ঢাকার প্রথম আকাশচারী

Author Topic: ঢাকার প্রথম আকাশচারী  (Read 1245 times)

Offline Lazminur Alam

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 337
  • Test
    • View Profile
ঢাকার প্রথম আকাশচারী
« on: March 21, 2015, 05:38:55 PM »
১২৩ বছর আগে এই মার্চ মাসেই মার্কিন নারী জিনেট ভান তাসেল জয় করেছিলেন ঢাকার আকাশ। ঢাকার প্রথম আকাশচারীর ছিন্ন ইতিহাস জোড়া দিয়েছিলেন সামাজিক ইতিহাসের গবেষক শামীম আমিনুর রহমান। এবারে তিনি বের করে আনলেন ভান তাসেলের আরও চমকপ্রদ তথ্য ও ছবি।

জিনেট ভান তাসেলের স্বামী পার্ক এ ভান তাসেল১৬ মার্চ ১৮৯২। ১২৩ বছর আগে ঠিক এই দিনটিতে একজন মানুষ জয় করেছিলেন বাংলাদেশের আকাশ। ঢাকার মাটি থেকে বেলুনে করে আকাশে উড়াল দিয়ে যিনি ইতিহাসের সূচনা করেছিলেন, তিনি অবশ্য কোনো বাঙালি ছিলেন না। ছিলেন একজন মার্কিন ও নারী। নাম জিনেট ভান তাসেল।
জিনেট ভান তাসেলের পুরো কাহিনি কোথাও লেখা ছিল না। প্রথমে কৌতূহল-জাগানো ছোট একটি তথ্য পাই। বিচিত্র উত্স থেকে টুকরো টুকরো তথ্য জোগাড় করে ধীরে ধীরে তাঁর কাহিনিটি গড়ে তুলতে হয়। সে কাহিনি উদ্ধারের ঘটনা গোয়েন্দা-গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর।
সিলেটের খ্যাতিমান গীতরচয়িতা হাসন রাজার ছেলে গনিউর রাজা একবার ঢাকা এসেছিলেন। লিখেছিলেন তাঁর ঢাকার দিনপঞ্জি। সেই দিনপঞ্জিতেই প্রথম জিনেটের কথা জানতে পারি। গনিউর রাজা ঢাকায় এসে জিনেটের আকাশে ওড়ার ঘটনাটি নিজে দেখেছিলেন। তাঁর লেখায় অবশ্য জিনেটের নাম, পরিচয় বা কোত্থেকে তিনি এসেছিলেন—তার উল্লেখ ছিল না। ঢাকার প্রথম আকাশচারী সম্পর্কে জানার কৌতূহল অদম্য হয়ে উঠল। ঠিক করলাম, মেয়েটির পরিচয় ও প্রকৃত কাহিনি বের করব।
১৯৮৯ সালের ১ আগস্ট দৈবক্রমে একটি ঘটনা ঘটে যায়। ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান খাজা হালিমের কাছে ঢাকার পুরোনো একটি আলোকচিত্র দেখি। ছবিটি বিরাট একটি আধফোলা বেলুনের। সে বেলুন-ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন ঢাকাবাসী ও কিছু ইউরোপীয়। ছবিটি থেকে গনিউর রাজার বিবরণের একটি শক্ত প্রমাণ মিলল। তখনই সে আলোকচিত্রের একটি ফটোকপি করে রাখি। ভাগ্যিস ফটোকপি করা হয়েছিল। মূল আলোকচিত্রটি পরে নিখোঁজ হয়ে যায়।
যা হোক, সম্বল বলতে রইল শুধু একটি আলোকচিত্রের ফটোকপি ও গনিউর রাজার দিনপঞ্জির কয়েকটি পাতা। গনিউর রাজা লিখেছিলেন, মেয়েটি ঢাকায় বেলুনে চড়ে উড়েছিলেন বটে, কিন্তু প্যারাস্যুটে করে নিচে নেমে আসার সময় দুর্ঘটনায় মারা পড়েন। গনিউর রাজা ঢাকায় এসেছিলেন বাংলা ১২৯৯ সনে। সে হিসেবে সেটি ১৮৯২ সাল। ধরে নিলাম, মেয়েটিকে নিশ্চয়ই নারিন্দার খ্রিষ্টান সমাধিস্থলে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অনেক খুঁজেও জিনেটের নামে কোনো এপিটাফ খুঁজে বের করা গেল না।
উপায়ান্তর না দেখে গেলাম পুরান ঢাকার সেন্ট টমাস গির্জায়। সেখানে রক্ষিত পুরোনো নিবন্ধিত মৃত্যুতালিকা (ডেথ রেজিস্টার) আঁতিপাঁতি করে খুঁজলাম। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে পাওয়া গেল জিনেটের নাম ও মৃত্যুর তারিখ। মৃত্যুর তারিখ ১৮ মার্চ ১৮৯২। মৃত্যুতালিকায় তাঁর বয়সের ঘরে লেখা ২৪ বছর। পেশা আকাশচারী (এয়ারোনট)। মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা আছে দুর্ঘটনা।
কিন্তু জিনেটের পুরো ঘটনাটি কীভাবে উদ্ধার করা যায়? ওই দিনটির আগের ও পরের ঘটনা জানতে শুরু হলো খোঁজ। গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাণ্ডুলিপি বিভাগে। ওখানে রক্ষিত সে সময়ের পত্রপত্রিকার মাইক্রোফিল্ম ঘাঁটতে শুরু করলাম। ঘটনা আস্তে আস্তে জোড়া লাগতে শুরু করল।
জিনেট ভান তাসেলের স্বামী ছিলেন অধ্যাপক পার্ক এ ভান তাসেল। ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহ কলকাতায় গিয়ে তাঁদের দুজনকে ঢাকায় এসে বেলুনে চড়ার জন্য ১০ মার্চ ১৮৯২ সালে চুক্তিবদ্ধ করেন। সে চুক্তি অনুযায়ী ১৬ মার্চ জিনেট বেলুনে করে বিকেলে বুড়িগঙ্গার ওপার থেকে মাটি ছেড়ে আকাশে ওড়েন। আকাশপথেই তিনি বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে আসেন। ভাসতে ভাসতে উঠে যান প্রায় ছয় হাজার ফুট উঁচুতে। একসময় ওড়া শেষ হয়। নিচে নামার জন্য তিনি প্যারাস্যুটে করে ঝাঁপ দেন। শাহবাগে নবাবদের একটি বাগানবাড়ি ছিল। জিনেটের প্যারাস্যুট ভাসতে ভাসতে সেই বাগানবাড়ির একটি উঁচু ঝাউগাছে আটকে যায়। জিনেটও তাতে আটকে যান। মাটি থেকে ১৫-২০ ফুট ওপরে প্যারাস্যুটের অংশ ধরে তিনি অসহায়ের মতো ঝুলতে থাকেন।
জিনেট ভান তাসেলের সেই দুর্লভ আলোকচিত্রজিনেটকে নামানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা চলতেই থাকে। ঢাকার এক ইংরেজ পুলিশ কর্মকর্তা পর পর তিনটি বাঁশ বেঁধে তার সাহায্যে জিনেটকে নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করেন। নেমে আসার সময় বাঁশের বাঁধন হঠাৎ খুলে যায়। জিনেট মাটিতে আছড়ে পড়ে প্রচণ্ড আঘাত পান। প্রায় অচেতন জিনেট প্রচণ্ড জ্বরে ভুগে ১৮ মার্চ রাত একটায় মারা যান।
ঢাকার আকাশে বেলুনে ওড়ার কয়েক দিন আগে থেকেই ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকাবাসীকে এর খবর জানানো হয়েছিল। তাই ঘটনা দেখতে লোক হয়েছিল বেশুমার। ১৬ মার্চ ১৮৯২ বিকেলে আহসান মঞ্জিলের প্রাঙ্গণ, ছাদ ও বুড়িগঙ্গার দুই ধারে নদীসংলগ্ন দালানগুলোর ওপরের অংশ মানুষে মানুষে সয়লাব হয়ে যায়। শত শত মানুষ অবস্থান নেয় নদীর মধ্যে, নৌকায়।
জিনেটের অবাঞ্ছিত ও আকস্মিক মৃত্যু ঢাকাবাসী ও স্থানীয় গোরাদের ব্যথিত করেছিল। আমেরিকান হয়েও জিনেট ঢাকাবাসীর মনে কতটা স্থান করে নিয়েছিলেন, তা বোঝা যায় সে সময়ে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোয়। ঘটনাটি ইংরেজ প্রশাসন ও ঢাকাবাসীকে যেন মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। ঢাকাবাসীরা দায় দিচ্ছিল ইংরেজ প্রশাসনকে। তারা সম্ভবত ভাবছিল, জিনেটের করুণ মৃত্যুর পেছনে আছে তাঁকে উদ্ধার করার ব্যাপারে ইংরেজ পুলিশ কর্মকর্তার ব্যর্থতা। অন্যদিকে ইংরেজি পত্রপত্রিকা ইংরেজ প্রশাসনের পক্ষে দুষছিল ঢাকাবাসীকে। তারা এই বলে অভিযোগ তুলল যে, ঢাকার অধিবাসীরা গুজব ছড়াচ্ছে। জিনেটের মৃত্যু এড়াতে তাদের করার কিছু ছিল না। কিছুদিন পর সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে জিনেটের স্বামী পার্ক এ ভান তাসেল ঢাকা ছেড়ে চলে যান।
জিনেটকে সমাহিত করার সময় নবাব আহসানউল্লাহ অনুপস্থিত ছিলেন। ইংরেজ প্রশাসনের বিপক্ষে যেসব বিতর্ক উঠেছিল, তিনি সম্ভবত তা এড়াতে চেয়েছিলেন। তবে ঢাকাবাসীরা যে জিনেটের জন্য আবেগাক্রান্ত হয়েছিলেন, তা বোঝা যায় লোককবিদের তত্পরতায়। তাঁরা এ ঘটনা নিয়ে কবিতার বই ছেপে বের করে। এর পর দিন গড়িয়ে যায়। ঢাকায় জিনেটের প্রথম আকাশচারিতা ও মৃত্যুর ঘটনা ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায় বিস্মৃতির নিচে।
জিনেটের ছবি
আগেই বলেছি, জিনেটের কবরে কোনো এপিটাফ ছিল না। তার পরও চেষ্টা অব্যাহত থাকে। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় তাঁর নামলিপিহীন কবরটি উদ্ধার করি। সেটি অন্য এক কাহিনি। সে সময়ের পত্রিকায় বলা হয়েছিল, পেশায় জিনেট জিমন্যাস্ট। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন আমেরিকার সিনসিনাটির ওহাইওতে। ধর্মবিশ্বাসে প্রেসবাইটেরিয়ান খ্রিষ্টান। পত্রিকায় আরও বলা হয়েছিল, তাঁর বাবা একজন স্থপতি। তিনি সে সময়ের বিখ্যাত শিকাগো মেলায় সম্পৃক্ত ছিলেন। জিনেট ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান। বেলুন আরোহণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন চার বছর হয়। ঢাকার আগে তিনি বেলুনে উড়েছিলেন তিন শ বার। ঢাকা ছিল তাঁর ৪১তম প্যারাস্যুট অবতরণ।

এসব তথ্য নিয়ে ঢাকার প্রথম আকাশচারী ভান তাসেল নামে একটি বই লিখি। বইটি বেরিয়েছিল ২০০০ সালে, কিন্তু জিনেটকে নিয়ে অনুসন্ধান তার পরও শেষ হয়ে যায়নি। তখনো পর্যন্ত জিনেটের কোনো ছবি পাওয়া যায়নি। তাঁর ছবি পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিলাম। পরবর্তী অনুসন্ধানে নতুন আরও বহু তথ্য পাই। তাতে পুরোনো কিছু তথ্য সংশোধন করাও দরকার হয়ে পড়ে।
MD.LAZMINUR ALAM
|| BA (Hons) in English || || MBA in Marketing ||

Senior Student Counselor
Daffodil International University
Cell: 01713493051
E-mail: lazminur@daffodilvarsity.edu.bd
            lazminurat@yahoo.com
Web: www.daffodilvarsity.edu.bd

Offline Naznin.Tania

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 206
  • Test
    • View Profile
Re: ঢাকার প্রথম আকাশচারী
« Reply #1 on: March 22, 2015, 10:05:07 AM »
Good to know this....well post :)
Tania Naznin
Sr. Admission Officer
Daffodil International University
E-mail: counselor1@daffodil.university