আজকাল কমবয়সী ছেলেমেয়েরা নানা ধরনের এনার্জি ড্রিংকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠছে। এদের অনেকেরই ধারণা, এসব পানীয় তাদের লেখাপড়ার জন্য রাত জেগে থাকতে সাহায্য করে। কেউ কেউ আবার দীর্ঘ সময় আড্ডার প্রেরণা পেতেও এসব ‘শক্তি-পানীয়’ পান করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি জোগানোর দাবি করা এই এনার্জি ড্রিংকের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে। এনার্জি ড্রিংকে আসক্তি এড়ানোর জন্য এর প্রতিক্রিয়াগুলো জেনে রাখা জরুরি। হেলথ মি আপ ডটকম অবলম্বনে টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জানিয়েছে।
ক্যাফেইননির্ভরতাসাধারণভাবে সবারই জানা যে নানা এনার্জি ড্রিংকের প্রধান উপাদানই হলো ক্যাফেইন। কিন্তু আমরা কি জানি এসব পানীয় থেকে কতটা ক্যাফেইন আমরা পান করছি। একবার শরীরে এই ক্যাফেইননির্ভরতা বাসা বাঁধলে তা ক্রমশ নিয়মিত আসক্তির দিকে গড়াতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন আসক্তি কখনোই ভালো নয়।
ইনসমনিয়াকেউ হয়তো বিকেল-সন্ধ্যায় বাড়তি প্রণোদনা পেতে এনার্জি ড্রিংক পান করলেন। কিন্তু এই পানীয়ের প্রভাব যদি সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে গড়ায় তাহলে কী হবে? রাতে যদি ঘুমাতে না পারেন! একটা বিনিদ্র রাত কাটিয়ে পরদিন ঢুলু ঢুলু বিকেল। ব্যাস, আবারও তরতাজা হওয়ার জন্য একটা এনার্জি ড্রিংক! এভাবেই আপনি এর খপ্পরে পড়ে যেতে পারেন। এভাবে চক্রের মতো কাজ করতে করতে শেষমেশ ব্যাপারটা নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়ায় গড়াবে।
মেজাজ বিগড়াবেগবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিতভাবে এনার্জি ড্রিংকে থাকা ক্যাফেইন পান করলে শরীরে ‘সেরোটোনিন’-এর মাত্রা কমে যায়। সেরোটোনিন ‘মন ভালো করার’ হরমোন হিসেবে পরিচিত। শরীরে এই হরমোনের মাত্রা কমে যেতে থাকলে স্থায়ীভাবে বিষণ্নতায় পেয়ে বসতে পারে। যখন-তখন মেজাজ বিগড়ানোটা স্বভাবে পরিণত হতে পারে।
চিনির বস্তাতাৎক্ষণিকভাবে শক্তি বাড়ানো বা চাঙা করার নানা কৃত্রিম উপাদানের পাশাপাশি অনেক এনার্জি ড্রিংকেই প্রচুর পরিমাণে সুগার থাকে। বাজারের কোনো কোনো এনার্জি ড্রিংকে এমনকি ১৩ চামচ চিনি পাওয়া গেছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। মাত্রাতিরিক্ত চিনি ওজন বাড়ানো, দেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল করে দেওয়াসহ নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বাড়তি চাপএনার্জি ড্রিংকের আরেকটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হলো এটা শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে বাড়তি চাপের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। শরীরে বাড়তি চাপ পড়লে তা স্বাভাবিক হয়ে আসার জন্য সময় দিতে হয়। কিন্তু এনার্জি ড্রিংক পানের অর্থ হলো—শরীরে নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় হতে বলা, তা সেগুলো যতই ক্লান্ত কিংবা অপ্রস্তুত হোক না কেন। এভাবে আসলে শেষ পর্যন্ত শরীরের ক্লান্তি ও চাপই বাড়ে।