সোফা ও ঘরের অন্যান্য আসবাবে জমে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার করবেন? আপনার সেই কাজ করে দেবে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বা রোবট। যুক্তরাজ্যের একদল প্রযুক্তিবিদ তৈরি করেছেন ধুলোবালি পরিষ্কারের এ রকম একটি যন্ত্র। প্রযুক্তি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ডাইসন ১৬ বছর গবেষণার ভিত্তিতে প্রথমবারের মতো নিয়ে এসেছে মুঠোফোনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণের উপযোগী স্বয়ংক্রিয় বা রোবটচালিত একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার।
ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার কাজে এই রোবটচালিত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন’ আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাড়ির লোকজন ঘরের বাইরে থাকা অবস্থায়ও যন্ত্রটি মুঠোফোন বা স্মার্টফোনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থান বা আসবাব পরিষ্কার করে রাখতে পারবে। যন্ত্রটির রয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘোরার ক্ষমতাসম্পন্ন ‘চোখ’, যা ব্যবহার করে এটি ঘরের যেকোনো জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারবে।
রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটির নাম ডাইসন ৩৬০ আই। এতে ব্যবহার করা হয়েছে অবলোহিত (ইনফ্রারেড) রশ্মির সংবেদী (সেন্সর) এবং একটি শক্তিশালী ক্যামেরা লেন্স। যন্ত্রটির একেবারে শীর্ষে যুক্ত লেন্সটি নিজের অবস্থানকে প্রয়োজন অনুযায়ী ত্রিকোণ আঙ্গিকে পাল্টাতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গন্তব্য খুঁজে পাওয়ার জন্য বইয়ের শেলফ বা চেয়ারের মতো স্থির বস্তুর সহায়তা নেবে যন্ত্রটি। ক্যামেরাটি প্রতি সেকেন্ডে নির্দিষ্ট কক্ষের ৩০টি পর্যন্ত ছবি তুলতে পারে। এভাবে যন্ত্রটি কোথায় আছে, কোথায় যাবে এবং কোন স্থানে আরও কাজ বাকি আছে, সেসব নিরূপণ করতে পারে।
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার তৈরিতে মিয়েল, স্যামসাং ও এলজির মতো কয়েকটি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি অনুসরণ করলেও ৩৬০ ডিগ্রি ঘূর্ণনক্ষমতার ক্যামেরা সংযোজনে ডাইসনই প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র নির্মাতা বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তাদের তৈরি রোবটচালিত যন্ত্রটি বাজারের অন্য যেকোনো ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের তুলনায় বেশি ময়লা তুলতে পারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডাইসনের প্রতিষ্ঠাতা স্যার জেমস ডাইসন থলেবিহীন পরিষ্কারকযন্ত্র বা ক্লিনার এবং পাখাবিহীন বাতাসের যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য খ্যাত। তিনি বলেন, অধিকাংশ ভ্যাকুয়াম ক্লিনারই তাদের আশপাশের পরিবেশ দেখতে পায় না। এ কারণে তারা ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কারও করতে পারে না। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়েই সেগুলো বিক্রি করা হয়। কিন্তু তাঁদের প্রতিষ্ঠান ৩৬০ ডিগ্রি দেখার ক্ষমতাসম্পন্ন অনন্য যন্ত্র তৈরি করেছে। এটি সুনির্দিষ্টভাবে গন্তব্য স্থানটি চিহ্নিত করে কাজ করতে পারবে।
উচ্চক্ষমতার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি যন্ত্রটি কার্যকরভাবে ময়লা পরিষ্কার করে সত্যি সত্যিই মানুষের শ্রম অনেক বাঁচিয়ে দিতে পারবে বলে নির্মাতারা দাবি করছেন।
নতুন যন্ত্রটি দশমিক পাঁচ মাইক্রন আকারের ক্ষুদ্র কণা শনাক্ত করতে পারবে, যা কি না, একটি বিন্দুর (ফুলস্টপ) চেয়ে ৬০০ গুণ ছোট। এতে যুক্ত ব্রাশটি প্রসারিত করা যায়। কঠিন মেঝে থেকে শুরু করে কার্পেট পর্যন্ত স্থানে জমে থাকা সূক্ষ্ম ময়লা শনাক্ত ও পরিষ্কারের জন্য এতে কার্বন তন্তুপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
ডাইসন এখনো ওই রোবটচালিত ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের বাজারমূল্য নির্ধারণ করেনি। জাপানে আগামী বছর এটি বিক্রি শুরু করা হবে। ডাইসন ৩৬০ আই তৈরির গবেষণায় মোট দুই কোটি ৮০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড খরচ হয়েছে। এ প্রকল্পে ডাইসনের দুই শতাধিক প্রকৌশলী কাজ করেছেন। যন্ত্রটির ‘চোখ’ তৈরিতে বীজগণিত, সম্ভাব্যতার তত্ত্ব, জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতি সমন্বিতভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। ঘূর্ণনের প্রযুক্তিটি তৈরির কাজে ৩১ জন সফটওয়্যার প্রকৌশলী এক লাখ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেছেন।
Link:
http://www.prothom-alo.com/technology/article/318901/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A0%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%9F-%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0