৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিবসকে উদযাপন করার জন্য ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ানে ইংরেজ সাংবাদিক হেলেন লুইস বিশ্বের সেরা ১০ জন নারীবাদীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সেসব নারীবাদীদের পরিচিতি জেনে নেয়া যাক।
১। অপরা বেন
women 1
রেস্টোরেশন যুগের প্রধান ব্রিটিশ লেখিকা অপরা বেন। তিনি নেতৃস্থানীয় নাট্যকার, কবি, অনুবাদক এবং প্রাথমিক যুগের ঔপন্যাসিক। ব্রিটিশ সাহিত্যে তার অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অ্যাস্ট্রিয়া নামেও পরিচিত ছিলেন। ১৬৮৯ সালে তার মৃত্যুর শতাব্দী পরেও তার রচনাবলীকে অশ্লীল হিসেবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ১৭৩৭ সালে প্রখ্যাত ইংরেজ কবি আলেকজান্ডার পোপ সমালোচনা করে বলেন, তার(অপরা বেন) সব চরিত্রকে তিনি বিছানায় নিয়ে যান। বর্তমানে বিদ্বান নারীবাদীরা বেনের লেখা নতুন করে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। ক্রীতদাসের গল্প নিয়ে লেখা তার গদ্য সাহিত্য ‘অরুনোকো’ ইংরেজি সাহিত্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
২। চিমামান্দা এনগোজি এডিচি
women 2
‘উই শুড অল বি ফেমিনিস্ট’ বইয়ে নাইজেরিয়ার নারীবাদী লেখিকা চিমামান্দা বলেন, নারীবাদী হলেন তারা, যারা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনীতির সমতায় বিশ্বাসী। তিনি প্রশ্ন করেন, পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নারীদের কেন নিজেদের সংকুচিত করে রাখার এবং লক্ষ্য সীমিত রাখার শিক্ষা দেয়া হয়?
৩। নেলি ব্লাই
Nellie Bly
আমেরিকান সাংবাদিল এলিজাবেথ জেন কোকরেনের ছদ্ম নাম নেলি ব্লাই। ১৮৮৬ সালে ৮০ দিনের কম সময়ে বিশ্বভ্রমণ করতে চাইলে তার সম্পাদক তাকে বলেছিলেন, কেবলমাত্র পুরুষরাই এটা করতে পারবে। তোমার একজন রক্ষাকর্তা লাগবে। এছাড়া এধরনের ভ্রমণে মালপত্র বহন করা একজন নারীর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্ত সম্পাদকের কথায় কর্ণপাত না করে নেলি ব্লাই মাত্র একটি হাতব্যাগে নিজের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে ৭২ দিনে বিশ্বভ্রমণ করেন। তার সাহসিকতার এটাই একমাত্র নিদর্শন নয়।
পাগলা গারদের অব্যবস্থাপনা নিয়ে পত্রিকার প্রতিবেদন করার জন্য তিনি ১৮৮৭ সালে নকল পাগল সেজে সেখানে ভর্তি হন।
৪। কেটেলিন মোরান
women 4
ইংরেজ কলামিস্ট এবং টিভি সমালোচক কেটেলিন মোরান।২০১১ সালে তিনি ‘হাউ টু বি এ উইমেন’ বইটি প্রকাশ করেন। এতে আধুনিক সমাজের নারীদের বিভিন্ন দ্বিধা দ্বন্দ্বের কথা ওঠে এসেছে। বইটিতে নারীদের শারীরিক চিত্র অংকন, মাতৃত্ব, গর্ভপাত এবং নারীবাদ নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে।
৫। আন্দ্রেয়া ডরকিন
women 5
আমেরিকার কট্টর নারীবাদী এবং লেখিকা আন্দ্রেয়া ডরকিন। পর্ণোগ্রাফী নিয়ে সমালোচনার জন্য তিনি পরিচিত। ধর্ষণ এবং নারীর উপর অন্যান্য যৌন সহিংসতার জন্য পর্ণোগ্রাফীকেই তিনি দায়ী করেন।
৬। মালালা ইউসুফজাই
women 6
জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষার মাধ্যমে নারীদের অধিকার অর্জনের পথে উন্নতিলাভ করা সম্ভব। তালেবানের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই নারী শিক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন মালালা ইউসুফজাই। তার বেঁচে থাকা কেবলমাত্র পাকিস্তানই নয় বরং সারা বিশ্বের নারীদের ভবিষ্যত আশার অনুপ্রেরণা যোগাবে। গত বছর তিনি নাইজেরিয়া সফরে গিয়ে বোকো হারাম কর্তৃক অপহৃত বালিকাদের উদ্ধারে নাইজেরীয় প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথনের উপর চাপ প্রয়োগ করেন।
৭। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
women 7
ব্রাড পিটের সাথে জোলির সম্পর্ক নিয়ে পত্রিকাগুলি বরাবরই সরব। কিন্ত বিগত ৫ বছর ধরে জোলির বিভিন্ন সামাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ড পত্রিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় ধর্ষিতা নারীদের ভালো চিকিৎসা এবং সমর্থনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন হলিউডের এই তারকা। তিনি জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া এবং ইরাকের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের নারী এবং শিশুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। গত বছর লন্ডনে জাতিসংঘের এক শীর্ষ সম্মেলনে বলা হয়, যুদ্ধে নারী ধর্ষণকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা মানবাধিকার লংঘনের শামিল। এতে ধর্ষিতা ছাড়াও শিশু এবং পুরুষরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধের সময় সংঘটিত ধর্ষণকে একটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করার জন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন জোলি।
৮। মেরি বিয়ার্ড
women 8
ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং রয়াল একাডেমি অব আর্টসের প্রাচীন সাহিত্যের প্রফেসর মেরি বিয়ার্ড। স্কুলে কিংবা কলেজে যদি কোনো শিক্ষার্থী কঠিন সময় পার করেন, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন, এসময় মেরি বিয়ার্ড হলে কি করতেন? উত্তর একটাই তিনি বই পড়তেন। নিজের চুল কি রকম কিংবা দেখতে কেমন লাগছে তা নিয়ে চিন্তা করতেন না তিনি। তার বয়স এবং শারীরিক অবয়ব নিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন জোক থাকলেও তিনি এতে লজ্জিত বোধ করেন না। যৌন কাজ এবং লিঙ্গ নিয়ে যেসব নারীবাদীদের ভুল মতামত রয়েছে, তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় সমাজে নিষিদ্ধ করার বিরোধিতা করেন তিনি।
৯। ভার্জিনিয়া উলফ
বিংশ শতাব্দীর প্রধানতম আধুনিকতাবাদী ইংরেজ লেখিকা। ‘এ রুম ফর ওয়ান্স ওন’ বইয়ে তিনি ইংরেজি সাহিত্যকে পুরুষের জীবনের উপর অবিরাম ফোকাস করা থেকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন। নারীদের সৃজনশীল হবার পথে যেসব প্রতিবন্ধকতা কাজ করে তা অনুসন্ধান করেন তিনি। ১৯২৯ সালে লেখা বইটি বর্তমান সময়ের জন্যও প্রাসঙ্গিক। একটি জরিপে দেখা যায়, ২০১৪ সালে ২৫০টি শীর্ষ চলচ্চিত্র রচনার মাত্র শতকরা ১১ ভাগ লিখেন নারীরা। এছাড়া উইমেন ইন লিটারারি আর্টের হিসাব অনুযায়ী, যারা লেখালেখি করেন তাদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই পুরুষ।
১০। স্যার প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট
women 10
একজন পুরুষকে নারীবাদী হিসেবে চিহ্নিত করায় আপনারা বিস্মিত হতে পারেন। কিন্ত ‘স্টার ট্রেক’ ছবির ক্যাপ্টেন পিকার্ড নামে পরিচিত স্যার প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট ২০০৯ সালে প্রকাশ করেন, তার মায়ের উপর পিতার অত্যাচার দেখেই তিনি বড় হয়েছেন। এক্ষেত্রে তার মা পুলিশের সাহায্য চাইলে, পুলিশ জানায় পারিবারিক সহিংসতার জন্য তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই দায়ী। যদিও স্টুয়ার্ট এই মন্তব্যের সাথে একমত নন। তিনি মনে করেন, সহিংসতার জন্য পুরুষরাই দায়ী। তারাই এটা সৃষ্টি করে।সূত্র: গার্ডিয়ান