« on: January 23, 2015, 10:17:51 AM »

টেলিভিশন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গুলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে টেলিভিশনে যোগ করে চলেছেন একের পর এক নিত্য নতুন সব ফিচার সমূহ। এই চেষ্টার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করা, যেন তারা সেই নতুন সকল ফিচার গুলোতে মুগ্ধ হয়ে একটি টিভি কেনেন। এর ফলেই ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন (3D), 4K টেলিভিশন এবং কার্ভড (বাঁকানো) টেলিভিশনের পর আসতে চলেছে আরও এক নতুন প্রযুক্তি, নামঃ কোয়ান্টাম ডট!
যদিও এই ‘কোয়ান্টাম ডট’ টেকনোলজিকে সম্পুর্ন ভাবে নতুন বলা যায়না তবুও নির্মাতারা আশা করছেন যে এই টেলিভিশন ব্যবহারকারীদের মন খুব সহজেই জয় করে নিতে সক্ষম হবে এবং খুব শীঘ্রই হয়তো আপনি টেলিভিশনে নতুন এই প্রযুক্তির টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন।
LED , Plasma এবং OLED টেলিভিশন সম্পর্কে কিছু কথা
কোয়ান্টাম ডট নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে এলইডি, প্লাজমা এবং ওএলইডি প্রযুক্তি গুলো নিয়ে অল্প কিছু কথা বলা যাক। তাহলে হয়তো, সেগুলোর সাথে কোয়ান্টাম ডটে’র পার্থক্য আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।
কোয়ান্টাম ডট নামের এই প্রযুক্তি মূলত এলইডি টেলিভিশনের একটি ত্রুটিপুর্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করে। অনেক ব্যবহারকারীরা আছেন যারা প্লাজমা এবং ওএলইডি ডিসপ্লে (অর্গানিক এলইডি) ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এবং এই জনপ্রিয়তার পেছনে মূলত কাজ করে এসকল ডিসপ্লে ইউনিটের পিওর ব্লাক কালার এবং অন্যান্য রিচ কালার।

বাজারে যে সকল এলইডি টেলিভিশন সমূহ পাওয়া যায় সেগুলো মূলত এলসিডি টেলিভিশনই যাতে শুধুমাত্র এলইডি ব্যাকলাইটিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক বছর আগেও এলসিডি টেলিভিশনে ফ্লুরোসেন্ট টিউব (CCFL) ব্যবহার করা হত যা সাদা রঙের আলো উৎপন্ন করতো। এবং সেই সাদা রঙই টেলিভিশনের ডিসপ্লের পিক্সেলের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় প্রয়োজন মত যে কোন রঙে পরিবর্তিত হত। অন্যদিকে, এলইডি টেলিভিশনে ব্যবহার করা হয় এলইডি ব্যাক লাইটিং প্রযুক্তি যা তুলনামূলক ভাবে পরিমাণে কম শক্তি অপচয় করে এবং কম তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। শুধু তাই নয়, এলইডি ব্যাক লাইটিং ব্যবহারের ফলে টেলিভিশনে জায়গাও কম লাগে এবং একারণেই বর্তমানের আধুনিক টেলিভিশন সমূহ এতটা বেশি স্লিম এবং পাওয়ার এফিসিয়েন্ট হয়ে থাকে।
এলসিডি’র তুলনায় এলইডি’র সুবিধা বেশি হলেও এটিও কিন্তু ত্রুটিমুক্ত নয়। একটু আগেও বলেছি যে এলইডি টেলিভিশনে ব্যবহার করা হয় এলইডি ব্যাক লাইটিং যা ব্যাক লাইটিং-এর জন্য নীল আলো উৎপন্ন করে। এবং এরপর সেই নীল আলোই টেলিভিশনের ডিসপ্লে ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় প্রয়োজন মাফিক রঙে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। কিন্তু, এলসিডি প্রযুক্তির সাদা রঙের পরিবর্তে এলইডি’র এই নীল রঙ কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করে। সাদা রঙের পরিবর্তে নীল এই রঙের জন্য ডিসপ্লে ইউনিটের কালো অংশ গুলোতে যতটুকু কালো রঙের প্রয়োজন তার থেকে প্রদর্শিত কালো রঙ গুলো কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে থাকে এবং অন্যান্য রঙ গুলোও কিছুটা কম ভাইব্র্যান্ট হয়ে থাকে। এবং এই সমস্যার সমাধান করতেই পরবর্তি সময়ে নির্মাতারা ঠিক করেন যে কালো অংশ গুলোতে ব্যাক লাইটিং এর পরিমাণ কিছুটা ডিম করে দেয়া হবে। আপনি এলইডি টিভির বিজ্ঞাপনের স্পেসিফিকেশন লক্ষ্য করলেই ‘Local dimming’ ফিচারটি দেখতে পারবেন। এই ফিচারটির ফলে পিক্সেল গুলো নির্ভুল ভাবে ঠিক ততটাই কালো রঙ প্রদর্শন করতে পারবে যতটুকু দরকার।
সমস্যার নতুন সমাধানঃ কোয়ান্টাম ডট
‘কোয়ান্টাম ডট’স হচ্ছে মূলত লাইট-এমিটিং ন্যানো ক্রিস্টাল যা এক প্রকারের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘকে শোষণ (absorb) করে তা কনভার্ট করতে পারে। এটি মূলত ১৯৮২ সালের দিকে বেল ল্যাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
কোয়ান্টাম ডট’স হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রিস্টাল যা এলইডি টেলিভিশনের ব্যাকলাইট স্তরের উপরে যোগ করা যায় অথবা আলাদা একটি স্বতন্ত্র ডিসপ্লে হিসেবেও তৈরি করা যায়। আর সেই নীলাভ আলো যা এলইডি টেলিভিশনের ব্যাক লাইটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তা পিক্সেলের মধ্যে দিয়ে বা ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে যাবার পর ক্রিস্টালে যখন পৌছবে তখন সেই ক্রিস্টাল গুলো এই নীল আলোকে ভেঙ্গে আরও শক্তিশালী সাদা রঙের আলো উৎপন্ন করবে যার মধ্যে স্পেকট্রামের সকল রঙ বিদ্যমান থাকবে। এবং এই আলোই শেষ স্তরে এসে চমৎকার পিকচার কোয়ালিটি তৈরি করতে সক্ষম হবে যা হবে আগের চাইতে অনেক বেশি ভাইব্র্যান্ট। আপনি কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তি সহ তৈরি একটি এলইডি টেলিভিশনের পিকচার কোয়ালিটি একটি প্লাজমা বা ওএলইডি টেলিভিশনের পিকচার কোয়ালিটির সাথে তুলনা করে দেখতে পারেন। অনেকটা একই।

Plasma অথবা OLED: কেন নয়?
হোম থিয়েটার প্রেমিদের কাছে প্লাজমা টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা হয়তো সবচাইতে বেশি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আর প্লাজমা টেলিভিশন তৈরি করছেন না। এর পেছনে আসলে বেশ কিছু কারণ আছে, তবে মূল কারণ গুলো হচ্ছেঃ প্লাজমা টেলিভিশন আকৃতিতে কিছুটা বেঢপ, অনেক ভারী এবং অবশ্যই এটি অনেক বেশি ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহার করে থাকে।

অনেক নির্মানকারি প্রতিষ্ঠান OLED ডিসপ্লে নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। কেননা, এই প্রযুক্তিতে কোন ব্যাক লাইটিং-এর প্রয়োজন ছিলোনা। ব্যাক লাইটিং-এর পরিবর্তে এই প্রযুক্তিতে প্রতিটি পিক্সেল তার প্রয়োজন অনুযায়ী রঙের ব্যাক লাইট তৈরি করতে সক্ষম। যেমন ধরুন, একটি পিক্সেলকে কালো রঙ প্রদর্শন করতে হবে! এই প্রযুক্তিতে সেই পিক্সেলটি ঠিক কালো রঙই প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে। এবং এই প্রযুক্তির কারণেই আপনি আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারির শক্তি কিছুটা হলেও বাঁচাতে পারেন কালো ওয়ালপেপার ব্যবহারের মাধ্যেমে, তবে এর জন্য আপনার স্মার্টফোনটির ডিসপ্লেটি ওএলইডি প্রযুক্তির হতে হবে। যাই হোক, এরকম সব চমৎকার ফিচারে ওএলইডি খুব ভালো কাজ করলেও কিছু ড্র-ব্যাক ছিল! যেমন ধরুন, এর সবচেয়ে বড় মাইনাস পয়েন্ট এর মূল্য! এখন পর্যন্ত এই প্রযুক্তির টেলিভিশন গুলোর মূল্য অনেক বেশি এবং এগুলো নির্মান করাও কষ্টসাধ্য। এজন্যেই, নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান গুলো এলইডি টেলিভিশন নিয়েই বেশি কাজ করে যাচ্ছেন এবং কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তিকেও এলইডি প্রযুক্তির সাথে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। কেননা, এলইডি টিভিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য শুধুমাত্র একটি বাড়তি লেয়ারের প্রয়োজন হচ্ছে তাদের।

আপনার অপেক্ষা করা উচিৎ!
আমি যতটুকু জানি এবং যা লিখেছি, যা পড়ে আপনারা যতটুকু জানতে পারলেন – নিশ্চয়ই কিছুটা হলে আপনি এটা নিশ্চিত যে ‘এই কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তি আমাদের টেলিভিশনের এক্সপেরিয়েন্সে নতুন পরিবর্তন আনতে চলেছে!’ তবে বাস্তবিক অর্থে, এই কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তির টেলিভিশন গুলোও হতে যাচ্ছে বেশ ব্যায়বহুল। এবং এখন পর্যন্ত যেহেতু এটি বাজারে আসেইনি সেহেতু এখনই এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবারও কিছু নেই। আমি মনে করি, কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তির টিভি বাজারে কিছুটা সচল হতে হতে 4K টিভিগুলোর দাম আমাদের সাধ্যের মধ্যেইচলে আসবে। আর যদি তাই হয় তবে আমি বলবো, 4K টেলিভিশনই কি যথেষ্ট নয়? এর চাইতেও দামী কোন টিভি কি আদৌ দরকার আছে? তবে আপনি যদি অতিমাত্রায় সৌখিন হন তাহলে ভিন্ন কথা।
তবে আশার বিষয় হচ্ছে, যেহেতু প্রযুক্তির সাথে সাথে ব্যবহারকারীদের জন্য প্রযুক্তিবিদরা পণ্যের মূল্য ব্যবহারকারীদের সাধ্যের মধ্যেই রাখতে চাচ্ছেন – সেক্ষেত্রে কোয়ান্টাম ডটের এই টিভি গুলো হয়তো কম দামেও বাজারে পাওয়া যেতে পারে, যদিও এমনটা হওয়া কিছুটা কঠিনই বলা চলে। তবুও, আশা করতে দোষ নেই। কি বলেন?
শেষ কথাঃ
সংক্ষেপে নতুন এই কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তি আপনাদের বোঝাতে চেষ্টা করলাম। আশা করি কেন এই প্রযুক্তির আগমন এবং কীভাবেই বা কাজ করে – এগুলো আপনারা বুঝতে পেরেছেন। এখন শুধু অপেক্ষা করার পালা... কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তি টেলিভিশন প্রযুক্তিতে কতটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম তা দেখার। চলুন, অপেক্ষাই করা যাক।
- See more at: http://tech.priyo.com/blog/2015/1/15/27189.html#sthash.YJky3IZj.dpuf

Logged
“Allahumma inni as'aluka 'Ilman naafi'an, wa rizqan tayyiban, wa 'amalan mutaqabbalan”
O Allah! I ask You for knowledge that is of benefit, a good provision and deeds that will be accepted. [Ibne Majah & Others]
.............................
Taslim Arefin
Assistant Professor
Dept. of ETE, FE
DIU