৩৫ বছরে যা আয় করেছিলাম, সব গেছে! এই ক্ষতি অপূরণীয়।’
এ কথা বলে মনের খেদ ঝাড়েন কাজী মোহাম্মদ ইয়াহইয়া। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরের একজন ব্যবসায়ী তিনি। ওই নগরের অর্থনীতির ভিত বলে পরিচিত প্রসিদ্ধ শাল ও কার্পেটের (গালিচা) ব্যবসা করেন তিনি। এবারের মৌসুমি বন্যা সর্বনাশ ঘটিয়েছে তাঁর ব্যবসার। বন্যার কাদা আর পচাপানিতে হাতে বোনা শৈল্পিক শাল ও গালিচা দলাইমলাই হয়ে রীতিমতো পিণ্ড বনে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ইয়াহইয়ার মতো দুর্ভাগা এখন কাশ্মীরের ঘরে ঘরে। বলা হচ্ছে, শত বর্ষের মধ্যে এমন প্রলয়ংকরী বন্যা ওই এলাকায় আর হয়নি।
আজ এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মৌসুমি ভারী বৃষ্টির কারণে দেখা দেওয়া এই বন্যায় হিমালয় অঞ্চলসহ কাশ্মীরে সাড়ে চার শয়ের বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। এই বন্যা পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও অন্যান্য অঞ্চলেও বিস্তৃত হয়। এতে কয়েক শ গ্রামের হাজারো মানুষ আশ্রয়হীন হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। চলছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব। এতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বন্যার কারণে কাশ্মীরি শাল ও গালিচার ব্যবসায় বিশাল অঙ্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ইয়াহইয়া তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পশমিনা শাল বোনার জন্য যে উল রেখেছিলেন। সেগুলো পুরোটাই এখন কাদার পিণ্ডে পরিণত হয়েছে। বেশির ভাগ দামি গালিচা ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। শহরের কোথাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সেগুলো।
পশ্চিমা বাজারে কাশ্মীরি শালের ব্যাপক চাহিদা। তাঁতিরা কাঠের তাঁতে কয়েক মাস ধরে এই ঐতিহ্যবাহী শাল বুনে থাকেন। এ কষ্ট সার্থক হয় মোটা অঙ্কের অর্থ প্রাপ্তির মাধ্যমে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রায়ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এ জন্য কাশ্মীরে রয়েছে শাল ও গালিচার বিশাল বাজার। বন্যার পানি প্রায় সব দোকান ও প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ায় এসব শাল-গালিচা ব্যাপক পরিমাণে নষ্ট হয়ে গেছে।
এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা কীভাবে, কত দিনে পূরণ হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। এ ব্যাপারে ৫৫ বছর বয়সী ইয়াহইয়া বলেন, ‘এই ক্ষতি এক বছরেও পূরণ হতে পারে, আবার ৫০ বছরও লেগে যেতে পারে। সব আল্লাহর ইচ্ছা।’