রসুনের গুনাগুণ
রসুন, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য ঝাঁঝালো সবজি অনেক ক্ষেত্রেই বেশ উপকারী। ক্যাসার গবেষকদের মতে রসুন ও পেঁয়াজ নিয়মিত খেলে পুরুষরা প্রষ্টেট ক্যাসারের হাত থেকে রেহাই পেতে পারে। চীন দেশের গবেষকরা এ ব্যাপারে আরো উচ্চকিত। তারা বলেন, যারা প্রত্যহ ১০ গ্রামের অধিক পরিমাণে রসুন, পেঁয়াজ বা অন্যান্য ঝাঁঝালো স্বাদের সবজি খেয়ে আসছেন, তাদের প্রষ্টেট ক্যাসার হওয়ার ঝুঁকি যারা প্রত্যহ ০২ গ্রামের কম খাচ্ছেন তাদের অর্ধেক (৫০%)। ১০ গ্রাম পুর্ণ করতে ৩ কোয়া রসুন বা ১ চা-চামচ পেঁয়াজের কুচি খেতে হবে। এটি খুবই সহজ। রান্না করা রসুন বা পেঁয়াজ খেলে তা কম উপকারী হবে-এরুপ কোনো তথ্য আমাদের হাতে এখন পর্যন্ত আসেনি।
আগে আমরা জানতাম, রসুন জীবনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহ যুদ্ধ করার শক্তি জোগায়। তাছাড়া এরা রক্তের কোলষ্টেরল কমায় এবং সম্ভবত অন্যান্য ক্যাসারের বৃদ্ধির হার কমায়। ভারতীয় গবেষকরা আরো দাবি করেন, যারা প্রতিদিন রসুন খেয়ে আসছেন তাদের হৃৎপিন্ড হার্ট অ্যাটাকের পর কম ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং হৃৎপিন্ডের অপারেশনের পর তারা দ্রুত সেরে ওঠেন। মানুষ বাদে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রের রসুন খেলে রক্তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তবে বড়ি হিসেবে রসুন খেলে তা খুব ফলদায়ক হয় না।
আমাদের রান্নায় মসলার একটি অংশ রসুন। শুধু মশলা নয় এতে রয়েছে একশরও বেশি রাসায়নিক উপাদান। এ জন্য রসুনকে ‘বিস্ময়কর ওষুধ’ বলা হয়।
রসুনে আছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ভাইরাল, এন্টি ফাংগাল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন খেলে রক্তে কোলেস্টরলের পরিমাণ কমে যায়। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
রসুন ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী। রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রাখে। এটি দাঁতের ব্যথাও দূর করে।
১৯৮৯ সালে চীন ও আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট যৌথভাবে গবেষণা করে লক্ষ্য করে যেসব অঞ্চলের মানুষ রসুন, পেঁয়াজ বেশি খান এদের পাকস্থলী ক্যান্সারের হার ৪০ শতাংশ কমে যায়।
১৯৮৭ সালে ফ্লোরিডা ক্লিনিকের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, যারা নিয়মিত তিন সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন গ্রহণ করেছিলেন, তাদের রক্তের শ্বেতকণিকা, ন্যাচারাল কিলার সেলের সংখ্যা ও কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
রসুন খেলে মুখে দূর্গন্ধ হতে পারে। কাঁচা রসুন খাওয়া মাকরুহ তানজিহী। এ কারণে রান্না করে খেতে হয়। রসুন খুব বেশি খেলে অনেকের সামান্য পেটে ব্যাথা হতে পারে।
রসুনের উপকারিতার বিষয়টি চিকিসা বিজ্ঞানে দিন দিন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ভেষজ এই সবজিটির গুণের কথা মানুষ অনেক আগেইটের পেয়েছিল। বিশেষত বিজ্ঞানের জনক বলে পরিচিত হিম্পোক্রিটস মানবদেহের ক্যান্সার, ঘা, কুষ্ঠ সারাতে, রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও পরিপাকতন্ত্রের হজমজনিত সমস্যা দূর করতে রোগীদের রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। আধুনিক ভেষজ চিকিৎসকরাও সর্দি, কাশি, জ্বর, ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস, কৃমি, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য পরিপাকের সমস্যাসহ লিভার ও পিত্তথলির নানা উপসর্গ দূর করতে রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি মাঝারি সাইজের রসুনে এক লাখ ইউনিট পেনিসিলিনের সমান অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি অ্যামিবিক ডিসেনট্রি নির্মূলের ক্ষেত্রে রসুন বেশ কার্যকরী।
দেহের রোগ সংক্রমণ দূর করার জন্য একসঙ্গে তিন কোয়া রসুন দিনে তিন থেকে চারবার চিবিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। রক্তের চাপ ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য প্রতিদিন তিন থেকে ১০ কোয়া রসুন খেতে পারেন। তা ছাড়া রসুনের জল সেবন করতে হলে ছয়কোয়া রসুন পিষে এককাপ ঠাণ্ডা পানিতে ৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ভালোভাবে ছেঁকে রসুন জল সেবন করুন। উচ্চরক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে রসুনের ভূমিকা অপরিসীম।
রসুন কিভাবে খাবেন ?
রসুন খেতে হলে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে হবে। কারণ চিবিয়ে না খেলে রসুনের রাসায়নিক উপাদান এলিসিন নির্গত হবে না। কারণ এই এলিসিনই হচ্ছে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক। রসুনের এই অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষমতা কাজে লাগানোর জন্য কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়াই উত্তম।
সাবধানতা
যাদের শরীর থেকে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না, অতিরিক্ত রসুন খাওয়া তাদের জন্য বিপজ্জনক। কারণ, রসুন রক্তের জমাট বাঁধার ক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে। ফলে রক্তপাত বন্ধ হতে অসুবিধা হতে পারে। তা ছাড়া অতিরিক্ত রসুন শরীরে এলার্জি ঘটাতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রসুন না খাওয়াই উত্তম। রসুন খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে অস্বস্তি বোধ করলে রসুন খাওয়া বন্ধ রাখুন। শিশুকে দুগ্ধদানকারী মায়েদের রসুন না খাওয়াই ভালো। কারণ রসুন খাওয়ার ফলে তা মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুর পাকস্থলীতে ঢুকে শিশুর যন্ত্রণার কারণ ঘটাতে পারে।
Collect-
Everhealth longivity center