লাহোর থেকে বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিঃ

Author Topic: লাহোর থেকে বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিঃ  (Read 1176 times)

Offline Mohammad Nazrul Islam

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 184
  • Test
    • View Profile
লাহোর থেকে বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিঃ
বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলঃ
প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলের শেষের দিকে বিচারপতি কে.এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং বিচারপতিদের বয়সবৃদ্ধি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগসহ সকল বিরুধীদলই এই সিদ্ধান্তকে ন নাকোচ এবং বিচারপতি হাসানের বিরুদ্ধে অতীতকালে বি.এন.পির রাজনীতির অভিযোগ আনেন। এরই মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া বিচাপতি মোঃ আব্দুল আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষনা দিলে বিরুধী  দলীয় রাজনৈতিকদের  আন্দোলনে ‘ঘি’ ঢালার সমজ্ঞাপন হয়। এদিকে ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের কর্মকান্ড এবং উগ্র বি.এন.পি পন্থ নেতা-কর্মীদের অসহিঞ্চু আচারনে বিরুধীদল ও বুদ্ধিজীবিসহ সকল শ্রেনীর মানুষের মনে হতাশা বৃদ্ধি পায়। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি এবং বিরুধী দলীয় নেতাকর্মীদের গন-গ্রেফতার, শান্তিপূর্ন মিছিলের উপর পুলিশের ব্যাপক লাঠি চার্জ ও নির্যাতনের ফলে শেষ পযর্ন্ত সরকার গন-রুশের কবলে পড়ে।
এ-দিকে প্রধান বিরুধীদল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতি কে. এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদ গ্রহনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অবিশ্বাস্য নাটকীয়তার ঘটনা ঘটে। এই নাটকীয়তার ঘুরপাকেই ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়াকে বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ  করেন
২৮ অক্টোবর ডঃ ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদ নিজেকে প্রধান উপদেষ্ঠা ঘোষনা করে ২৯ অক্টোবর শপথ ঘোষনা করেন। ৩১ অক্টোবর তিনি ১০ জন উপদেষ্ঠা নিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঘোষনা দেন। তার উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্যবৃন্দ হলেন-
১.   ডঃ আলী আকবর খান।
২.   লেঃ জেঃ (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরী।
৩.   বিচারপতি ফজলুর হক।
৪.   সি.এম. সামি।
৫.   এম  আজিজুল হক।
৬.   ধীরাজ কুমার নাথ।
৭.   সুলতানা কামাল।
৮.   মাহ্বুবুর আলম।
৯.   সুফিয়া রাহমান।
১০.   ইয়াসমিন মুশের্দ।
উপদেষ্ঠা পরিষদ গঠনের অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই বি.এন.পির পক্ষপাত দুষ্টের কারনে প্রধান উপদেষ্ঠার সাথে অন্যন্য উপদেষ্ঠার মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। ২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্ঠার প্রতি আঙ্গুল নির্দেশ করে সর্বজন শ্রদ্ধেয় উপদেষ্ঠা ডঃ আলী আকবর খান, সি.এম সামি, সুলতানা কামাল এবং লেঃ জেঃ (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ করেন। তাদের পদত্যাগের সাথে সাথে প্রধান উপদেষ্ঠা ডঃ ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদ কাল বিলম্ব না করে কতিপয় বির্তকীতদের উপদেষ্ঠা নিয়োগ করলে জনমনে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। ঠিক এই সময়টিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোট-প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নতুন ত্র“টিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রনয়ন এবং বিভিন্ন প্রকার অসম্পূর্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের লক্ষ্যে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ‘মহাজোট’ গঠন করেন। মহাজোট গঠনে ডঃ কামাল হোসেন  অসামান্য অবদান রাখেন। কর্নেল অলি আহম্মদ, ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধূরী, হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রমুখ-নেতৃবৃন্দ দলবলসহ মহাজোটে যোগদান করেন। গঠনের পরপরই মহাজোট তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে  একের পর এক হরতাল- অবরোধ দিতে থাকলে সরকার বাধ্য হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম,এ আজিজকে ছুটিতে পাঠিয়ে বিচারপতি মাহফুজুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন।
ডঃ ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুষ্ঠ ভোটার তালিকা প্রনয়ন না করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেন এবং একই সাথে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ.এম এরশাদকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনা করেন। ফলে মহাজোট এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং ৩রা জানুয়ারীর নির্বাচন বর্জনসহ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রদান উপদেষ্ঠা যৌথভাবে দ্বিতীয় দফা তারিখ অনুসারে ২২ জানুয়ারী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে তাদের দৃঢ় ও অনঢ় অভিমত ব্যাক্ত করেন। মহাজোটের নির্বাচন বর্জনের ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন ‘তাদের এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষনায় আমি হতাশ নই; বরং উল্লাসিত। সব সময় আমি উল্লাসিত থাকতে পছন্দ করি। ২২ জানুয়ারী নির্বাচন হবেই হবে’।
৪ জানুয়ারী মহাজোট নেতৃবৃন্দ এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষনা করেন ত্র“টিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন, প্রধান উপদেষ্ঠার পদত্যাগ ব্যতীত মহাজোট নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে না। মহাজোট নেত্রী শেখ হাছিনা ৫ জানুয়ারী সারা দেশে বিক্ষোভ এবং ৭ ও ৮ তারিখে পূর্বঘোষিত অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষনা দেন। তিনি আরও বলেন ‘এর পর দাবি মানা না হলে, ডঃ ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদ পদত্যাগ না করলে, বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচী দেওয়া হবে। এদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সকল দলের অংশ গ্রহন নিশ্চিতের দাবি জানান। এইরুপ পরিস্থিতিতে গাজীপুরে এক দলীয় সম্মেলনে খালেদা জিয়া ‘দেশকে সংবিধান সংকট থেকে রক্ষা করার জন্য নির্বাচনকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে শেখ হাছিনাও মহাজোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা করেন। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এইরুপ পরিস্থিতিতে ৫ জানুয়ারী গন-গ্রেফতার শুরু করেন। ৬ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি নির্ধারীত সময়েই নির্বাচনের ঘোষনা দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানোসহ সেনাবাহিনীর সহায়তায় তা সারা দেশব্যাপি পাঠানোর  নির্দেশ দেন। ফলে সমগ্র দেশব্যাপী এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের আশংঙ্খা দেখা দিলে এফ.বি.সি.সি আই দেশব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষনার দাবি জানান। সরকারও গন-গ্রেফতারের অটল থাকেন। বি.এন.পির নেতৃত্বাধীন ৪দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট পরস্পর বিরুধী বক্তব্যসহ বিভিন্ন সমাবেশ, মিছিল, মিটিংয়ে একের অপরের প্রতি বিষাদাগার করতে থাকেন। ৭ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট  ঢাকা অবরোধের ডাক দিলে দেশের অধিকাংশ জনগন তাদের সাথে একাত্ম ঘোষনা করে। ডঃ ইয়াজ উদ্দিনের  তত্ত্বাবধায়ক সরকারও অবরোধের বিপক্ষে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা দেন। এতদ্ব্য সত্যেও  অবরোধে পুরো ঢাকা- সারাদেশ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে। মহল্লা  মহল্লায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের সাথে পুলিশের সংর্ঘষ শুরু হয়ে যায়। ৮ জানুয়ারী পরিস্থিতি মারাত্বক আকার ধারন করে। ফলে আন্দোলনরত জনতার উপর পুলিশ ব্যাপক লাটিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। শহীদ নূর হোসেন চত্বরে মহাজোটের এক সমাবেশে তোফায়েল আহম্মদ, রাশেদ খান মেনন, নূরুল ইসলাম নাহিদ, হাসানুল হক ইনু, দীলিপ বড়ূয়াসহ অনেক নেতার উপর পুলিশ নির্বিচারে লার্ঠি চার্জ করে। এই রুপ পরিস্থিতিতে  আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আান্ডার সেক্রেটারী নিকোলাস বার্নস প্রধান উপদেষ্ঠাকে সব দল নির্বাচনে অংশ গ্রহনে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের আহব্বান জানান। ৯ জানুয়ারী বেশ কিছু পশ্চিমাদেশ এক দরফা নির্বাচন এড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠলেও সেনাবাহিনী পরোয়ানা ছাড়াই গন-গ্রেফতার চালিয়ে যায়।
১০ জানুয়ারী অবরোধ কর্মসূচীর শেষ দিনে পল্টনের এক বিশাল জনসভায় শেখ হাছিনা, ডঃ কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধূরী, কনের্ল (অব:)অলি আহাদ, এইচ. এম এরশাদ ঐক্যমতে ২২ জানুয়ারীর নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষনা দেন। সেই লক্ষ্যে ১৪, ১৫, ১৭, ও ১৮ই জানুয়ারী দেশ ব্যাপী সবার্ত্মক অবরোধ এবং ২১ ও ২২ জানুয়ারী দেশব্যাপী হরতালের ঘোষনা দেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও পরিস্থিতি আচর করে (এন.ডি.আই, কমনওয়েলথ ও ইইউ) এক যোগে নির্বাচন  পর্যবেক্ষনের আস্বীকৃতি জানায়।
এই পরিস্থিতিতে কুমিল্লার চান্দিনায় এক জনসভায় বি.এন.পি তথা ৪দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্পষ্ট ঘোষানা করেন ‘যে কোন মূল্যে ২২ জানুয়ারী নির্বাচন হতে হবে। দেশের এইরুপ ভয়ন্কর পরিস্থিতিতে ও আন্তজার্তিক চাপের মুখে ১১ জানুয়ারী বিকেল সাড়ে চারটায় প্রধান উপদেষ্ঠা প্রফেসর ডঃ ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদ প্রধান উপদেষ্ঠার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং রাষ্ট্রপতি হিসাবে সমগ্রদেশে জরুরী অবস্থা জারি করেন। ১২ জানুয়ারী থেকে সগ্রমদেশ ব্যাপী জরুরী অধ্যাদেশ আইন কার্যকর হলে অন্যান্য উপদেষ্ঠাবৃন্দ পদত্যাগে বাধ্য হন। (চলবে---)
« Last Edit: September 25, 2014, 03:53:09 PM by Mohammad Nazrul Islam »