যানবাহনের তীব্র শব্দ থাকে এমন এলাকায় বসবাস করলে আয়ু কমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যুক্তরাজ্যের একদল চিকিৎসক নতুন এক গবেষণার ভিত্তিতে এসব হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এ গবেষণার জন্য ওই চিকিৎসকেরা লন্ডনের পরিবেশে শব্দের তীব্রতার মাত্রা এবং মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির তথ্য-উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নাল সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব এলাকায় দিনের বেলা রাস্তায় শব্দের তীব্রতা ৬০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়, সেসব স্থানে মানুষের মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম কোলাহলপূর্ণ (শব্দের তীব্রতা ৫৫ ডেসিবেলের কম) এলাকার চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, মানুষের বসবাস এলাকায় শব্দের তীব্রতা ৫৫ ডেসিবেল ছাড়িয়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তুলনামূলক বেশি শব্দ তৈরি হয় এমন এলাকার বাসিন্দাদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার ৯ শতাংশ।
রাস্তার আশপাশে রাতে যানবাহনের আওয়াজও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এ সময় শব্দের তীব্রতা ৫৫ থেকে ৬০ ডেসিবেলের মধ্যে থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫ শতাংশ বাড়ে, যদিও তা কেবল প্রবীণদের ক্ষেত্রে। গবেষণায় স্ট্রোকের নেপথ্যে আরও কিছু কারণ খতিয়ে দেখা হয়—যেমন ধূমপানের অভ্যাস, আর্থসামাজিক অবস্থান এবং জাতিগত পরিচয় ইত্যাদি।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিজ্ঞানী জানা হ্যালোনেন। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা লন্ডনের একটি বিশেষ সড়ক (এমটুয়েন্টিফাইভ মোটরওয়ে) এলাকাজুড়ে জরিপ চালান। এ গবেষণার ব্যাপ্তি ছিল ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত।
যু্ক্তরাজ্যের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, লন্ডনের মোট ৮৬ লাখ জনসংখ্যার ১৬ লাখই দিনে চলাচলকারী যানবাহনের অতিরিক্ত শব্দের (৫৫ ডেসিবেলের বেশি) প্রভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এই স্বাস্থ্যঝুঁকি খুব মারাত্মক না হলেও স্পষ্ট।
যু্ক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ফ্রান্সেসকো কাপুচ্চিও ব্রিটেনের সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারকে বলেন, যানবাহনের তীব্র শব্দ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যনীতির প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
Source:
http://www.prothom-alo.com/technology/article/561733/রাস্তার-আওয়াজে-আয়ু-কমে