাও, তাহলে তুমি তা সফলভাবেই করতে পারবে ইহুদী-আরব, জার্মান-চেক, ভারতীয়-ব্রিটিশ, রাশিয়া-পোলিশ, ইতালি-যুগোস্নাভিয়ার মধ্যে ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে। প্রত্যেক খেলায় পাওয়া যাবে লক্ষাধিক দর্শক...ফুটবল ন্যায়ের জন্য তেমন কিছুই করতে পারে না।’

সালমান রুশদি : সালমান রুশদি নিজেকে টটেনহামের একনিষ্ঠ একজন ভক্ত হিসেবেই পরিচয় দেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ‘দ্য পিপুলস গেমস, দ্য অ্যাডুকেশন অব সকার ফ্যান’ শিরোনামে আট পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ লিখেন বিখ্যাত ‘নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকায়। যে প্রবন্ধে দুটি বিশেষ বিষয়ের উল্লেখ আছে। কেউ একজন তাঁকে জানিয়েছে, বিখ্যাত স্পুয়ার ম্যানেজার বিল নিকেলসন স্কটিস ছিলেন না, আর অন্যটি হলো মিউনিখ বিমান দুর্ঘনায়ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার মরেননি।

জুলিয়ান বার্নস: ২০১১ সালের ম্যান বুকার পুরস্কার বিজয়ী এই লেখক আজীবন লেইস্টার সিটি ফুটবল দলের ভক্ত ছিলেন। ২০০১ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন— ‘লেস্টারশেয়ার মানে হলো আমার শৈশব।’ ১৯৯৬ সালের স্টিভ ক্লারিজ ও ক্রিস্টাল প্যালেসের মধ্যকার ম্যাচটি ছিল তার জন্য স্মরনীয়।
- See more at:
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/295735.html#sthash.tUDoNv70.dpuf