বিশ্বনবী (সাঃ) আল্লাহর এবাদতের প্রতি এত বেশী অনুরক্ত ছিলেন যে কখনও কখনও তিনি এবাদতে আত্মহারা হয়ে যেতেন এবং অত্যধিক নামাজ আদায় করতে গিয়ে তাঁর পবিত্র পা-যুগল ফুলে যেতো ৷ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর এই অত্যধিক এবাদতের প্রশংসা করে বলেছেন, নিজেকে এভাবে কষ্ট দেয়ার জন্যে আমরা কোরআন নাজেল করিনি৷ পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল (সাঃ)কে বিভিন্ন অপবাদ ও তাঁর নিন্দার মোকাবেলা করে এবং তাঁর পবিত্রতার সাক্ষ্য দিয়েছে৷ সেই সূদূর অতীতকাল থেকে ইসলাম ও সত্য বিরোধী মহল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র আলোকোজ্জ্বল চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে এসেছে যাতে বিশ্বের মানুষের কাছে তাঁর ও ইসলাম ধর্মের নজিরবিহীন প্রভাব ক্ষুন্ন বাধাগ্রস্ত করা যায়৷ কিন্তু মহান আল্লাহ তাদের বিরোধীতার জবাব দিয়েছেন৷ যেমন, ইসলাম বিরোধী কোনো কোনো মহল বলে, নবী (মুহাম্মাদ-সাঃ) যা বলেছেন তা জ্ঞানীদের কাছ থেকে শিখেছেন অথবা নিজের মন থেকে বানিয়ে বলেছেন বা নিজের খেয়ালী প্রবৃত্তি থেকে সেগুলো বলেছেন৷ কিন্তু পবিত্র কোরআন সূরা নজমে এসব ভিত্তিহীন দাবীর জবাব নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, সে কখনও মনগড়া কথা বলে না৷ কোরআন তো ওহী বা প্রত্যাদেশ যা তার ওপর নাজেল হয়েছে৷ তাকে শিখিয়েছেন বিরাট শক্তিমান৷
ইসলামের কোনো কোনো শত্রু রাসূল (সাঃ)কে কবি বলে অভিহিত করেছে৷ পবিত্র কোরআনের সূরা ইয়াসিনের ৬৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এর জবাবে বলেছেন, আমরা কখনও তাকে কবিতা শিক্ষা দেইনি৷ তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়৷ এতো এক উপদেশ ও সুস্পষ্ট কোরআন৷ বিশ্বনবীকে কেউ কেউ যাদুকর, গনক বা অপ্রকৃতস্হ বলে যেসব অপবাদ দিয়েছে পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ তার যুক্তিগ্রাহ্য ও শক্ত জবাব দিয়েছেন এবং তিনি সঠিক সরল পথে আছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷
একবার রাসূল (সাঃ)'র কোনো এক স্ত্রীর কাছে কোনো এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন যে নূরনবী (সাঃ)'র চরিত্র কেমন ছিল? উত্তরে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, তুমি কি কোরআন পড়েছ? ঐ ব্যক্তি জবাব দিল, হ্যা পড়েছি৷ তখন রাসূল (সাঃ)'র স্ত্রী বললেন, তিনি নিজেই তো কোরআন৷ নূরনবী (সাঃ)'র জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাঁর আচার আচরণ ও কর্মতৎপরতা ছিল পবিত্র কোরআনের উচ্চতর শিক্ষার জীবন্ত নমুনা৷ পবিত্র কোরআনের ভাষায় বিশ্বনবী (সাঃ) ছিলেন গোটা মানব জাতির জন্যে সতর্ককারী, যেমনটি পবিত্র কোরআন নিজেই সতর্ককারী৷ পবিত্র কোরআন মানুষের জন্যে রহমত বা আল্লাহর মহাঅনুগ্রহ, তেমনি নূরনবী (সাঃ)ও পবিত্র কোরআনের মতো মানুষকে অজ্ঞতার অাঁধার থেকে মুক্ত করে তাদের জন্যে রহমত হিসেবে নিয়োজিত হয়েছেন৷ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বিশ্বনবী (সাঃ)কে সিরাজুম মুনিরা বা প্রদীপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷ অথচ এখানে অন্য কোনো উপমা যেমন সূর্য বা নক্ষত্র বলা যেতো৷ কিন্তু তা না বলে তাঁকে প্রদীপ বলা হয়েছে৷ এর তাৎপর্য সম্ভবতঃ এটাই যে এক প্রদীপের আলো থেকে লক্ষ কোটি প্রদীপ বা বাতি জ্বালানো যায়৷ হেদায়াতের আলো এভাবে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে বলে বিশ্বনবী (সাঃ)কে মহান আল্লাহ এই বিশেষ অভিধায় অভিহিত করে তাঁর উচ্চতম মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছেন৷
নূরনবী মোস্তফা (সাঃ)
মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র জীবন সেই শৈশব থেকে ওফাত পর্যন্ত মোজেজা বা মহাবিস্ময়কর অনেক ঘটনায় ভরপূর ছিল৷ আমরা জানি মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা সাধারণ মানুষ বা সাধারণ কার্য-কারণ বা চালিকা শক্তির মাধ্যমে ঘটানো সম্ভব নয়৷ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র জীবনের অলৌকিক অথচ সন্দেহাতীত ঘটনাগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে তিনি মহান আল্লাহর পরম প্রিয়পাত্র এবং তাঁরই মনোনীত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ৷
মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা সব নবী-রাসূলের জীবনেই ঘটেছে৷ কারণ প্রত্যেক নবী ও রাসূলের সাথে আল্লাহর যোগাযোগ ছিল৷ অন্য কথায় নবী-রাসূলগণ আল্লাহর কাছ থেকে বাণী ও দিকনির্দেশনা লাভ করতেন৷ তাঁরা নবুওত বা রেসালাতের বিষয়টি প্রমাণের জন্যে প্রয়োজনে যুক্তির পাশাপাশি মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনাও ঘটাতেন৷ মোজেজা আল্লাহর নির্দেশেই ঘটতো এবং এ ধরনের ক্ষমতা আল্লাহ-প্রদত্ত ক্ষমতারই নিদর্শন৷ পবিত্র কোরআনে হযরত মূসা ও হযরত ঈসা (আঃ)'র মো'জেজাসহ অতীতের অনেক নবীর মো'জেজার কথা বলা হয়েছে৷ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)ও তাঁর পূর্ববর্তী নবীগণের মো'জেজার বা অলৌকিক ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন৷
বিশ্বমানবতার মুক্তির মহাকান্ডারী ও একত্ববাদের বিজয়-গাঁথার সর্বশ্রেষ্ঠ নিশানবরদার রাসূলে পাক (সাঃ)ও অনেক মো'জজা দেখিয়েছেন৷ পবিত্র কোরআন তাঁর সর্বত্তোম মো'জেজা এবং তাঁর রেসালাত ইসলাম ধর্মের সত্যতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ৷ এ মহাগ্রন্থ খোদায়ী নিদর্শন ও জ্ঞানে পরিপূর্ণ৷ তাই পবিত্র কোরআন চিরন্তন ও অবিনশ্বর৷ কোরআনের বাণী নির্দিষ্ট স্থান, জাতি ও কালের গন্ডীতে সিমীত নয়৷ এর বাণী, বিষয় ও শিক্ষা সব সময়ই নতুন, হৃদয়স্পর্শী ও স্পষ্ট এবং মানব জীবনের সর্বোত্তম দিশারী৷ মহান আল্লাহই এ মহাগ্রন্থের রচয়িতা বলে কোরআনের বাণীর মতো বাণী আর কেউই সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়৷ কিন্তু পবিত্র কোরআনের বাণী এত আকর্ষণীয় ও অলৌকিক হওয়া সত্ত্বেও অজুহাতকামী ও একগুঁয়ে শ্রেণীর লোকেরা বিশ্বনবী (সাঃ)'র আহবানে সাড়া দেয় নি, বরং তারা রাসূলে পাক (সাঃ)কে যাদুকর বলে অপবাদ দিয়েছে৷ তারা বলতো কেবল বাহ্যিক কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখালেই আমরা আপনাকে নবী হিসেবে মেনে নেব৷ পবিত্র কোরআনেই অযৌক্তিক ঐসব দাবী সম্পর্কে বলা হয়েছে, আমরা অবশ্যই এ কোরআনে মানুষের জন্যে সব কিছুর নিদর্শন বর্ণনা করেছি৷ কিন্তু অধিকাংশ মানুষই অবিশ্বাস করেছে৷ তারা বলেছে, আমরা কখনও তোমাকে নবী বলে বিশ্বাস করবো না যদি না তুমি শুস্ক প্রান্তরে ঝর্ণা প্রবাহিত কর, অথবা তোমার জন্যে থাকুক খেজুর ও আঙুরের বাগান যাতে তুমি ঝরণারাজি উৎসারিত করে বইয়ে দেবে, অথবা আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের ওপর নামাবে যেভাবে তুমি ইচেছ কর, কিংবা তুমি আল্লাহ ও ফেরেশতাগণকে সরাসরি আমাদের সামনে হাজির কর৷ অথবা স্বর্ণখচিত একটি ঘর বা বাড়ি তোমার জন্যে নিয়ে আস, কিংবা আকাশের দিকে উড়ে যাও৷ আকাশে বা উধর্বলোকে তোমার আরোহনকে আমরা কখনও বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ না তুমি আকাশ থেকে একটি চিঠি বা বই আমাদের জন্যে নামিয়ে আনবে যা আমরা পড়তে পারি৷ আর কেবল তা পারলেই আমরা তোমাকে নবী বলে মনে করবো৷ হে রাসূল! আপনি বলুন, সকল মহিমা আমার প্রভুর, আমি কি একজন মানুষ ও আল্লাহর রাসূল ছাড়া অন্য কিছু?
পবিত্র কোরআন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের সমর্থনে বক্তব্য রেখেছে এবং তাঁর সম্পর্কে যাদুকর বা অপ্রকিতস্থ হবার অপবাদ খন্ডন করেছে৷ পবিত্র কোরআন বিশ্বনবী (সাঃ)'র কয়েকটি মো'জেজা বা অলৌকিক ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছে৷ উধর্বলোকে তাঁর সফর বা মেরাজ গমন এমনই একটি মোজেজা৷ কোনো এক রাতে রাসূলে পাক (সাঃ) আল আকসা মসজিদ থেকে উধর্বজগতে আরোহন করে বেহেশত ও দোযখসহ সমস্ত বিশ্ব জগত ভ্রমণ করেন৷ এ সংক্ষিপ্ত অথচ অলৌকিক সফরে অতীতের নবীগণের সাথে তাঁর সাক্ষাৎসহ অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার ঘটেছে এবং তিনি অনেক বিস্ময়কর বিষয় প্রত্যক্ষ করেন৷ আমাদের এই ধারাবাহিক আলোচনার একটি অনুষ্ঠানে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ পবিত্র কোরআনে বিশ্বনবী (সাঃ)'র অন্য যেসব মো'জেজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেসবের মধ্যে চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করার ঘটনা অন্যতম৷
আবুজেহেল ও ওয়ালিদ বিন মুগিরাহসহ মক্কার কোরাইশ ও মুশরিকদের একদল নেতা একবার বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র কাছে আসেন৷ সে সময় রাতের বেলায় পূর্ণ চাঁদ দেখা যাচিছল৷ ওরা রাসূলে পাক (সাঃ)কে বললো, তোমার নবুওতের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এই চাঁদকে দ্বিখন্ডিত হতে বল৷ রাসূলে খোদা (সাঃ) বললেন, এ কাজ করলে কি তোমরা ঈমান আনবে? তারা বললো হ্যা৷ রাসূল (সাঃ) আল্লাহর কাছে এ মো'জেজা ঘটানোর প্রার্থনা করেন৷ হঠাৎ সবাই দেখলো, চাঁদ এত স্পষ্টভাবে দুই খন্ড হয়ে গেছে যে দ্বিখন্ডিত চাঁদের মাঝখানে হেরা পর্বত দেখা যাচেছ৷ এরপর দ্বিখন্ডিত চাঁদ আবার জোড়া লেগে যায় এবং তা পূর্ণ চাঁদে পরিণত হয়৷ এ সময় রাসূলে পাক (সাঃ) বলছিলেন, সাক্ষী থাক ও দেখ৷ মুশরিকরা তো এই অসাধারণ দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে হতবাক! কিন্তু তাদের কেউ কেউ ঈমান না এনে বললো, মুহাম্মাদ আমাদেরকে যাদু করেছে৷ পবিত্র কোরআনে এ ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেই সময় বা কিয়ামত সমাগত এবং চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছে৷ আর যখন ওরা কোনো নিদর্শন বা মো'জেজা দেখেছে তখন ওরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ ওরা বলে, এ এক চিরাচরিত যাদু৷ ফাখরে রাজী তাফসীরে মাফাতিহুল গাইবে সূরা ক্বামারের তাফসীরে লিখেছেন, সমস্ত তাফসীরকার এ ব্যাপারে একমত যে চাঁদে ফাটল বা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিল এবং গোটা চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিল৷ এ ঘটনা সম্পর্কে হাদীসের প্রায় বিশটি বর্ণনা রয়েছে এবং এ ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই৷ এবার আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) ও ওয়ারাকা বিন নওফেলের মাধ্যমে বর্ণিত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র এক মো'জেজার বর্ণনা দেব৷ আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, একদিন আমি রাসূলে পাক (সাঃ)'র সাথে থাকা অবস্থায় কোরাইশ গোত্রের একদল লোক তাঁর কাছে এসে বললো, হে মুহাম্মাদ, তুমি বেশ বড় মাপের দাবী করছ৷ এ ধরনের দাবী তোমার পূর্বপুরুষ ও আত্মীয়-স্বজন কখনও করেনি৷ তুমি যদি আমাদের একটি বিশেষ দাবী পূরণ করতে পার তাহলে আমরা তোমার রেসালাতে বিশ্বাস করবো৷ আর তুমি তা না পারলে তোমাকে স্রেফ যাদুকর ও মিথ্যাবাদী ছাড়া অন্য কিছু মনে করবো না৷ রাসূলে আকরাম (সাঃ) বললেন, তোমরা কি চাও? ওরা বললো, আমরা চাই তোমার নির্দেশে এই গাছটি যেন শেকড়সহ মাটি থেকে উঠে তোমার কাছে চলে আসে৷ রাসূলে পাক (সাঃ) বললেন, মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান৷ তিনি তোমাদের এ দাবী পূরণ করলে তোমরা কি ঈমান আনবে এবং সত্যের সাক্ষ্য দেবে? ওরা বললো, হ্যা৷ রাসূলে খোদা (সাঃ) বললেন, তোমাদের দাবী পূরণ করবো, তবে আমি জানি যে তোমরা ঈমান আনবে না৷ এরপর তিনি ঐ গাছকে সম্বোধন করে বললেন, যদি আল্লাহ ও বিচার বা পুণরুত্থান দিবসে বিশ্বাস কর এবং আমাকে আল্লাহর রাসূল বলে মনে কর তাহলে আল্লাহর নির্দেশে আমার কাছে চলে আস৷ হযরত আলী (আঃ) আরো বলেন, আল্লাহর কসম, গাছটি শেকড়সহ মাটি থেকে উঠে রাসূল (সাঃ)'র দিকে এগুতে লাগলো৷ এ সময় পাখীদের উড়াল দেয়া বা পাখা ঝাপটানোর শব্দের মতো শব্দ শোনা গেল৷ গাছটি রাসূলে করিম (সাঃ)'র সামনে এসে থেমে যায় এবং গাছটি তার কিছু শাখা-প্রশাখা তাঁর পবিত্র মাথার ওপর মেলে দেয় এবং কিছু শাখা আমার কাঁধের ওপর ছড়িয়ে দেয়৷ আমি রাসূলে খোদা (সাঃ)'র ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ কোরাইশরা এ ঘটনা দেখার পরও ঔদ্বত্য দেখিয়ে বললো, এই গাছকে বল তার অর্ধেক যেন তোমার কাছে আসে এবং অর্ধেক নিজ অবস্থানে থেকে যায়৷ রাসূলে(সাঃ)'র নির্দেশে তাও বাস্তবায়িত হয়৷
এরপরও ঐ কুরাইশরা বললো, গাছের যে অর্ধেক তোমার কাছে এসেছে তা তার বাকী অর্ধেকের কাছে ফিরে গিয়ে আবার পরিপূর্ণ গাছে পরিণত হোক৷ রাসূল (সাঃ)'র নির্দেশে গাছটি আবার পরিপূর্ণ হল৷ আমীরুল মুমিনিন আলী (আঃ) বলেন, এ ঘটনার পর আমি বললাম, এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো খোদা বা প্রভু নেই, হে প্রিয় রাসূল৷ আমিই প্রথম আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমি সাক্ষ্য দিচিছ যে এই গাছের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা আল্লাহর নির্দেশে হয়েছে এবং আপনি যে আল্লাহর রাসূল তা প্রমাণের জন্যেই ঘটেছে৷ কিন্তু কোরাইশ লোকগুলো বললো, তুমি তো বিস্ময়কর যাদুকর ও মিথ্যাবাদী৷ এরকম লোক (হযরত আলী আঃ) ছাড়া আর কেউ কি তোমাকে আল্লাহর রাসূল মনে করে? নবী-রাসূলগণের দাওয়াত বা সত্যের আহবান অস্বীকার বা উপেক্ষার ঘটনা শুধু অতীতকালেই সিমীত থাকে নি৷ এখনও অনেক লোক খোদায়ী বাস্তবতা বা সত্যকে বুঝতে অক্ষম৷ আজও এক শ্রেণীর দাম্ভিক ও স্বার্থান্ধ লোক নবী-রাসূলগণকে যাদুকর বলে অপবাদ দেয়৷ তারা এটা বোঝে না যে নবী-রাসূলগণ বাহানাবাজদের কথামত চলেন না৷ নবী-রাসূলগণ দর্শকদের জন্যে বিস্ময়কর কিছু দেখাতে অভ্যস্ত গাঁজাখোরি গল্পের অভিনেতা বা ভেলকীবাজ নন৷ বরং তাঁরা মহান ও এক আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে প্রাণ-সঞ্চারী ও জরুরী বার্তা প্রচারের জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন ৷ মানুষকে সুপথ দেখানো ও তাদের মুক্তি বা কল্যাণের ব্যবস্থা করাই ছিল নবী-রাসূলগণের মিশনের উদ্দেশ্য ৷
নূরনবী মোস্তফা (সাঃ)
বিশ্বের সমস্ত মুসলমান এ ব্যাপারে একমত যে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং ইসলামী বিধান বা শরিয়ত খোদায়ী ধর্মগুলোর মধ্যে পরিপূর্ণতম৷ রাসূল (সাঃ) যে সর্বশেষ নবী এ বিশ্বাস ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিশ্বাসগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ এই বিশ্বাসের সপক্ষে পবিত্র কোরআন ও হাদীসে অনেক স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ রয়েছে৷ এ ছাড়াও ইসলামী বিধি-বিধানের প্রকৃতি থেকেও ইসলামী বিধানের স্থায়ীত্ব ও সার্বজনীনতা স্পষ্ট৷ (বাজনা) পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র পর আর কোনো নবী আসবেন না৷সূরা আহযাবের ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী৷ আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে অবহিত৷
অন্যদিকে পবিত্র কোরআনের আয়াতে ইসলামকে চিরন্তন ও সর্বজনীন ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ ইসলামের বিধানও কোনো স্থান বা সময়সীমার গন্ডীতে সিমীত নয়৷ যেমন, সূরা ফোরক্বানের এক নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, কত মহান তিনি যিনি তাঁর দাসের প্রতি ফোরকান (কোরআন) নাজিল করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হতে পারে৷
মহান আল্লাহ নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন মানুষকে শির্ক বা অংশীবাদিতা থেকে একত্ববাদ এবং অজ্ঞতা থেকে বুদ্ধিবৃত্তি ও কল্যাণকর বা সৌভাগ্যময় জীবনের দিকে আহবান জানাতে৷ যুগে যুগে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন ঘটায় ধর্ম-বিধান পরিবর্তিত হয়েছে এবং প্রত্যেক যুগেই মানব &