বাঙালির কার্পণ্য

Author Topic: বাঙালির কার্পণ্য  (Read 1416 times)

Offline abdussatter

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 373
  • Test
    • View Profile
বাঙালির কার্পণ্য
« on: August 06, 2014, 04:14:40 PM »
বাঙালির স্বভাব-চরিত্র বড়ই আজব ধরনের। গবেষণার বিষয়ও বটে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ’ আমাদের বাংলা সাহিত্যের আরেকজন প্রবাদ পুরুষ শক্তিমান প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ রবীন্দ্রনাথের কথাকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেননি; তাই তিনি তাঁর প্রবচনগুচ্ছ বইতে লিখেছেন-‘মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।’ অন্য জায়গায় তিনি লিখেছেন-‘বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে।’ আরেকজন সব্যসাচী বিরলপ্রজ দার্শনিক ও মানবতাবাদী লেখক আহমদ ছফা - ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ নামে এক গবেষণাধর্মী বই লিখে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের দৃষ্টিতে যা গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দশটি মননশীল বইয়ের তালিকায় ৬ নম্বরে স্থান পেয়েছে। আর আহমদ ছফা’কে আপাদমস্তক সাহিত্যিক বলে মনে করেন আমাদের দেশের আরেক কৃতিমান লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। কোথায়ও পড়েছিলাম একদিন জাফর ইকবাল শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে তার ছেলেকে নিয়ে আসেন আগাগোড়া এক সাহিত্যিককে দেখাবেন বলে। সে ব্যক্তিটি হলেন আহমদ ছফা। কিন্তু আহমদ ছফা তখন ঘুমুচ্ছিলেন তাই জাফর ইকবাল তার ছেলেকে দেখাতে পারেননি। পরে আহমদ ছফা ঘুম থেকে উঠে নাকি তার লোকদেরকে বললেন, আমাকে ডাক দিলে না কেন? আহমদ ছফা তার বাঙালি মুসলমানের মন বইতে বাঙালি মনের চুলছেরা বিশ্লেষণ করেছেন।

কেউ বলে আমরা বাঙালি আবার কেউবা বলে আমরা বাংলাদেশী। আমি সে দিকে গেলাম না। তবে আমার দৃষ্টিতে আমরা প্রথমত বাঙালি দ্বিতীয়ত বাংলাদেশী। কারণ আমার লেখাটি সকল বাংলা ভাষাভাষী-সকল ধর্মের মানুষদের উপর লেখা। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ শুধু বাংলাদেশে আছে এমন নয়; আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের কলকাতা, আসাম, ত্রিপুরার একটা অংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাহলে শুধু বাংলাদেশ বললে বাঙালির সংজ্ঞা পুরোপুরি আদায় হয় না।

বাঙালির পুরো জীবনটাই যেন কেমন কেমন। চিন্তা-চেতনা, মনে-মননে, কর্মে ও শ্রেষ্ঠত্বে সে অনেক পিছনে পড়ে আছে। কারণ ধরলে অনেক কারণ, সকল কাজে তারা সন্দেহ খুঁজে। তাই মন-মানসিকতা আর কর্মে এখনও তারা বড় হতে পারেনি।

অন্য অনেক কিছুর মতো বাঙালির অনেক কিছুতে এখনো কার্পণ্যতা দেখা যায়। এই ধরুন:

১. ভালবাসতে কার্পণ্য : আমরা বাঙালিরা যেন ভালবাসতেও কার্পণ্য করছি। ভালবাসতে তো আর পয়সা লাগেনা যে আমি ফতুর হয়ে যাবো। কিন্তু বাঙালিকে সেটা কে বুঝাবে।

২. প্রশংসা করতে কার্পণ্য : বাঙালির আরেকটা অভ্যাস হলো তারা অন্য মানুষের সাফল্যকে গ্রহণ করতে পারে না। সে উল্টো তাকে হিংসা করে বসে।

৩. পড়ালেখায় কার্পণ্য : পড়ালেখা তো আমাদের বাঙালিদের কাছে বিষের মতো লাগে। একটা ছেলে যদি কোন রকম আইএ বা বিএ পাস করতে পারে তখন মা-বাবা বলেন, অনেক পড়ালেখা করেছো বাবা এবার একটা কিছু কর।

৪. হাঁটতে কার্পণ্য : আমরা বাঙালিরা স্বাস্থ্য সচেতন নই। আমরা আরাম প্রিয়। তাই বিশ মিনিটের পথ এক ঘন্টা জ্যামে আটকা পড়ে গাড়িতে করে গেলেও বিশ মিনিট পায়ে হেঁটে যেতে রাজি নই।

৫. হাসতে কার্পণ্য : রাসূল (স.) এর একটি হাদীস আছে-‘হাসি মুখে কথা বলা একটা সদকা।’ চীনা প্রবাদ আছে- ‘যে হাসতে জানে না তার দোকান দেয়া উচিত নয়।’ আমরা বাঙালিরা হাসলে উল্টো মুরব্বীদের বা সম বয়সী বন্ধুদের থেকে ধমক খেতে হয়।

৬. কথা বলতে কার্পণ্য : একে অপরের সাথে কথা বলতে পর্যন্ত কার্পণ্য করি।

৭. গাছ লাগাতে কার্পণ্য : বাপ-দাদার আমলের গাছ একে একে কেটে প্রয়োজন মিটালেও তার পরিবর্তে গাছ লাগাই না। এ কথা ভুলে যাই যে আমাদের ছেলে সন্তানদের জন্য আমরা কি রেখে যাচ্ছি। হাদীসে আছে গাছ লাগানো একটা সদকার কাজ।

৮. সম্মান দিতে কার্পণ্য : আমি অন্যকে সম্মান দেব কেন? আমি কি কম। এটা আমাদের বাঙালিদের মৌলিক স্বভাব। একটু পাওয়ারফুল জায়গা মতো আমরা যদি বসতে পারি তাহলে অন্য মানুষদেরকে তো আমরা মানুষই মনে করি না।

৯. বাগান করতে কার্পণ্য : ফুল মানুষের মনের চাহিদা মেটায়। মনে শান্তি আনয়ন করে। কিন্তু বাগান করা আজকে আমরা ছেড়ে দিয়ে একে অন্যের পিছনে লেগে শুধু শুধু তার বদনাম করছি।

১০. সালাম দিতে কার্পণ্য : হাদীস শরীফে আছে-যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দিবে সে অহংকার মুক্ত। সালাম দিলে একে অন্যের সাথে ভালবাসা আর পবিত্র সম্পর্ক তৈরী হয়। কিন্তু আজকাল আমাদের সমাজে কাউকে তেমন একটা সালাম দিতে দেখা যায় না। আর ঢাকা শহরে তো অপরিচিত কাউকে সালাম দিলে বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। একদিন পাবলিক লাইব্রেরীর সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় একজন মুরব্বী গোছের লোককে আমি সালাম দিই। মুরব্বীটি সালামের জবাব না দিয়ে আমার দিকে হা.. করে তাঁকিয়ে রইল। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উপরের দিকে চলে গেলাম। আর একটা কথা সত্য যে, আমরা বাঙালিরা কেউ যদি আমাদেরকে সালাম দেয়; তাহলে আমরা নিজেদেরকে বড় মনে করি।

১১. আদব দিতে কার্পণ্য : হিন্দুদের ক্ষেত্রেও সেম সেম অবস্থা। কারণ জাতে অমরা ভিন্ন হলেও রক্ত-মাংস আর ভাষার ক্ষেত্রে তো আর ভিন্ন নয়।

১২. আগ বাড়িয়ে কথা বলতে কার্পণ্য : আগ বাড়িয়ে আমরা একে অন্যের সাথে কথা বলি না। কারণ, আমি নিজেকে তার চেয়ে বড় মনে করি। এই হল বাঙালিদের বর্তমান হাল হাকিকত।

১৩. সৌজন্যতা দেখাতে কার্পণ্য : সৌজন্যতা তো আমরা ভুলেই যাচ্ছি বলা যায়। নিজেদেরকে নিয়ে অতটাই ব্যস্ত যে সৌজন্যতা দেখাবার সময় কোথায়।

১৪. জানার ক্ষেত্রে কার্পণ্য : শুধু খাও-দাও আর ঘুমাও এটা হলে আমরা বাঙালিরা তৃপ্ত। পৃথিবীর নতুন নতুন খবর সম্পর্কে আমরা বে-খবর যে আমরা যে বে-খবর সে সম্পর্কেও আমরা বে-খবর।

১৫. বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কার্পণ্য : বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমরা কার্পণ্য করছি। দেখা যায় যাকে আপনি বিশ্বাস করলেন সে আপনাকে দিল মস্ত বড় এক বাঁশ। তবুও বিশ্বাস করার মতো মানুষ যে নেই এমনটা কিন্তু নয়।

১৬. উচ্চাশার ক্ষেত্রে কার্পণ্য : আমাদের আশা অতি ছোট তাই আমরা বড় হতে পারি না।

১৭. গ্রহণের ক্ষেত্রে কার্পণ্য : একে অন্যকে সমাদরে গ্রহণ করতে আমাদের কার্পণ্য করতে দেখা যায়।

১৮. সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে কার্পণ্য : আমরা সকালে যা আয় করি দুপুরে তা খরচ করে ফেলি দুপুরের জন্য আর রাতের জন্য আমাদের কোন চিন্তাই মাথায় আসে না। প্রয়োজনে আগামীকাল উপোস থাকবো।

১৯. চিন্তার ক্ষেত্রে কার্পণ্য : বলা হয় যে জাতি চিন্তার ক্ষেত্রে বড় হতে পারে না সে জাতি কাজের ক্ষেত্রেও বড় হতে পারে না।

২০. কাজের ক্ষেত্রে কার্পণ্য : বাঙালিরা যে কোন কাজ করতে কার্পণ্য করে। যেমন: কোন কৃষকের ছেলে যদি বিএ পাস করে তখন সে আর কৃষি কাজ করে না। করলেও সমাজ তাদেরকে ভালো চোখে দেখে না।

২১. হাততালি দিতে কার্পণ্য : সে দিন এক শিল্পী পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান মিলনায়তনে গান পরিবেশন করছিল। একে একে দুটো গান গাওয়ার পরও দর্শক কোন হাততালি দেয়নি। কয়েকজন দিলেও তেমন আওয়াজ হচ্ছে না। শিল্পী তখন বললেন- বাইরের দেশে যখন অমরা গান গাই তখন হাত তালির জন্য আমরা গান পরিবেশন করতেই কষ্ট হয়। আর এখানে হাততালি চাইলেও পাওয়া যায় না। এই হলো বাঙালি দর্শকদের অবস্থা।

এভাবে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে আমাদের কার্পণ্য। আসুন আর কার্পণ্য নয়; এখন সময় এসেছে নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

By: সুহৃদ আকবর, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক
« Last Edit: January 20, 2017, 08:22:34 AM by abdussatter »
(Md. Dara Abdus Satter)
Assistant Professor, EEE
Mobile: 01716795779,
Phone: 02-9138234 (EXT-285)
Room # 610

Offline mahmud_eee

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 591
  • Assistant Professor, EEE
    • View Profile
Re: বাঙালির কার্পণ্য
« Reply #1 on: August 06, 2014, 08:18:12 PM »
interesting... ???
Md. Mahmudur Rahman
Assistant Professor, EEE
FE, DIU