তিন ইঞ্চি কেটেই হৃদয়ের মেরামতি

Author Topic: তিন ইঞ্চি কেটেই হৃদয়ের মেরামতি  (Read 860 times)

Offline faruque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 655
    • View Profile
তিন ইঞ্চি কেটেই হৃদয়ের মেরামতি



এ যেন অনেকটা হার্টের সমস্যা মেটাতে ল্যাপারোস্কোপি! শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টা সত্যি। বুকে বড়সড় কাটাছেঁড়া না করে কীভাবে বাইপাস সার্জারি করা যায়, গত কয়েক বছর ধরে তার চর্চা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। পশ্চিমবঙ্গেও হালে এই ধরনের মিনিমালি ইনভেসিভ বাইপাস সার্জারি (মিকাস) হচ্ছে। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম। আর হলেও একটি-দুইটির বেশি গ্রাফট হচ্ছে না। শুক্রবার দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে তিন ইঞ্চিরও কম কেটে তিনটি গ্রাফটের বাইপাস সার্জারি হয়েছে, যেটিকে পূর্বাঞ্চলের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখানো বলেই দাবি করছেন ওই হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, এত কম কাটাছেঁড়ায় এমন জটিল অস্ত্রোপচার বহু রোগীকেই আশার আলো দেখাবে।

কার্ডিওথোরাসিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখন এই মিকাস-কেই বেছে নিতে চান রোগী ও চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। কারণ এতে রোগীর হাসপাতালে থাকার মেয়াদ খুব কম। যন্ত্রণাও কম। আর রক্তপাত হয় না বললেই চলে। সংক্রমণের ভয়ও নামমাত্র। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মিকাস-এর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শল্য চিকিৎসকের যথেষ্ট দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। তা না থাকলে অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম।

এ দিন দুর্গাপুরের ওই হাসপাতাল মিশন-এ ৬০ বছরের শ্যামলাল প্রজাপতির মিকাস হল। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা শ্যামলালবাবু বছরখানেক হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। গত কয়েক মাস তাঁর কষ্ট খুবই বেড়ে গিয়েছিল। ওই হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সত্যজিৎ বসু বলেন, শ্যামলালবাবুর বাঁ দিকের প্রধান ধমনীতে ৯০ শতাংশ ব্লক ছিল। অতটুকু অংশ কেটে সেই ব্লক দূর করা বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু আমরা তা পেরেছি। মিকাস-এর মাধ্যমেই তিনটি গ্রাফট করা হয়েছে। মাত্র ২.৭৫ ইঞ্চি কাটা হয়েছিল।

অস্ত্রোপচারের কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগী স্থিতিশীল। দুই দিন পর বাড়িও ফিরে যাবেন। সত্যজিৎবাবু বলেন, “সাধারণভাবে বাইপাস সার্জারিতে আট থেকে ৯ ইঞ্চি কাটতে হয়। সপ্তাহখানেক বা তারও বেশি হাসপাতালে থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে কোনোটাই খাটছে না। বুকের নিপল-এর নিচে সামান্য কাটতে হয়েছে।” চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাইপাস সার্জারিতে বুকের হাড়ের অনেকটা অংশ কেটে অস্ত্রোপচার করে তার দিয়ে জোড়া হয়। ফলে বুকে ব্যথা তো থাকেই। পাশাপাশি অনেকটা অংশে স্থায়ী দাগও থেকে যায়। মিকাস-এর ক্ষেত্রে সে সব সমস্যা নেই। মহিলাদের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের কিছু দিন পরে দাগ আর বোঝাও যায় না।

কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, যাঁদের বাইপাস সার্জারি হয়, তাঁরা কষ্টটা হাড়ে হাড়ে বোঝেন। আক্ষরিক অর্থেই সেখানে হাড়ের যন্ত্রণাটা মারাত্মক। মিকাস-এ সেটা থাকে না। খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন রোগী। কিন্তু সব ক্ষেত্রে কি মিকাস করা সম্ভব? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তা সম্ভব নয়। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, যদি দুই দিকের ধমনীতেই ব্লক থাকে, তা হলে মিকাস করে দু‌ই দিকের ব্লক সরানো সমস্যা। সে ক্ষেত্রে একদিক করে তার পরে আবার অন্যদিকটা করতে হয়।

কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার বলেন, এনজিওপ্লাস্টির ক্ষেত্রেও তো কম কেটে স্টেন্ট বসানো হয়। যেখানে এনজিওপ্লাসা্টিতে ফল মিলবে না, সে ক্ষেত্রে বাইপাস হয়। কিন্তু বাইপাসের ক্ষেত্রে কাটার পরিমাণ নিয়ে অনেকেরই সমস্যা থাকে। এই চিকিৎসায় কাটা অনেক কম। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কম কাটা, ব্যথা কম, শুধু সে জন্য মানেও আপস করতে হলে, সেটা কাম্য নয়। মিকাস-এর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের দক্ষতার প্রশ্নটিই বার বার সামনে এনেছেন কুণালবাবু। পাশাপাশি এ-ও বলেছেন, ‘এখন বড় হাসপাতালগুলিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে মিকাস-এর কথাই ভাবা হয়। কিন্তু জটিল ক্ষেত্রে, দীর্ঘমেয়াদি ফল দিতে গেলে আমি কিন্তু প্রচলিত বাইপাস সার্জারিরই পক্ষপাতী।
সূত্র : আইনন্দবাজার

  - See more at: http://www.kalerkantho.com/online/info-tech/2014/09/16/129415#sthash.QWVnS357.dpuf