ফুটবল খেলার উত্তেজনাই আলাদা। মাঠে কখন যে কী ঘটবে, তা আন্দাজ করা কঠিন। কিন্তু সেই আনন্দে প্রায়ই বিঘ্ন ঘটায় রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত। খেলার মাঠে অনেক সময় এত দ্রুত কিছু ঘটে যায় যা রেফারির নজর এড়িয়ে যায়। আবার দেখলেও সঠিকভাবে বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।এর ফলে অনেক সময় সেসব বিষয় হয়ে পড়ে সমালোচনার মুখোমুখি। টেলিভিশনের পর্দায় 'অ্যাকশন রিপ্লে'র মাধ্যমে দর্শকরা বিভিন্ন দিক থেকে গোল, ফাউল কিংবা অন্যান্য চমকপ্রদ দৃশ্য সহজেই দেখে নিতে পারেন। কিন্তু রেফারি মাঠে দাঁড়িয়ে সে ধরনের কিছু দেখার সুযোগ পান না। নিজ চোখে যতটুকু দেখেন, ততটুকুর ওপরই তাদের মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করেন। তাছাড়া ক্যামেরার অবস্থানের ওপরও নির্ভর করে কোনো ঘটনা কতটা স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে। যাই হোক, দর্শক ভুল দেখলেও রেফারিকে এ ব্যাপারে অবশ্যই পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে। আর সবাই আশাও করেন, রেফারি খেলায় তার সিদ্ধান্তটি সঠিকভাবে প্রদর্শন করবেন। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির অভাবে কখনও কখনও তা পুরোপুরি সম্ভব হয়ে ওঠে না।
জার্মানির একটি প্রযুক্তি এবার এই সমস্যার সমাধান করতে কাজে লাগানো হচ্ছে। এর নাম 'গোল-লাইন প্রযুক্তি'।
দক্ষিণ আফ্রিকায় গত বিশ্বকাপে একটি ম্যাচে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের জের ধরে ফিফা এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচে ইংল্যান্ডের ফ্র্যাংক ল্যাম্পার্ডের শটে বলটি গোল-লাইনের ভেতরেই পড়েছিল। কিন্তু রেফারি গোল স্বীকার করেননি। জার্মান ফুটবল লীগ বুন্দেসলীগার ইতিহাসে এটি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। লেভারকুসেন দলের স্টেফান কিসলিং হফেনহাইমের বিরুদ্ধে ম্যাচে হেড করলেন, সেটা গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে চলে গেল। কিন্তু নেটে ফুটো ছিল, তা দিয়ে বল ঢুকে গেল। রেফারি সেটা না দেখতে পাওয়ায় হফেনহাইম শেষ পর্যন্ত হেরে যায়। ডিয়ার্ক ব্রখহাউসেন ও তার কোম্পানি 'গোল-কন্ট্রোল' এমন সমস্যার সমাধানে 'গোল-কন্ট্রোল ফোর-ডি' নামের প্রযুক্তির সাহায্যে গোলপোস্টের ওপর কড়া নজর রাখার ব্যবস্থা করেছে। কোম্পানির প্রধান ডিয়ার্ক ব্রখহাউসেন জানিয়েছেন, 'এই ব্যবস্থায় ৫ মিলিমিটার বা তার থেকেও কম অংশের ওপর নজর রাখা সম্ভব। গোলপোস্টের সীমানা পাহারা দেওয়ার জন্য এর থেকে নিখুঁত ব্যবস্থা আর নেই।'
গোল-লাইন প্রযুক্তিতে বিশেষ প্রযুক্তির সাতটি ক্যামেরা লাগানো থাকে। এগুলো প্রতি সেকেন্ডে বলের ৫০০ ছবি তোলে। বল গোলে প্রবেশ করলে রেফারির ঘড়িতে একটা সিগন্যাল পাঠানো হয়। গোল-লাইন বরাবর একটি ক্যামেরা বসানো থাকে, যাতে পুঙ্খানুপুঙ্খ ধরা পড়বে বলের গতিবিধি। আর দ্বিতীয় পন্থা হলো, বলের শরীরে একখানা মাইক্রোচিপ বসানো থাকে। যে চিপ জানিয়ে দেবে বল গোল-লাইন পেরিয়েছিল, নাকি পেরোয়নি।
এর সুবিধা হলো, যে কোনো বলই কাজে লাগানো যায়। অর্থাৎ গ্রিনকিপার যে কোনো ব্যবস্থাতেই কাজ করতে পারবে। ঘাসের অবস্থা যেমনই হোক না কেন, তাতে ক্যামেরা লাগানো যায় এবং চালানো যায়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ঝামেলা নেই।'
এই গোল-লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করলে অনেক ঝামেলাই সহজই মিটে যায়।