স্মার্টফোনে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস

Author Topic: স্মার্টফোনে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস  (Read 767 times)

Offline akhishipu

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 104
  • Test
    • View Profile
স্মার্টফোনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং শারীরিক সুস্থতা নির্ণায়ক (ফিটনেস ট্র্যাকার) প্রযুক্তির সাহায্যে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস মিলবে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী এ কথা জানিয়েছেন। তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাপা ভ্যালি এলাকায় গত বছর রিখটার স্কেলে ছয় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এ সময় প্রযুক্তি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান জোবোনের তৈরি ফিটনেস ট্র্যাকারের সেন্সরগুলো (সংবেদী) বার্কলে, ওকল্যান্ড এবং সান হোসে এলাকার মানুষের শরীরে ভূকম্পনজনিত পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়। এতে দেখা যায়, ভূমিকম্পের আগ মুহূর্তে সেখানকার মানুষের ঘুমের ধরনে সকালের দিকে আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্মার্টফোন ও ফিটনেস ট্র্যাকারের সাহায্যে সংগৃহীত এসব তথ্য-উপাত্ত কি পূর্বাভাস দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ? মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) বিভাগের গবেষকেরা বলছেন, ‘হ্যাঁ’। স্মার্টফোনে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমস) প্রযুক্তির সংবেদী বা সেন্সর থাকে। সেগুলো কোনো একটি দিকে আকস্মিক পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। যদি হাজার হাজার স্মার্টফোন একসঙ্গে একই পরিবর্তন শনাক্ত করে, তাহলে সেটাই হবে ভূমিকম্পের আগাম সংকেত।
ইউএসজিএসের বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ব্রুকস বলেন, কল্পনা করা যেতে পারে যে পোর্টল্যান্ড এলাকার একটি ক্যাফেতে কোনো এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সবার স্মার্টফোন টেবিলের ওপরে রাখা। তখনই সেগুলো বড় ভূমিকম্পের সংকেত দিল। এতে সারা শহর দুলে ওঠার আগেই লোকজন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ পাবে।
বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে পরীক্ষা করে দেখেছেন, ভূমিকম্পের সময় এবং আগে ও পরে স্মার্টফোনের তথ্য-উপাত্ত ঠিক কেমন হয়। ওই কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে সান ফ্রান্সিসকোর হেওয়ার্ড ফল্ট জোনে সাত মাত্রার কল্পিত ভূমিকম্প ঘটানো এবং জাপানে ২০১১ সালে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রকৃত তথ্য-উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, অন্তত পাঁচ হাজার স্মার্টফোন ব্যবহারকারী প্রস্তুত থাকলে বড় কোনো ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সময়টা আগে থেকে জানার সুযোগ রয়েছে। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোয় বিপর্যয় শুরু হওয়ার আগে পাঁচ সেকেন্ডের একটি সতর্কসংকেত দেওয়া যাবে। তবে পাঁচ সেকেন্ড সময় খুব সামান্য মনে হলেও গবেষকেরা বলেন, সংকেত বাজানো, গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং দমকল বাহিনীর গ্যারেজের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য পাঁচ সেকেন্ডই যথেষ্ট।
গবেষকেরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ওপর ক্রমশ বেশি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা যায়, কোনো ভূমিকম্পের পর ঘটনাস্থলে পৌঁছানো, তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার তথ্য বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে পূর্বাভাসের ব্যাপারে নানা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আর সর্বশেষ গবেষণায় ওই কাজে স্মার্টফোনের উপযোগিতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্রুকস আরও বলেন, ভূমিকম্প আসন্ন—এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা এড়ানোর জন্য কয়েক সেকেন্ডের সতর্কসংকেতই খুব ফলপ্রসূ হতে পারে। অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় ফায়ার স্টেশনগুলোর দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে, গ্যাস লাইনগুলো বিচ্ছিন্ন হবে এবং শহরের বাসিন্দারা আশপাশের কোনো ডেস্কের নিচে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারবেন। পরিস্থিতিটা এমন হবে যে কেউ পূর্বাভাস পাওয়ার পরপরই সেটা অন্যদের তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে।
গবেষকেরা আরও বলেন, ইন্টারনেট বর্তমানে অনেকটা সারা পৃথিবীতে স্নায়ুতন্ত্রের মতো। ভূমিকম্পের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ও জনসাধারণের কাছে দ্রুত তথ্য পৌঁছে দিতে চাইলে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হবে।