প্রযুক্তিবিদেরা এবার তৈরি করেছেন ডাকটিকিট আকারের নতুন ধরনের চিপ (ছোট্ট যন্ত্রাংশ)। এটি মানবমস্তিষ্কের আদলে একটি শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারের সমান গতিতে কাজ করতে পারবে বলে তাঁরা দাবি করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএম ও কর্নেল টেক এবং আরও কয়েকটি দেশের একদল গবেষক ‘ট্রুনর্থ’ নামের চিপটি গত বৃহস্পতিবার জনসমক্ষে প্রদর্শন করেন।
ট্রুনর্থের বিশেষত্ব হলো মানুষের মস্তিষ্কের আদলে এতে ১০ লাখ ‘নিউরন’ বা গণনাকারী একক রয়েছে। চিপের প্রতিটি নিউরনের সঙ্গে আরও ২৫৬টি নিউরন সংযুক্ত থাকবে। সেগুলো সম্মিলিতভাবে খুব কম বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কোনো দৃশ্য, ঘ্রাণ বা তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদন সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
আইবিএমের নেতৃত্বে মানবমস্তিষ্কের আদলে কম্পিউটার তৈরির প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী ধর্মেন্দ্র মোধা বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন গবেষণার পর নতুন যুগের উপযোগী করে চিপটি তৈরি করেছেন। মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সেরিব্রাল কর্টেক্সের গঠন অনুসারে ট্রুনর্থের নকশা তৈরি করা হয়েছে। এ চিপের কার্যক্ষমতা ২০০ জন মানুষের বার্ষিক সম্মিলিত কাজের সমান। তবে বাণিজ্যিকভাবে এটি সরবরাহ করতে আরও সময় লাগবে।
গবেষকেরা বলছেন, নতুন চিপটি তৈরির ফলে কম্পিউটার তথা তথ্যপ্রযুক্তির জগতে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটি স্বয়ংক্রিয় মোটরগাড়ি থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতে পারবে। স্মার্টফোনের আধুনিকায়নেও এর প্রভাব পড়বে। পূর্ববর্তী কম্পিউটারের নকশার তুলনায় নতুন চিপটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। মানুষের মস্তিষ্ক সারা শরীরে ছড়ানো স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। নতুন চিপটি একই প্রক্রিয়ায় নিউরনের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। ফলে ওয়াইফাই প্রযুক্তির মতো তারবিহীন কোনো প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব সংযোগব্যবস্থায় কাজ করতে পারবে এটি। এতে ব্যাটারি বা বিদ্যুৎশক্তি খরচও হয় খুবই অল্প, যা শ্রবণসহায়ক যন্ত্রের (হিয়ারিং এইড) সমতুল্য। তবে ট্রুনর্থের সঙ্গে বর্তমানে প্রচলিত কম্পিউটার প্রযুক্তির সরাসরি তুলনা করা যাবে না। কারণ, এ দুটো ভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষক রজিত মনোহর বলেন, আইবিএমের সঙ্গে বহু বছর গবেষণার পর তাঁরা এবার মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় সমান ক্ষমতার কম্পিউটার তৈরির উদ্যোগে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের আধুনিক গবেষণা প্রকল্প সংস্থা (ডিএআরপিএ)। এএফপি ।