ইরানের কাজভিন প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী কিছু নিদর্শন

Author Topic: ইরানের কাজভিন প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী কিছু নিদর্শন  (Read 1386 times)

Offline mahmud_eee

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 591
  • Assistant Professor, EEE
    • View Profile


কাজভিন প্রদেশের প্রধান শহর কাজভিন নামেই প্রসিদ্ধ। বলেছিলাম এখানে রয়েছে হোসাইনিয়া, রয়েছে প্রাচীন জামে মসজিদ, চেহেল সুতুন প্রাসাদসহ আরও অনেক স্থাপনা। মোটকথা কাজভিন শহরের যেদিকেই তাকানো যাবে দেখা যাবে মিনারের পর মিনার। যেন মিনারের শহর কাজভিন। মিনারের সাথে আছে গম্বুজ, বিরাট বিরাট গম্বুজ। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় কাজভিনে রয়েছে অসংখ্য মসজিদ। মসজিদের প্রাচুর্য দেখে মনে হয় এখানকার এমন কোনো স্থান নেই যে স্থান মুমিন মানুষের উপস্থিতি বা পাদচারণায় ধন্য হয় নি। কাজভিনের জামে মসজিদ বা কাবির মসজিদের দিকে তাকালেই দৃষ্টি অর্থবহ হয়ে ওঠে। অসম্ভব সুন্দর এই মসজিদটি। কাজভিন শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ এটি।

 

ইসলামি যুগের স্থাপত্যকলার আদলে বানানো এই মসজিদটির ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। সে সময় চার দিকে ঝুল বারান্দা রেখে মসজিদ বানানো হতো। সেই রেওয়াজের নিদর্শন এখানে সুস্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী এই মসজিদ প্রাচীনত্ব এবং নির্মাণ শৈলীগত দিক থেকে ইরানের মধ্যে একেবারেই বিরল। দৃঢ়তা এবং বিশালত্বের বিচারে এই মসজিদের গম্বুজ একটু আলাদা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। মিনারটিতে কারুকাজও করা হয়েছে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। ওইসব কারুকাজে একবার চোখ পড়লেই অপলক আটকে যায় দৃষ্টি। যে ঝুলবারান্দার কথা বললাম সেগুলোও দেখার মতো। বেশ বড়োসড়ো সেগুলো। তাতে রয়েছে বিচিত্র লিপির আলঙ্কারিক নকশা। সেলজুকি এবং সাফাভি যুগের নকশার ছাপ সেগুলোতে স্পষ্ট।

 

কাজভিন জামে মসজিদ বা মাসজিদে কাবিরের সবচেয়ে প্রাচীন অংশটি কে নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়ে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেছেন ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের হাতে হিজরি ১০০ সনে ওই অংশটি নির্মিত হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন ১৯২ হিজরিতে হারুনুর রশিদের হাতে নির্মিত হয়েছে কাবির মসজিদের প্রাচীনতম অংশটি। অবশ্য বর্তমানে হারুনুর রশিদের নামেই ‘ত্বা’কে হারুনি’ নামে তা প্রসিদ্ধ। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নিদর্শন বিশেষজ্ঞদের মতে কাজভিন জামে মসজিদে ঐতিহাসিক বহু লিপিকর্ম রয়েছে। এইসব লিপিকর্ম সেখানকার কারুকার্যে বা নকশাগুলোতে কবিতা আকারে কিংবা বর্ণনায় উঠে এসেছে।

 

ইরানের বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক এবং বিভিন্ন গ্রন্থের লেখক হামদুল্লাহ মোস্তাওফির কবরসহ কাজভিন শহরে মোঙ্গল আমলের শেষ দিককার সুন্দর সুন্দর স্থাপনা ও ভবন এবং সেইসাথে আরও বহু নিদর্শন রয়েছে এই কাজভিনে। নুজহাতুল কুলুব, জাফারনমেহ’সহ আরও বহু বইয়ের লেখক হামদুল্লাহ মোস্তাওফির মাজার স্থাপনার ওপর যে গম্বুজটি রয়েছে তার বাইরের দিকটায় রয়েছে নয়নাভিরাম সবুজ টাইলসের বিচিত্র কারুকাজ। আরো রয়েছে কুরআনের আয়াতের চমৎকার ক্যালিগ্রাফি। এই ক্যালিগ্রাফিগুলোতে চকের কাজ করা হয়েছে।

 

চেহেল সুতুন প্রাসাদ কাজভিনের অপর একটি দর্শনীয় স্থাপনা। এই প্রাসাদটি ‘ফিরিঙ্গি বিলাস ভবন’ নামেও পরিচিত। ফার্সিতে বলা হয় ‘কোলা’ ফারাঙ্গি’। কাজভিন শহরের ঐতিহাসিক এবং সুন্দর স্থাপনাগুলোর অন্যতম এই স্থাপনাটি। সাফাভি যুগের সুন্দর এবং মূল্যবান নিদর্শন হিসেবে এই ফিরিঙ্গি ভবনের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। আটটি বাহু বিশিষ্ট এই ভবনের মাঝখানে রয়েছে একটি বাগিচা। শহরের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত এই ভবনটি। দোতলা এই ভবনের ভেতর বড়ো একটি অডিটোরিয়ামও রয়েছে। ফিরিঙ্গি ভবন এখন ক্যালিগ্রাফি মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

কাজভিন জামে মসজিদের মতো আরও অনেক মসজিদ আছে এই কাজভিন শহরে। এগুলো সেলজুকি শাসনামল, কাজারি শাসনামল এবং সাফাভি শাসনামলের। এইসব মসজিদ-ভবনের নির্মাণশৈলী বিশ্বব্যাপী আলোচিত এবং সমাদৃত। মাসজিদুন্নাবি এবং ইমামযাদা হোসাইন মসজিদের নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। মসজিদ ছাড়াও কাজভিন শহর ও তার আশেপাশে রয়েছে যিয়ারত করার মতো বহু মাজার। রয়েছে অনেক ইমামযাদা। ইরানের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে আসে যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে।

 

নবী করিম (সা) এর বংশধর ইমামযাদা হোসাইনের মাযার কাজভিন শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। মাযার ভবনের যে স্থাপত্যশৈলী তা আলাদা বৈশিষ্ট্যময়। টাইলসের কারুকাজ, কাঁচের কারুকাজ এক কথায় চোখ ধাঁধানো। দেশি বিদেশি পর্যটক সবাই এইসব কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, আকৃষ্ট হয়ে যান। এমনিতেই ইমামযাদাগুলো সকলের কাছেই সম্মানের এবং শ্রদ্ধার। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এই ইমামযাদায় মানুষের ঢল নামে।

 

কাজভিন বাজার আরেকটি প্রাচীন স্থাপনা। এই বাজারের নির্মাণশৈলীও দেখার মতো। এই বাজারের ঐতিহাসিক মূল্য যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সাংস্কৃতিক মূল্যও। ইসলাম-পূর্বকালে নির্মাণ করা হয়েছিল এই বাজারটি। দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় এই স্থাপনা এই কাজভিন বাজার।

 

ইরানে একটি বিষয় খুবই ব্যতিক্রম। অবশ্য আজকাল ব্যতিক্রমী সেই ঘটনাটির বিস্তার অপরাপর দেশেও ঘটছে কম-বেশি। ঘটনাটা হলো মানুষের খাওয়ার জন্য পার্কে, রাস্তাঘাটে, জনসমাগমপূর্ণ স্থানে বিশুদ্ধ পানি পান করার সুব্যবস্থা। আজকাল তো একেবারে ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থাই রয়েছে। প্রাচীনকালে বরফের মতো ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা না থাকলেও পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির মতো ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা ছিল। সে সময় মানবসেবি সহৃদয়বানেরা নিজেদের উদ্যোগে এই পানির ব্যবস্থা করতেন।

 

কাজভিন শহর সেইরকম পানির অসংখ্য হাউজের একটা ঐতিহাসিক আধার বলা যায়। মাটি খুঁড়ে পাথরের দেয়াল দিয়ে তার ওপর সুন্দর গম্বুজ বানিয়ে চমৎকার স্থাপনা বানানো হতো। চারদিক সুন্দর করে সুরক্ষিত করে একটা মূল প্রবেশদ্বার রাখা হতো। পানির হাউজ ছাড়াও কাজভিন শহরে রয়েছে প্রাচীন হাম্মাম এবং নৃতত্ত্ববিদ্যা যাদুঘর। এইসব প্রাচীন নিদর্শন যে-কোনো দর্শনার্থীকেই যে খুব সহজে আকৃষ্ট করবে তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। #
Md. Mahmudur Rahman
Assistant Professor, EEE
FE, DIU

Offline abdussatter

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 373
  • Test
    • View Profile
(Md. Dara Abdus Satter)
Assistant Professor, EEE
Mobile: 01716795779,
Phone: 02-9138234 (EXT-285)
Room # 610

Offline mominur

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 442
    • View Profile
Md. Mominur Rahman

Assistant Professor
Department of Textile Engineering
Faculty of Engineering
Daffodil International University

Offline mahmud_eee

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 591
  • Assistant Professor, EEE
    • View Profile
Md. Mahmudur Rahman
Assistant Professor, EEE
FE, DIU