লন্ডনে ১ ডিসেম্বর বসেছিল দশম ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডসের জাঁকজমকপূর্ণ আসর।প্রবাসী বাংলাদেশিদের কারি রেস্তোরাঁগুলোই যে ব্রিটেনে খাদ্য-সংস্কৃতির পালাবদলের অগ্রদূত তা আবারও প্রমাণিত হলো দশম ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডসে। লন্ডনে সোমবার অনুষ্ঠিত জাঁকজমকপূর্ণ এই আসরে এবার ১৩টি পুরস্কারের মধ্যে সাতটিই জিতে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা মে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ভিডিও বার্তায় এবারের লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের ঘোষণা দেন। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান বাংলাদেশি কারি ব্যবসায়ী আলহাজ সামসুদ্দিন খান। মহারানি নামের জনপ্রিয় কারি রেস্তোরাঁর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের কারি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন সামসুদ্দিন খান।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মে তাঁর বক্তব্যে বলেন, ব্রিটেনের অন্যতম বড় ব্যবসাক্ষেত্র কারি শিল্পকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে অভিবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে এখন আর শুধু অভিবাসীদের ওপর নির্ভর করলে চলবে না, ব্রিটেনেই এখন থেকে দক্ষ শেফ তৈরি করতে হবে। ব্রিটেনে কারি শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এটি এখন সময়ের দাবি।
তেরেসা মের এই বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডসের উদ্যোক্তা এনাম আলী। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে এখন সময় এসেছে ব্রিটেনে নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে দক্ষ কারি শেফ গড়ে তোলা।’ এনাম আলী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশে আবারও ব্রিটেনের ভিসা অফিস চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
দশম ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডসের আসরে ভিডিও বার্তায় লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক অনেক পুরোনো এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। সেই সুবাদে কারি শিল্পের মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অনেক সহায়তা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি আমরা। অথচ হুট করেই বাংলাদেশের ভিসা অফিস বন্ধ হয়ে গেল! যার ফলে ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা আদান-প্রদানের জন্য দৌড়াতে হচ্ছে ভারতে।’
এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডসের প্রযোজক-পরিচালক জাস্টিন আলী। এবারের আসরে এবার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও প্রদান করা হয় আরও ১২টি পুরস্কার। এর মধ্যে এবার লন্ডন সেন্ট্রাল অ্যান্ড সিটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে দ্য সিনামন ক্লাব রেস্তোরাঁ। লন্ডন সাবার্বস বিভাগে সাম্পান থ্রি উইলিং। সাউথ ইস্ট বিভাগে মালিকস, সাউথ ওয়েস্ট বিভাগে মিরিস্টিকা, নর্থ ইস্ট বিভাগে আগ্রা মিডপয়েন্ট, নর্থ ওয়েস্ট বিভাগে ব্লু টিফিন, মিডল্যান্ডস বিভাগে মেম সাব, ওয়েলস বিভাগে রসই ইন্ডিয়ান কিচেন এবং স্কটল্যান্ড বিভাগে লাইট অব বেঙ্গল। এ ছাড়া ক্যাজুয়াল ডাইনিং বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ডিসুম কভেন্ট গার্ডেন এবং নিউকামার বিভাগে ফাইভ রিভার্স এ লা কার্ট। আর বেস্ট ডেলিভারি বিভাগে পেয়েছে চিলি পিকল রেস্তোরাঁ।
বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী অভিবাসী ব্রিটিশ এনাম আলী ২০০৫ সালে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস চালু করেন। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে এবং কারি শিল্পের দুনিয়ায় এনাম আলীকে ‘কারি কিং’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি প্রায় তিন দশক ধরে যুক্তরাজ্যের কারি শিল্পকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে অক্লান্ত প্রয়াস চালিয়ে আসছেন।