অনেকেই ই-মেইল অ্যাকাউন্ট বা সামাজিক যোগাযোগ সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে পাসওয়ার্ড হিসেবে সহজ কোনো সংখ্যা বা কি-ওয়ার্ড [যেমন মোবাইল নম্বর, নিজের নাম] ব্যবহার করেন। অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য অধিকাংশ সময়ই অনলাইন ব্যবহারকারীরা খুব সহজ কোনো পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকেন। সাধারণ ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যাকাউন্টে সংক্ষিপ্ত পাসওয়ার্ড হিসেবে নিজের নামের সঙ্গে ১২৩৪ সংখ্যা কিংবা সেলফোন নম্বর ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এমন পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের পক্ষে অনুমান করা খুবই সহজ, যা কেবল দুর্বল পাসওয়ার্ডকেই ইঙ্গিত করে।
তবে পাসওয়ার্ড যত সহজ, তা তত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ পাসওয়ার্ড যত সহজ হবে, তা হ্যাক করা ততটাই সহজ।সম্প্রতি মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার হ্যাকাররা প্রায় ১২ লাখ ই-মেইল ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছে, যাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই হ্যাকিং সম্ভব হয়েছে দুর্বল পাসওয়ার্ডের কারণে। অনলাইনে যে কোনো সাইটে অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে প্রয়োজন ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড। এ অ্যাকাউন্টে থাকতে পারে নিজের অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। তবে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় যে পাসওয়ার্ডটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা আসলে কতটা নিরাপদ! এখানে মূল সমস্যা পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা। তবে এ ধরনের ঝামেলা থেকে ব্যবহারকারীদের মুক্তি দিতে বদলে যাচ্ছে পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ধারণা। আসছে নতুন পদ্ধতির পাসওয়ার্ড। অনলাইনে ই-মেইল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় গবেষণা সংস্থা গার্টনার কর্মকর্তা ড. অ্যান্ট অ্যালেন একটি সহজ পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। এ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন তিনি 'ফেসিয়াল রিকগনিশন' বা 'অথেন্টিকেশন বাই সেলফি'। এ পদ্ধতিকে বিশ্লেষকরা নতুন প্রজন্মের পাসওয়ার্ড হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বর্তমান সময়ের প্রায় সব প্রযুক্তি ডিভাইসেই মাইক্রোফেন, ক্যামেরা এবং ওয়েবক্যাম ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে যেখানে ব্যবহারকারী শুধু নিজ ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে ছবি তোলার মাধ্যমে নিজেই হতে পারেন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড। এ ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ডকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে ছবির পাশাপাশি কণ্ঠস্বরও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখানে ব্যবহারকারী প্রথমে গোপন পিন, ছবি এবং পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট কোনো শব্দ কণ্ঠে উচ্চারণ করে অ্যাকাউন্ট এবং নিজ প্রযুক্তি ডিভাইসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। এটি হবে তিন স্তরবিশিষ্ট পাসওয়ার্ড। ফলে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যে পদ্ধতিটি যে কোনো ধরনের পাসওয়ার্ডের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। ইতিমধ্যে স্যামসাং এবং অ্যাপল তাদের স্মার্টফোনে কণ্ঠ নিয়ন্ত্রিত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন। ফলে গার্টনার কর্মকর্তা উদ্ভাবিত পাসওয়ার্ডটিকে বলা যায় অ্যাপলের 'সিরি'র পরবর্তী ধাপের পাসওয়ার্ড।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীরা নিজ ফোনে নিজের ছবি তোলা অর্থাৎ সেলফির মতো করেই ছবি তুলবেন। আর এ ছবিই হবে অনলাইন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আরেক ধরনের পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, যার নাম ডিজিটাল পোর্ট্রেট। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যবহারকারী নিজের সেলফি তুলবেন। এরপর ছবির মধ্যে গোপনে ব্যবহারকারী কিছু চিহ্ন সংযুক্ত করবেন। পরে অ্যাকাউন্ট ওপেন করার সময় ছবির নির্দিষ্ট স্থানে সেসব গোপন চিহ্ন সঠিক জায়গায় বসিয়ে লগইন করতে হবে।
কণ্ঠ হবে পাসওয়ার্ড
দ্রুতই ব্যাংকিং সহায়তা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতে আসছে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা। এরই মধ্যে কিছু ব্যাংক মোবাইল ফোনে ব্যাংকিং সুবিধা চালুও করেছে। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়াই ফোনে অ্যাকাউন্টের টাকা লেনদেন করা নিরাপদ হবে না। তাই স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের মতো ডিভাইসে এমন অ্যাকাউন্টে লগইন করার ক্ষেত্রে কণ্ঠ নিয়ন্ত্রিত পাসওয়ার্ড ব্যবস্থা সহায়ক হতে পারে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী তার অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ড হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট কি_ওয়ার্ড বেছে নেবেন এবং তা স্ব-শব্দে উচ্চারণ করবেন। এ সময় ডিভাইসটি আগে সংরক্ষিত কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিলিয়ে অ্যাকাউন্টে প্রবেশের অনুমতি জানাবে।
ফিঙ্গার পাসওয়ার্ড
স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ নির্মিত হচ্ছে স্পর্শকাতর পর্দা। যেখানে অনলাইন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায় হাতের আঙুলের স্পর্শ। ডিভাইসের পর্দায় স্পর্শ করে নিজ হাতের নির্দিষ্ট আঙুলের স্পর্শের ছবি নিয়ে তৈরি করা হবে পাসওয়ার্ড এবং পরে লগইনের সময় এ স্পর্শের মাধ্যমেই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে হবে।
http://www.samakal.net/2014/09/02/83038