ছোট রোবটগুলো প্রতিটি একই আকারের। চলতে পারে মৌমাছি বা পাখির ঝাঁকের আদলে দল বেঁধে। কাজও করতে পারে দশে মিলে।
এমন দলবদ্ধ রোবট তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। সেগুলো কারও সাহায্য ছাড়াই নানান কাজ করতে পারে। কাজের সুবিধায় এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রোবটের দলবদ্ধ অবস্থানেও রয়েছে বৈচিত্র্য। প্রায় এক হাজার রোবট থাকতে পারে তারা (স্টার) বা ইংরেজি ‘কে’ অক্ষরের মতো জটিল কোনো কাঠামোর আদলে।
রোবট প্রযুক্তির আধুনিকায়নে এটিই বড় ধরনের সর্বশেষ অগ্রগতি বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন হার্ভার্ডের ওই গবেষকেরা। উইপোকার দলবদ্ধ অবস্থানের অনুপ্রেরণায় কিলোবোটস নামের এই ‘রোবটদল’ তৈরি করা হয়েছে। এদের চলাফেরার ধরন অনেকটা পিঁপড়া বা মৌমাছির মতো। ভূপৃষ্ঠে যান্ত্রিক কম্পন ও অবলোহিত (ইনফ্রারেড) রশ্মির প্রবাহ ব্যবহার করে এরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
কিলোবোটসের কাজকর্মের ধরন হবে হাজার সদস্যের সেনাদলের মতো। দলের প্রতিটি রোবট লম্বায় মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার হবে। তবে এদের সম্মিলিত শক্তি উপেক্ষা করার উপায় নেই। হার্ভার্ড স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেসের কম্পিউারবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাধিকা নাগপাল বলেন, সমস্যা নিরসনের জন্য প্রাণীরা নিজে নিজে যেমন দলবদ্ধ হয়, সেই বৈশিষ্ট্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা নতুন ‘রোবট দল’ তৈরি করেছেন। প্রাণীদের এই ঐক্য অত্যন্ত মনোহর এবং তাদের প্রয়াস প্রায় অসম্ভব রকমের কার্যকর। একটা পর্যায়ে গিয়ে তাদের আর পৃথক করা যায় না; কেবল সম্মিলিত একটা অস্তিত্বকেই দেখা যায়।
সহজ নকশা বা ডিজাইনের কারণে রোবটগুলো কেবল পরস্পর থেকে তিনটি রোবটের দূরত্বে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু আগে থেকে তৈরি শৃঙ্খলাব্যবস্থার ফলে এ জন্য তাদের ওপর বাড়তি কোনো হস্তক্ষেপ না করলেও চলে। বিভিন্ন ধরনের কাজে এ রকম ‘রোবট দল’ ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তারা মাছের ঝাঁক বা পিঁপড়া সেনাদল যে রকমই কাজ করুক না কেন, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজে তাদের ব্যবহার করা যেতেই পারে। তাই গবেষকেরা আশা করছেন, সমাজের জন্য আশীর্বাদ হয়েই আসবে এই ‘রোবট দল’।
কিলোবোটস অনেকটা চলমান ট্রানজিস্টরের মতো কাজ করবে। সম্মিলিতভাবে তারা সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা তৈরি করে কাজ করবে। প্রতিটি রোবটে সংযুক্ত থাকবে ইনফ্রারেড সেনসর বা সংবেদী এবং একাধিক মোটর, যার সাহায্যে তাদের পায়ে পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় কম্পন তৈরি হবে। প্রতিটি অবস্থানে তারা ইনফ্রারেডের আলোকরশ্মি বা সংকেত ব্যবহার করে নিরবচ্ছিন্ন বার্তা পাঠাতে পারবে।
হার্ভার্ডের গবেষক মাইকেল রুবেনস্টিন বলেন, কোনো প্রাণীর ঝাঁকে পারস্পরিক সহযোগিতার বহু দিক রয়েছে—এককোষী অ্যামিবার ঝাঁক বা পোকামাকড় বা পশুপাখির পাল যা-ই হোক না কেন, সম্মিলিতভাবে তারা যেকোনো একটি কাজ যেভাবে সম্পন্ন করে, তা এককভাবে করে দেখানো প্রায় অকল্পনীয় ব্যাপার।
এই গবেষণাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) স্বচালিত ব্যবস্থা তৈরির পথে এক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অধ্যাপক নাগপাল বলেন, একসময় হয়তো লাখ লাখ স্বয়ংক্রিয় বা রোবটচালিত গাড়িকে আমরা সড়কপথে চলতে দেখব। তবে এ ধরনের প্রযুক্তিকে ইতিবাচক রূপ দেওয়াই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
এএফপি ও টেলিগ্রাফ।