হাজার টাকার গরু, তাজা বিষে লাখ!ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর- স্বাভাবিক খাবার খেয়ে যে গরুটি বেড়ে ওঠে তার দামই বা কতো? ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বা তার একটু বেশি। কিন্তু এ গরুকে হাজার টাকার একটি ইনজেকশন দিয়ে মোটাতাজা করে লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। ঈদ উপলক্ষে গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা সেই কাজটি করছেন বেশি করে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে- স্টেরয়েড, কোর্টিসল, ডেক্রামিথাসন, হাইড্রোকর্টিসন, বিটামিথাসন ও প্রেডনিসলনের মতো মারাত্মক হরমোন ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এসব ওষুধ এতোটাই মারাত্মক যে আগুনেও এর ক্ষতিকর প্রভাব নষ্ট হয় না। ফলে এসব গরুর গোশত রান্নার পরও ওষুধের প্রভাব থেকে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, স্টেরয়েড ব্যবহারে মানুষের কিডনি, লিভার, চোখ, যৌনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে আসে। পশু বিশেষজ্ঞরা জানান, খামারিরা দ্রুত মোটাতাজা করতে গরুকে সহ্যের ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ওষুধ প্রয়োগ করেন। ফলে গরুর দেহে অতিরিক্ত পানি জমে তার শরীর দ্রুত বেড়ে ওঠে। এসব গরুর মাংস খেলে মানব দেহে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। জানা গেছে, এ ধরণের ওষুধ ব্যবহারে গরুর চামড়ার ভেতরে বাড়তি পানি ও চর্বি জমে।
ফলে গরুকে অনেক মোটা ও তাজা দেখায়। বাহ্যিকভাবে গরুর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলে। এতে গরু মোটা হলেও গোশত ওজনে কম ও স্বাদহীন হয়ে পড়ে। জবাইয়ের পর গোশতে জমাট রক্ত, কালচে দাগ দেখা যায়। মাংসে অতিরিক্ত পানিও থাকে। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে অতিরিক্ত লাভের আশায় কিছু খামারি ও ব্যবসায়ী বাড়ন্ত, অল্পবয়সী, চিকন ও কঙ্কালসার গরু কিনে হরমোন, ইনজেকশন ও ট্যাবলেট খাইয়ে মোটাতাজা করে বিক্রি করেন। জান গেছে, ডেক্সমেথাসন বা ওরাডেক্সন স্টেরয়েড-জাতীয় ট্যাবলেট দিয়ে ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে গরু মোটাতাজা করা হয়। এসব ওষুধ চোরাই পথে তা বাংলাদেশেও আসে। দামও তুলনামূলক কম। প্রতিদিন পশুকে ৫ থেকে ৭টি করে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। এতে মাত্র আল্প কয়েক দিনেই গরু অতিমাত্রায় মোটা হয়ে ওঠে। এসব গরুর মাংশ তুলনামূলক স্বাদ কম। মাংসও হয় অনেক কম। এ ধরণের গরু সুন্দর ও মোটাতাজা দেখায় বলে গ্রাহকরা অধিক দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
পাশাপাশি এর মাংস খেয়ে কঠিন ঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। তবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোরবানি পশুর হাটগুলোতে কোনো প্রচারণা দেখা যায় না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রচারণা না থাকায় আসন্ন কোরবানি ঈদেও গ্রাহকরা প্রতারিত হতে পারেন। এই অবস্থায় কোরবানির জন্য ছোট ও চিকন পশু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিষেজ্ঞরা। পাশাপাশি যেসব পশু অতিরিক্ত মোটা, নড়াচড়া করে না, মুখ দিয়ে অস্বাভাবিক লালা ঝরে, স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না, সার্বক্ষণিক শরীরে ভেজা কাপড় দিয়ে রাখতে হয় এমন পশু কেনা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তারা। এদিকে পশুর শরীরে হরমোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ বিষয়ে একটি আইনও আছে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। এ আইন কার্যকর করা সম্ভব হলে হরমোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে।
- See more at:
http://www.deshebideshe.com/news/details/40861#sthash.77FPyx1v.f4ltmlXF.dpuf