আমাদের দেশে নারকেল তেল বলতে কেবল চুলের সৌন্দর্য চর্চার উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খাবার তৈরির বা রন্ধন শিল্পের উপকরণ হিসেবে এ তেলের তেমন কোনো মূল্যায়ন নেই। নারকেল তেল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বিশেষ করে ক্যান্সার, কিডনিতে পাথর, হৃদরোগ ও অতিরিক্ত ওজন কমাতে কোন জুড়িই নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক খাদ্য হিসেবে নারকেল তেলের অসামান্য উপকারিতা গুলো হল:
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে যে নারিকেল তেল স্বাস্থের জন্য ভালো না কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি রয়েছে। কিন্তু এ ধারণাটি একেবারেই ভুল। বরং, নারকেল তেল শরীরের কোলেস্টরলের ও এল,ডি,এল-এর মাত্রা কমিয়ে শরীরে দেয় এবং এইচ,ডি,এল-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগের ঝুকি অনেকটাই কমে যায়।
ত্বক ভালো রাখে:
নারকেল তেল ত্বকের জন্য একটি চমৎকার ম্যাসেজ তেল। এটা শুষ্ক ত্বক সহ সব ধরনের চামড়া জন্য একটি কার্যকরী ম্যাসেজ হিসাবে কাজ করে। তাছাড়া নিয়মিত নারকেল তেল খাবারের সাথে রান্না করে খেলেও ত্বক অনেক বেশি সুন্দর উজ্জ্বল ও আকর্শনীয় হয়। কারণ নারকেল তেলের সাথে খনিজ তেলের তুলনা করা যায়।
লিভার ভালো রাখে:
নারকেল তেল মানুষের লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি হজমে সাহায্য করে পরিপাকে সাহায় করে ফলে লিভারও ভালো থাকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
নারকেল তেলের আরেকটি জাদুকরী দিক হলো এটি এক সপ্তাহেই আপনার ওজন কমাতে অত্যন্ত সাহায্য করে থাকে।– বলে থাকেন স্বাস্থ্যগুরু জোসেফ মারকোলা। নারকেল তেল ওজন কমাতে সাহায্য করে- এটা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আসলে কি তাই? তিন মাসের একটি গবেষণা চালায় সেন্ট ওঙ্গি এবং ফলাফলে দেখা যায় যেসব মানুষ এই তিন মাসে নারকেল তেল খেয়েছেন, অন্য তেল গ্রহীতাদের চাইতে তাদের ওজন কমেছে চার পাউন্ড বেশী। এম,সি,টির কারণেই এমনটা হয় বলে অনেকের ধারণা।
শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দেয়:
নারকেল তেলে থাকে মিডিয়াম চেইন ট্রিগলিসেরাইডস বা এম,সি,টি, যেখানে অন্যসব তেলে থাকে লং চেইন ট্রিগলিসেরাইডস বা এল,সি,টি। মিডিয়াম চেইন ট্রিগলিসেরাইড স্নেহ পদার্থকে অন্ত্র থেকে সরাসরি যকৃতে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এর বেশিরভাগটাই সেখানেই পুড়িয়ে ফেলে। অন্যদিকে এল,সি,টি সেই স্নেহ পদার্থগুলোকে জমা করে শরীরের বিভিন্ন অংশে ফ্যাট টিস্যু হিসেবে। ফলে এম,সি,টি হওয়ায় নারকেল তেল শরীরে স্নেহপদার্থ জমতে না দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং শরীরকে রাখে চর্বিমুক্ত।
আলঝেইমারের প্রতিরোধ করে:
সারা বিশ্বে বয়স্কদের জন্যে একটি ভীতি মূলক রোগ হল আলঝেইমার, যেটা কিনা খুব সহজেই কমিয়ে দেয় একজন মানবশরীরের গ্লুকোজ গ্রহণের ক্ষমতা। আর এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব একমাত্র শরীরে কেটন এর পরিমান বৃদ্ধি করে। যা কিনা নারকেল তেল সচরাচর করেই থাকে।
ক্যান্ডি তৈরীতে সাহায্য করে:
ক্যান্ডি! যার নাম শুনলেই জিভে জল আসে ছেলে-বুড়ো সবারই- সেই ক্যান্ডি প্রস্তুতিতেও দরকার হয় নারকেল তেলের। নারকেল তেলের মধ্যে স্নেহ পদার্থ পরিপূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান। প্রায় ৯০%, অন্যদিকে যেখানে সয়াবন আর অলিভ তেলে এর পরিমাণ ১৫%, গরুর মাংসে ৫০%, মাখনে ৬৩%।
আর এজন্যেই নারকেল তেল খুব সহজেই শক্ত হয়ে যায়, জমে যায়। যেটা কিনা ক্যান্ডি প্রস্তুতকারীদের জন্যে সুবিধাজনক। তাই বিভিন্ন ক্যান্ডি প্রস্তুত করতে কারিগরেরা নারকেল তেলকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
ইনফেকশন রোধ করে:
ইনফেকশন, ইনজুরি থেকে বাচঁতে। নারকেল তেলের ৫০% স্নেহ পদার্থই ১২- কার্বন লোরিক এসিড। নারকেল তেল পরিপাক হবার সময় মনোলোরিয়াম নামক এক ধরনের পদার্থ উত্পাদন করে। আর এই দুই পদার্থ এক হয়ে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ইনফেকশন হওয়া থেকে শরীরকে বাচাঁয়।
এছাড়াও একজিমার সমস্যা দূর করতে, শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে এবং হরমোনের উত্পাদন বাড়াতেও সাহায্য করে নারকেল তেল।