আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রি-পেইড মিটার কোম্পানি নামে পৃথক একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পাঁচটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির আওতায় সারা দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বিতরণ কোম্পানিভেদে বর্তমানে গড়ে বিদ্যুতের প্রায় ১২ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিস্টেম লসের নামে এটি স্রেফ চুরি। এই সিস্টেম লসের পেছনে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে, যার ভর্তুকি বহন করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে বিদ্যুৎ খাতের এই সিস্টেম লস শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সরকার সারা দেশের সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি বাস্তবায়িত হলে গ্রাহকদের অগ্রিম বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে। টাকা শেষ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিতরণ কোম্পানিগুলো কর্তৃক প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা ঝামেলাপূর্ণ হওয়ার কারণে সরকার পৃথক কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কোম্পানির কাজ হবে পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিতরণ কোম্পানির গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রি-পেইড ব্যবস্থাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত এ কোম্পানি প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সব কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে গত মাসে প্রি-পেইড মিটার কার্যক্রমের ওপর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সভায় প্রি-পেইড মিটারিং কার্যক্রম বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় আবুল কালাম আজাদ দ্রুত বিদ্যুৎ বিভাগের লস কমিয়ে আনার জন্য প্রি-পেইড মিটার কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি সভায় উপস্থিত বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রি-পেইড মিটার কার্যক্রম বাস্তবায়নে তাগিদ দেন।
জানা যায়, বর্তমানে প্রি-পেইড মিটার কার্যক্রম বাস্তবায়নে ৮টি প্রকল্প চলমান ও ১১টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। সারা দেশের সব গ্রাহকের ক্ষেত্রে একই ধরনের ইউনিফাইড প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ জন্য প্রযুক্তির অংশ হিসেবে হার্ডওয়্যার প্রকিউরমেন্ট ইনস্টলেশন ও কমিশনিংয়ের কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান প্রি-পেইড মিটারিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আগামী ৯ মাসের মধ্যে আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজ মিটার সরবরাহের কাজ শেষ করবে।
প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজ নিজ বিতরণ এলাকায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) আজিমপুর এলাকায় ৫ হাজার প্রে-পেইড মিটার স্থাপন করেছে পরীক্ষামূলকভাবে। অন্যদিকে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) তাদের আওতাধীন এলাকায় কিছু প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করেছে। এ কার্যক্রমে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড (পবিবো) ও ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) নজরুল হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ডিপিডিসি এরই মধ্যে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানির সব গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসবেন।
(সংগৃহীত)