হাড়ের ক্ষয় রোগে লেজার কোর ডিকম্প্রেশন

Author Topic: হাড়ের ক্ষয় রোগে লেজার কোর ডিকম্প্রেশন  (Read 784 times)

Offline mustafiz

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 524
  • Test
    • View Profile

হাড় মানবদেহের জীবন্ত কোষ। তাই হাড়ের পুষ্টির জন্য রক্ত সরবরাহ একান্ত প্রয়োজন। রক্ত সরবরাহ কমে গেলে পুষ্টির অভাবে হাড়ের কোষের মৃত্যু হয়। রক্তপ্রবাহের স্বল্পতার কারণে হাড়ের তরুণাস্থি ও জোড়ায় ক্ষয় দেখা দিলে তাকে এভাসকুলার নেকরোসিস, সংক্ষেপে এভিএন বলা হয়।


এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি অ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী।

রক্ত প্রবাহের সমস্যা দূর করার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে হাড় ভেঙে যেতে থাকে। সাধারণত উরুর উপরের অংশের হাড়ে এ ধরনের ক্ষয় দেখা যায়।

হাড়ের এই সমস্যা অস্টিও নেকরোসিস, এসেপটিক নেকরোসিস বা ইসকেমিক নেকরোসিস নামেও পরিচিত। হাঁটু কিংবা গোড়ালির হাড়েও এভাসকুলার নেকরোসিস হতে পারে। উন্নত বিশ্বে ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সের জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার মানুষ এভিএন রোগে আক্রান্ত হয়। তবে স্বাস্থ্যবান মানুষের এভিএন হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

ঢাকায় ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি অ্যান্ড হসপিটাল লেজার কোর-ডিকম্প্রেশন পদ্ধতিতে এভিএন রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই হাসপাতালে ৪০জন রোগীর ৬২টি হিপ জয়েন্টের অপারেশনের উপর একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। অপারেশনের আগে ও পরে হ্যারিস হিপ স্কোরস-এইচএইচএস এবং ফিসেট অ্যান্ড অ্যালার্ট স্ট্যাজিং পদ্ধতিতে গবেষণা করা হয়। কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই লেজার কোর-ডিকম্প্রেশন পদ্ধতিতে ৪০.৩ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল, ২১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভালো, ২৯ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সন্তষজনক ফলাফল পাওয়া গেছে।

ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি অ্যান্ড হসপিটালে লেজার কোর-ডিকম্প্রেশন পদ্ধতিতে এভিএন চিকিৎসার উপর পরিচালিত এই গবেষণাটি অষ্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে সর্বপ্রথম সাদরে গৃহিত হয়।

পরে জার্মান চিকিৎসকরাও এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মুল্যায়ন করেন। গবেষণাটি ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক লেজার সার্জারি সম্মেলনে বিশ্বের খ্যাতিমান লেজার বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

সম্প্রতি এই গবেষণা কর্ম মালয়েশিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল রিসার্চ এবং এশিয়ার বিজনেস কনসোর্টিয়ামের এবিসিজার্নালস-এ প্রকাশিত হয়। এভিএনের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে এটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের স্বীকৃতি লাভ করে।

কম সময়ে অপারেশন, সামান্য রক্তপাত এবং কোনো রকম কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই হিপ জয়েন্ট এভিএনের চিকিৎসায় লেজার কোর-ডিকম্প্রেশন পদ্ধতিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

এভাসকুলার নেকরোসিসের কারণ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরে পুষ্টির অভাব কিংবা আঘাত জনিত কারণে এভিএন হতে দেখা যায়। তাছাড়া আরও যেসব কারণে এভিএন হতে পারে সেগুলো হল

১. উরুর হাড়ের স্থানচ্যুতি বা ভাঙা: আঘাতের ফলে হাড়ের রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে এভিএন হতে পারে। যেসব রোগীর কোমরের হাড়ের স্থানচ্যুতি থাকে তাদের এভিএনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় ২০ শতাংশ বা তারও বেশি থাকে।

২. স্টেরয়েডের ব্যবহার: হাঁপানি (অ্যাজমা) বা শ্বাসকষ্ট, রিউম্যাটয়েড আথ্রাইটিস বা গেঁটে বাতের চিকিৎসায় দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘমেয়াদী স্টেরয়েডের ব্যবহারের ফলে ৩৫ শতাংশ রোগী আঘাতজনিত কারণ ছাড়াই এভাসকুলার নেকরোসিস বা এভিএন-এ আক্রান্ত হতে পারে।

চিকিৎসকেদের ধারণা, স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলে শরীরের মেদ ভেঙে গিয়ে রক্তনালীতে জমা হয়। এতে রক্তনালী সরু হয়ে হাড়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় এভিএন।

৩. অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ: অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে শরীরের মেদ ভেঙে গিয়ে রক্তনালীতে জমা হয়। ফলে রক্তনালী সরু হয়ে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এ কারণেও এভিএন হতে পারে।

৪. রক্তজমাট, প্রদাহ ও ধমনীর রক্ত প্রবাহের ব্যঘাত: এর ফলে হাড়ে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়েও এভিএন হতে পারে।

এছাড়া বেশ কিছু রোগের কারণেও এভিএন দেখা দিতে পারে। এরমধ্যে রয়েছে উরুসন্ধির অসারতা, বাতের ব্যথা, শিকল সেল ডিজিজ, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ, গাউচার ডিজিজ এবং বিপাকজনিত কারণে শরীরে ক্ষতিকর মাত্রায় মেদ জমে যাওয়া, রক্তে বুদ বুদ তৈরি হওয়া। কারো দেহে এইডস রোগের সংক্রমন দেখা দিলে তার প্রতিক্রিয়াও এভিএন দেখা দিতে পারে।

এভিএন'য়ের লক্ষণ

এভিএনে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এক পর্যায়ে আক্রান্ত স্থানে ব্যথা অনুভব হয়। প্রথমদিকে আক্রান্ত হাড়ে চাপ লাগলে রোগী ব্যথা অনুভব করেন। এ সময় হিপ জয়েন্ট, কোমরের পেছনে ও পাশে ব্যথা অনুভব হয়। রোগী দাঁড়ালে বা হাঁটলে কোমর থেকে উরু পর্যন্ত ব্যথা অনুভূত হয়। এভিএনের ব্যথা কখনও হাঁটুর নিচে নামে না।

এ পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে পর্যায়ক্রমে ব্যথা বাড়তে থাকে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সংযুক্ত জোড়ায় অস্টিও আথ্রাইটিস হয়ে হাড় অনড় হয়ে যায় এবং রোগী চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েন। কখনও কখনও কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর সময় নিয়ে আক্রান্ত হাড়ের জোড়া বিকল হয়ে যেতে পারে।

এভিএন'য়ের চিকিৎসা

এভিএন চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হল আক্রান্ত জোড়া আগের মতো সচল ও কার্যকর করা এবং হাড়ের ক্ষয় বন্ধ করে ব্যথা লাঘব করা। প্রাথমিক অবস্থায় এমআরআই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা জরুরি।

রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর রোগীর বয়স ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় এভিএনের চিকিৎসা করা হয়। তবে আক্রান্ত স্থান ও রোগের জটিলতার উপরই মূলত চিকিৎসা নির্ভর করে। আর রোগের পর্যায় বা ধাপের উপর নির্ভর করে চিকিৎসার ফলাফল।

তবে এভিএন প্রতিরোধ বা রোগ ঠেকিয়ে রাখা কিংবা দেরি করার কোনো কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।

এভিএন চিকিৎসার বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ক্র্যাচ ব্যবহার করে আক্রান্ত স্থানে কম চাপ দেওয়া, ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার এবং হাঁটাহাঁটি কম করা।

দেরিতে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শারীরিক তৎপরতা কমিয়ে এভিএন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে অপারেশনের মাধ্যমে রোগীর অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা হয়।

অপারেশন বা শল্য চিকিৎসা

এভিএন চিকিৎসায় অপারেশন করা হয়। তবে সার্জনরা এখনও কোনো পদ্ধতিকে সার্বজনিন গ্রহণযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিতে পারেননি।

এভিএন চিকিৎসায় অপারেশনের ক্ষেত্রে (হাড় ভেঙে যাওয়ার আগে) হাড় প্রতিস্থাপন (বোন গ্রাফট) করে অথবা প্রতিস্থাপন না করে কোর ডিকম্প্রেশন পদ্ধতি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আর দেরি হলে (হাড় ভেঙে যাওয়া, ফিমোরাল হেড ডিফরমিটি অথবা জটিল অস্টিও আর্থাইটিসের ক্ষেত্রে) হিপ জয়েন্ট প্রতিস্থাপন সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।

মূলত রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে তাকে কোন ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করেন চিকিৎসকরা।