অবশেষে যাত্রা শুরু করলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘ডিজিটাল’ জবাইখানা। সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের নিউ সোসাইটি মার্কেটে অত্যাধুনিক এই জবাইখানা উদ্বোধন করেন ডিএনসিসি প্রশাসক ড. রাখাল চন্দ্র বর্মন। এ উপলক্ষে এক সভার আয়োজন করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাস্তা বা বাড়ির পাশে পশু জবাই ও কোরবানি দিয়ে আসছিলেন নগরবাসী। যত্রতত্র পশু জবাইয়ের কারণে পশুর নাড়িভুঁড়ি, রক্তে নোংরা ও দূষিত হতো রাস্তাঘাটসহ পুরো পরিবেশ। সৃষ্টি হতো অসহনীয় দুর্গন্ধের। এই জবাইখানা উদ্বোধনের ফলে নগরবাসীর বিড়ম্বনার কিছুটা লাঘব হবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় নির্মিত ওই জবাই খানায় পশু বিশ্রামাগার, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সৌর বিদ্যুৎ, ডি-স্কিনিং পোস্ট (চামড়া ছাড়ানো বার), বর্জ্য ও রক্ত সংগ্রহ এবং ব্যবস্থাপনা সুবিধা, চামড়া, শিং, খুড়, হাড় সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহ ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, ব্যবহারকৃত যন্ত্রাংশ জীবাণুমুক্ত করার জন্য পানি গরম করার ব্যবস্থা এবং অফিস ও চিকিৎসকের কক্ষ এবং যন্ত্রপাতি রাখার সুব্যবস্থা রয়েছে।
ডিএনসিসি অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (আনিক) মো. মাহবুবুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শাবেল ফিরুজ, করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম মাসুদ আহসান, প্রধান প্রকৌশলী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল গাজী ফিরোজ রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. তারিক বিন ইউসুফ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. রাখাল চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু জবাইখানা তৈরি অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। আমাদের এই আধুনিক জবাইখানা চালুর ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস রপ্তানির ক্ষেত্র তৈরি হলো।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাবেল ফিরুজ বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করা হলে মাংস বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েরই স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যায়। বিষয়টি বিবেচনা করে ইসলামিক রিলিফ এই জবাইখানা প্রস্তুতে এগিয়ে আসে।’
মিরপুরের মতো ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিবেশসম্মত জবাইখানা তৈরির প্রয়োজনিয়তা উল্লেখ করে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিয়া বলেন, ‘এই জবাইখানা ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা বিদেশে মাংস রপ্তানি করতে পারবেন। তবে এ জন্য তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
গত বছরের ২২ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই জবাইখানাটি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় জবাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হাজারীবাগ ও কাপ্তান বাজারের দু’টি জবাইখানা আধুনিকায়নও করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই পশু জবাইয়ের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এ লক্ষ্যে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় দশ একর জমির ওপর জবাইখানাটি নির্মাণের প্রাথমিক স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। পাবনার বেঙ্গল মিটের আদলে এটি নির্মাণ হবে। পাশাপাশি সেখানে একটি স্থায়ী পশুর হাটও গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
Collected from
বাংলামেইল২৪ডটকম