ঝুম বর্ষায় বগালেক/ Meghna observational rainfall

Author Topic: ঝুম বর্ষায় বগালেক/ Meghna observational rainfall  (Read 1474 times)

Offline imam.hasan

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 246
    • View Profile
সবুজ পাহাড়ে মেঘের আড়ালে হারিয়ে যেতে নেই মানা। বৃষ্টির মৌসুমে প্রকৃতি যেন তার সবটুকু রূপ ঢেলে দেয় বান্দরবানে। সবুজ গালিচার ওপর আপনার আগমনে যোগ হবে ভিন্নমাত্রা।বর্ষায় এক ভিন্ন রূপেই দেখা যায় এ পর্যটন শহরকে।

আমাদের দেশের ভ্রমণপিয়াসীরা ভ্রমণের জন্য শীত মৌসুমকে বেছে নেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না বৃষ্টির সময় পাহাড় ঘেরা জেলাটি যেন তার অন্য এক রূপের ডালি মেলে ধরে।  এ যেনো সবুজ কার্পেটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। যেদিকে দু’চোখ যাবে সবুজে সবুজে বর্ণিল এক নতুন সাজে ধরা দেবে আপনার কাছে।

অবিরাম বর্ষণের জলধারার পরশে পাহাড়ের বৃক্ষরাজি নব যৌবন লাভ করে। মেঘ আর পাহাড়ের সম্পর্কের কথা তো নতুন করে বলার কিছুই নেই। তবুও বলতে হয়, পাহাড়ের সাথে আকাশের সারি সারি মেঘ-ভেলার সম্পর্কের নতুন মাত্রা এনে দেয় এই বৃষ্টির সময়। তাই ভ্রমণের জন্য এ মৌসুমে বেছে নিতে হবে বান্দরবানকে।

পাহাড়ে ঘেরা জঙ্গল ও সাঙ্গু নদী দেখার জন্য বান্দরবানের  বগালেকে যাবো। পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা খাড়া খাদের ভয়ানক রাস্তায় যেতে যেতে পাশে আদিবাসীদের বাড়ি ছাড়াও পাহাড়ের নিচে তাকালে চোখে পড়ে সাঙ্গু নদী, বান্দরবান শহর আর চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। পথে পড়ে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি।

সাঙ্গু নদীর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে দেখতে জল কেটে কেটে আমদের নৌকা সামনে এগুচ্ছে। সাঙ্গু পাড়ে মাঝে মাঝে রয়েছে আদিবাসীদের জনবসতি। এছাড়া পুরোটাই পাহাড় আর নদীর অপূর্ব মিলন। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। একটু পরপরই দেখা যায় পাহাড়ের কোল থেকে নেমে এসেছে প্রাকৃতিক ঝর্না।

রুমা বাজার যাবার পথে আনসার ক্যাম্পে নাম নিবন্ধন করি আমাদের দলের। এরপর চান্দের গাড়িতে করে যাত্রাশুরু।

সকাল ৮টার দিকেই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে আমরা কাইক্ষ্যাংছড়ি পৌঁছে যাই। এখান থেকে রুমা যাবার জন্য বোট ভাড়া করি ১২০০ টাকায়। অবশ্য নৌকায় যেতে রুমা বাজার, ভাড়া হবে জনপ্রতি ৪০ টাকা। চাইলে বান্দরবান থেকে সরাসরি নৌকায় রুমা বাজার যাওয়া যায়। কিন্তু সেজন্য সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা। আর কাইক্ষ্যাংছড়ি থেকে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

আমরা যখন রুমা বাজার পৌঁছি তখন সকাল ১০টা। রুমা বাজারে স্থানীয় হোটেলে খাবারের পর্ব চুকিয়ে বগালেক যাবার জন্য তৈরি হই। তারপর গাইডসহ রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে গন্তব্যসহ নাম নিবন্ধন করে বগালেক যাত্রা করি।

রুমা থেকে বগালেক যেতে পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা-খাড়া খাদ আরও বেশি। কখনো ৭০ ডিগ্রি এঙ্গেলে রাস্তা পাহাড়ের ওপরে উঠে গেছে, আবার কখনো ঢাল বেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। ভয়ানক থেকে ভয়ানক বন-জঙ্গল রাস্তার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে পাশে কিছু আদিবাসীর দেখা মেলে। পায়ে হেঁটে যেতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগে। পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা পথে হেঁটে ওপরে উঠলেই বগালেক।

ওপরে ওঠার সময় হোঁচট খেয়ে পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে হাতে লাঠি নিয়ে খুব সাবধানে এগোচ্ছি, দুই বার বিশ্রাম নিয়ে থেমে থেমে ওপরে বগা লেকের চূড়ায় উঠতেই (২৭০০ ফুট) মুগ্ধ নয়নে আশপাশের পাহাড় ও আকাশে মিশে যাওয়া দেখতে পেলাম। আর ঠিক পেছনেই তিনটি পাহাড়ের কোলে বগালেকটি। এর পাশেই ছিমছাম সুন্দর একটি পাড়া বা গ্রাম।

কিছু লোক লেকের পানিতে গোসল করছিল। বগালেকে থাকার জন্য লামের বাসায় উঠলাম। থাকার জায়গায় আমাদের ব্যাগগুলো রেখেই লেকের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অসাধারণ স্বচ্ছ ও ঠাণ্ডা পানিতে এক ঘণ্টা সাঁতার কেটে ওঠার পর সন্ধ্যা নেমে এলো।

এখানে রাতের অন্ধকার খুবই ভয়াবহ কিন্তু  আকাশে চাঁদ থাকায়, স্নিগ্ধ অলোয় পুরো জায়গাটায় মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়। আমরা রাত ১১ টার দিকেই ঘুমোতে গেলাম।

সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করলাম। পাহাড়ে ও লেকের পাশে মেঘগুলো কুয়াশার মতো জমে রয়েছে। এতো সুন্দর, এ যেন অন্য ভূবন!

এবার আমরা দল বেধে  চিংড়ি ঝর্নার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। বগালেক থেকে ঘণ্টা খানিক হাঁটার পর খাড়া পাহাড় ও জঙ্গল ভেদ করে আমরা অবশেষে চিংড়ি ঝর্নার দেখা পাই। পথে আরও ৬-৭ টি ছোট ঝর্না ফেলে এসেছি, কিন্তু চিংড়ি ঝর্না অনেক বড়।

চিংড়ি ঝর্নার পরেই আছে তার চেয়েও বড় ঝর্না জাদিপাই এরপরই কেওকারাডং এর চূড়া। আমরা চিংড়ি ঝর্না দেখেই আবার বগালেকে ফিরে এলাম। তারপর বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রুমা হয়ে বান্দরবন শহরে আসতে আসতে আমাদের রাত হয়ে গেল। আবার সেই ব্যস্ত জীবন…

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।

Offline fatema nusrat chowdhury

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 313
    • View Profile
nice :)