ছোটরা বড়দের মতো না বুঝলেও তাদের ব্যাপক আগ্রহ আর সৃষ্টিশীল মনে অনেক কিছুই খেলা করে। তাই নতুন কোনো বিষয় তাদের মাথা থেকেও বেরিয়ে আসতে পারে। এমনকি তাদের এসব বিস্ময়কর বিষয় আবিষ্কারের জন্য অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি বা কোটি কোটি টাকাও লাগে না। এখানে জেনে নিন সাতটি দারুণ বিষয় যা শিশুদের মাথা থেকেই বের হয়েছে।
১. ব্রেইল :১৮২৪ সালে লুইস ব্রেইল ফ্রান্সের একটি স্কুলের ছাত্র ছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি ডটের মাধ্যমে অন্ধদের জন্য লিখা ও পড়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এখন তা গোটা বিশ্বের অন্ধদের পড়াশোনার পদ্ধতি বলে স্বীকৃত। মাত্র ৫ বছর বয়সে লুইস তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন।
২. ইয়ারমাফস : বিশ্বাস করা যায় যে শীতকালে দুই কান ঢাকতে যে ইয়ারমাফস ব্যবহার করা হয় তা আবিষ্কার করা হয় উনিশ শতকের পরে। মাত্র ১৫ বছর বয়সী মেধাবী চেস্টার গ্রিনউড এটি বানান। শীতে নিজের কান ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়াটা রীতিমতো ঘৃণা করতেন তিনি। ১৮৭০ সালে এই পণ্যটির পেটেন্ট করা হয় তার নামে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যদের জীবন বাঁচাতে সরবরাহ করা হয় 'গ্রিনউডস চ্যাম্পিয়ন ইয়ার প্রটেক্টরস'।
৩. পপসিকেল :দুর্ঘটনা বশেই এই দারুণ জিনিসটি বানিয়ে ফেলেন ১১ বছর বয়সী ফ্রাঙ্ক এপারসন। ১৯০৫ সালের এক প্রচণ্ড শীতের রাতে এপারসন একটি কাপে পাউডার মিক্স এবং পানি একটি কাঠি দিয়ে নাড়তে নাড়তে বারান্দার দিকে গেলেন তা মজা করে খাবেন বলে। অন্যদিকে মন চলে যাওয়ায় বা যে কারণেই হোক তিনি তা ভুলে রেখে আসেন বারান্দায়। পরদিন সকালে উঠে কাঠিসহ পুরো পানীয় জমাট অবস্থায় পাওয়া গেলো কাপে। আইসক্রিমের মতো কাঠিসহ পানীয়ের বরফ বের করে তিনি তা মজা করে খেতে লাগলেন। বাড়ির কেউ দেখে জিজ্ঞাসা করলে বললেন এটি এপসিকেল। ১৯২৩ এর দিকে তিনি নামটি পপসিকেল করলেন এবং নিজের নামে জনপ্রিয় খাবারটির পেটেন্ট করলেন।
৪. ট্রাম্পোলাইন :একটি গোলাকার ক্ষেত্রের ফ্রেমের ওপরে বাঁধা থাকে লাফানোর উপযোগী কাপড় বা রাবার। এর ওপরে নিশ্চিন্তে লাফাতে পারে ছোট থেকে বড়রা। জর্জ নিশেন নামে ১৬ বছর বয়সী এক জিমন্যাস্টের মস্তিষ্কে ঝড়ের ফসল আজকের ট্রাম্পোলাইন। সার্কাসে লাফালাফির জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিচে যে জাল টাঙানো থাকে সেখান থেকেই এই জিনিসটি বানিয়ে ফেলেন জর্জ। জাল টাঙানোর সেই কাটামোর ওপর তিনি বাঁধলেন একটি ক্যানভাস যার নাম দিলেন 'বাউন্সিং রিগ'। কয়েক বছর পর উন্নত সংস্করণ নিয়ে এটি একটি বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়।
৫. ম্যাগনেটিক লকার পেপার :শিশুদের বানানো জিনিসও যে প্রচুর অর্থ আনতে পারে তার প্রমাণ দিয়েছেন সারাহ বাকল। নিজের লকারে নকশাশোভিত পেপার প্রয়োজন যা চুম্বকের মতো লেগে থাকবে- এই দাবি নিয়ে তিনি গেলেন বাবার কাছে। তিনি ম্যাগনাকার্ড এর সিইও ছিলেন। কাজেই এটি বানানো কোনো সমস্যা ছিলো না তার। এটি বানানোর পর প্রথম বছরেই এক মিলিয়ন ডলারের পেপার বিক্রি হয়ে গেলো বাজারে।
৬. ক্রেয়ন হোল্ডার : মাত্র ১১ বছরের ক্যাসিডি গোল্ডস্টেইন নিজের প্রয়োজন মেটাতে বানিয়ে ফেললেন ক্রেয়ন হোল্ডার। মোমের তৈরি ক্রেয়ন দিয়ে আঁকিবুকির কাজ করার সময় তা মোছার জন্য ইরেজার বা ক্রেয়নের ভাঙা অংশগুলো গুছিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ক্যাসিডি। এই ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে তিনি বানান ক্রেয়ন হোল্ডার। এই আবিষ্কারের জন্য ২০০৬ সালে 'ইয়ুথ ইনভেন্টর অব দ্য ইয়ার' খেতাব পান তিনি।
৭. ওইনক-আ-সরাস :কচি মস্তিষ্ক থেকে যে শুধু আবিষ্কারই হয় তা নয়, এখান থেকে একটি ধারণারও জন্ম হতে পারে। ফ্যাবিয়ান ফার্নান্দেজ মাত্র ১২ বছর বয়সে এটি তৈরি করেন তিনি। পয়সা জমানোর পুরনো পিগি ব্যাংক থেকেই এই ধারণার জন্ম দেন তিনি। দারুণ এই অ্যাপের মাধ্যমে শিশুরা তাদের অর্থবিষয়ক যাবতীয় ব্যবস্থাপনার শিক্ষা পেতে পারে। শিশুদের মাঝে আর্থিক শিক্ষা দিতে এটি নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ফান্ডকৃত পদ্ধতি।
সূত্র : ইন্টারনেট