এক শতাব্দী ধরেই ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়ছে। তবে বর্তমানে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বেড়েছে, যা গ্রীষ্মমণ্ডলের অন্য যেকোনো জলরাশির চেয়ে বেশি। ভারত মহাসাগরের এই উষ্ণতা বৃদ্ধির উচ্চ হারের কারণে এ অঞ্চলে বর্ষাকাল দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এটি বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে এ দাবি করেছেন ভারত ও ফ্রান্সের গবেষকেরা।
মহাসাগরের পৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার নিয়ে গবেষণায় ভারতের পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজি (আইআইটিএম) ও পুনে ফারগুসন কলেজের সঙ্গে ফ্রান্সের সরবোন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা অংশ নেন। ভারত সরকারের ভূমিবিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল মনসুন মিশনের অধীনে ফ্রান্সের সহযোগিতায় চালানো এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন আইআইটিএমের গবেষক ম্যাথিউ কোল রক্সি। সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন ঋতিকা কাপুর, পাসকেল টেরে ও সেবাস্টিয়ান ম্যাসন। এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি আমেরিকান মিটিওরোলজি সোসাইটির জলবায়ুবিষয়ক সাময়িকীর অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা দেখতে পান, পুরো পৃথিবীরই সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে ভারত মহাসাগর। এ কারণে বিশ্বের জলবায়ু ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বর্ষা।
পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ কারণে এর নেতিবাচক প্রভাবও হয় দীর্ঘমেয়াদি।
গবেষক ম্যাথিউ কোল রক্সি বলেন, ভারত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির অস্বাভাবিক বেশি হার এই প্রথম জানা গেল। এর আগে গবেষণাটি ছিল ৫০ বছরব্যাপী। এই প্রথম ১১২ বছরের তথ্য নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।
কোল রক্সি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ মহাসাগরের মধ্যে আকারে ভারতের অবস্থান পেছনের দিকে হলেও এর জলরাশি সবচেয়ে উষ্ণ। এশিয়া মহাদেশের জলবায়ু ও বর্ষার পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে এ মহাসাগর বড় ভূমিকা রাখে। বিশ্বের জলবায়ুতেও বড় প্রভাব ফেলে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার গ্রীষ্মমণ্ডলের যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে বেশি। আর এ কারণে বর্ষার শক্তি ও গতিপথের পরিবর্তন হতে পারে।
গবেষকেরা বলেন, সাধারণত পশ্চিম ভারত মহাসাগরের ওপরের পৃষ্ঠ শীতল হয়। আর মধ্য-পূর্ব অঞ্চলের সাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা হয় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি। এর আগের গবেষণায় দেখা গেছে, গত অর্ধশতাব্দীতে সাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক বেড়েছে। তবে এর কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কোল রক্সি বলেন, তাঁদের গবেষণায় ১৯০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার তথ্য নেওয়া হয়েছে। এই তথ্য অনুযায়ী তুলনামূলক শীতল পশ্চিম ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এক শতাব্দী ধরেই বাড়ছে। বর্তমানে এটি ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।
গবেষকেরা পশ্চিম ভারত মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে ‘এল নিনো’ পরিস্থিতির সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব ভাগের সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে সেটিকে এল নিনো বলা হয়। সাধারণত প্রতি চার থেকে ১২ বছরে একবার করে এল নিনো দেখা দেয়। প্রশান্ত মহাসাগরের এই পরিবর্তন সারা বিশ্বের জলবায়ুর ওপর প্রভাব ফেলছে। একই কারণে পশ্চিম ভারত মহাসাগরে বায়ুপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। আর ‘লা নিনা’ও ভারত মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হারের পরিবর্তনে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে না। লা নিনা পরিস্থিতি হলো প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব ভাগের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস।
কয়েক দশক ধরে এল নিনো ঘটনা বেড়েছে, যা ভারত মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি কারণ বলে মনে করেন গবেষকেরা।
কোল রক্সি বলেন, তাঁদের গবেষণার ফলাফল দীর্ঘ মেয়াদে বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস বুঝতে সহায়তা করবে।