মহা কবি আলাওল
জন্ম ১৫৯৭ সালে ফতেহাবাদ, যা চট্টগ্রাম জেলা জালালপুরে অবস্থিত। আর মৃত্যু ১৬৭৩ সালে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে আরাকানে। আরাকানের রাজার অশ্বারোহী সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। তাঁর কাব্যপ্রতিভার পরিচয় পাওয়া গেলে একসময় তিনি হয়ে পড়েন রাজসভার কবি। তাঁকে কাব্যচর্চায় বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন রাজার একজন প্রধান কর্মচারী, মাগন ঠাকুর।
আলাওল মধ্যযুগের একজন বাঙালি কবি। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর গতানুগতিক পরিসীমায় রোমান্টিক প্রণয়কাব্যধারা প্রবর্তনকারী হিসাবে মুসলমান কবিগণের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। এ সময়ে তারা আরবি ফার্সি ও হিন্দি সাহিত্যের বিষয়বস্তু ও ভাববৈচিত্র্য অবলম্বনে কাব্য রচনায় এক নবযুগ সৃষ্টি করেন। এপর্যায়ের কবিগণের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বিচারে কবি আলাওলকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়। আলাওল আরাকান রাজসভার অন্যতম কবি হিসাবে আবির্ভূত হলেও মধ্যযুগের সমগ্র বাঙালি কবির মধ্যে 'শিরোমণি আলাওল' রূপে শীর্ষস্থান অধিকারী। আরবি ফার্সি হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় তিনি সুপন্ডিত ছিলেন। ব্রজবুলি ও মঘী ভাষাও তার আয়ত্তে ছিল। প্রাকৃতপৈঙ্গল, যোগশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অধ্যাত্মবিদ্যা, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-ক্রিয়াপদ্ধতি, যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব চালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী হয়ে আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছন।
আলাওলের প্রধান কাব্য পদ্মাবতী, যা ছিল কবি মালিক মোহাম্মদ জায়সীর হিন্দি কাব্য পদুমাবৎ-এর অনুবাদ। এ কাব্য তিনি প্রায় তিন বছর সময়ব্যয়ে ১৬২৭ সালে শেষ করেন এবং আরাকানপতির আত্মীয় সৈয়দ মুসা'র উত্সাহে তিনি সয়ফল মুলুক ও বদিউজ্জামাল নামক পারস্য গ্রন্থ অনুবাদ করেন। মধ্যযুগের আরেক কবি দৌলত কাজীর অসমাপ্ত কাব্য শেষ করেন আলাওল, এর নাম সতীময়না। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যের মধ্যে রয়েছেঃ তোহ্ফা, দারাসেকেন্দারনামা প্রভৃতি।
Sarmin Sultana
Asst.Coordination Officer
BBA Program